—ফাইল চিত্র।
যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে শোক করার ফুরসতটুকুও নেই। কারণ যাঁরা বেঁচে আছেন, প্রতিদিন মৃত্যুর আশঙ্কা তাড়া করছে তাঁদের। চুপ করলেন শাহিন। ফোনের ও প্রান্তে পিন পতনের নীরবতা।
শাহিন আহমেদ, বিশু সেজওয়াল, ফুরকান ফারিদি এবং আশফাকের তৈরি ৪৩ মিনিটের ‘লিঞ্চ নেশন’ সত্যি সত্যিই নীরব করে দেয়। সোমবার, নন্দনে আয়োজিত একটি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হল তথ্যচিত্রটি।
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। তাঁদের কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, কেউ দলিত, কেউ প্রতিবাদী, কেউ বা সাংবাদিক। এক একটি ঘটনা ঘটেছে, সাময়িক আলোচনা হয়েছে। তার পর থিতিয়ে গিয়েছে। লিঞ্চিং, অর্থাৎ গণপিটুনির ঘটনা ক্রমশ স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে গিয়েছে। বলছিলেন শাহিন। ‘‘এটাই মেনে নিতে পারছিলাম না আমরা। কেবলই মনে হচ্ছিল, কী অবস্থায় আছে নিহত ওই মানুষগুলোর পরিবার। আলোচনা করতে করতেই ছবিটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। টাকা উঠেছে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে।’’ শাহিন ঢুকে পড়লেন ছবির গল্পে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গল্প নয়, সত্য। গুজরাত থেকে ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান থেকে অসম— ঘুরে বেরিয়েছে ‘লিঞ্চ নেশন’এর ক্যামেরা। ধরা পড়েছে একটিই উপলব্ধি— গত কয়েক বছরে খণ্ডিত হয়ে গিয়েছে গ্রামীণ সমাজ। নিহতদের পরিবাররা যতটা না বিচারের জন্য লড়াই করছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি লড়ছেন নিজেদের বাঁচাতে। দাদরির ঘটনায় নিহত মহম্মদ আকলাখের দাদা যেমন বলছিলেন, ‘‘যে গ্রামে সকলে এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে থাকতাম, এখন সেখানেই কেমন নিজ ভূমে পরবাসীর মতো অবস্থা।’’ একই কথা বলছে উনা, ঝাড়খণ্ড, অসম। দিল্লি থেকে হরিয়ানার গ্রামে ফেরার সময় ট্রেনে গণপিটুনিতে নিহত জুনাইদের ভাইয়েরা এখন স্কুলে যেতে ভয় পায়।
‘‘ভয় আসলে অনেক। এত দিনে পরিবারগুলো বুঝে গিয়েছে, প্রশাসনও পাশে নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাদের।’’ এ বার উত্তেজিত শাহিন। ছবিতে তাঁরা অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলতে চেষ্টা করেছিলেন। চেয়েছিলেন তথাকথিত ‘গোরক্ষক বাহিনী’, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির সাক্ষাৎকার নিতে। কিন্তু তাঁদের নাম, পদবির কারণে হুমকি শুনতে হয়েছে।
তবে অন্য অভিজ্ঞতাও আছে। শাহিন বলছিলেন, দিল্লিতে প্রথমবার ছবিটি দেখানোর পর বহু মানুষ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নিউ ইয়র্কেও ঘুরে এসেছে তাঁদের ছবি। তাঁরা চাইছেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘লিঞ্চ নেশন’ স্ক্রিনিং করতে। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষিত শহুরে মানুষ এ সব ঘটনার সাময়িক প্রতিবাদ করেন। কিন্তু গ্রামে গ্রামে এরকম এক একটি ঘটনা সামাজিক চরিত্র বদলে দেয়। সে জন্যই ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ নয়, আক্রান্ত পরিবারগুলির কণ্ঠস্বর তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। বদলে যাওয়া দেশের চেহারাটা যাতে স্পষ্ট হয়।
অন্ধকার যত ঘনই হোক, আলোর উৎস থাকে। জুনাইদের স্বপ্ন ছিল গ্রামে স্কুল বানানোর। জুনাইদের পরিবারের এখন একমাত্র সংকল্প সেই স্বপ্নকে আকার দেওয়া। জুনাইদের সেই স্বপ্ন বলেই শেষ হয় ‘লিঞ্চ নেশন’। শাহিনের কথায়, ‘‘ওইটুকুই আশার আলো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy