Advertisement
E-Paper

দায় কি অমিতাভদেরও, বিতর্কে বিজ্ঞাপন

দেশজোড়া ম্যাগি-বিতর্কে বিপাকে তাঁরাও। অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত এবং প্রীতি জিন্টা। দু’মিনিট নুডল্‌সের বিজ্ঞাপনের তিন মুখ। গত কালই কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, যদি প্রমাণিত হয় যে ম্যাগির বিজ্ঞাপনে অসত্য দাবি করা হয়েছে, তা হলে ওই পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরেরাও রেহাই পাবেন না। কারণ, জনমানসে ভুল বার্তা ছড়ানোর দায় তাঁদেরও। পাশাপাশি অমিতাভ-মাধুরীদের বিরুদ্ধে বিহারের মুজফ্‌ফরপুর আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছিলেন স্থানীয় এক আইনজীবী সুধীরকুমার ওঝা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০৩:৩৯

দেশজোড়া ম্যাগি-বিতর্কে বিপাকে তাঁরাও। অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত এবং প্রীতি জিন্টা। দু’মিনিট নুডল্‌সের বিজ্ঞাপনের তিন মুখ।

গত কালই কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, যদি প্রমাণিত হয় যে ম্যাগির বিজ্ঞাপনে অসত্য দাবি করা হয়েছে, তা হলে ওই পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরেরাও রেহাই পাবেন না। কারণ, জনমানসে ভুল বার্তা ছড়ানোর দায় তাঁদেরও। পাশাপাশি অমিতাভ-মাধুরীদের বিরুদ্ধে বিহারের মুজফ্‌ফরপুর আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছিলেন স্থানীয় এক আইনজীবী সুধীরকুমার ওঝা। তাঁর অভিযোগ, গত ৩০ মে মুজফ্‌ফরপুরের লেনিন চক এলাকার একটি দোকান থেকে ম্যাগি কিনে খাওয়ার পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

সেই মামলায় আজ তিন সেলিব্রিটির বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত সিজেএম রামচন্দ্র প্রসাদ। আদালত বলেছে, প্রয়োজনে অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা যেতে পারে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭০ (প্রাণঘাতী অসুখ বা সংক্রমণ ছড়ানো), ২৭৩ (ক্ষতিকর খাদ্য বা পানীয় বিক্রি), ২৭৬ (কোনও রাসায়নিককে অন্য রাসায়নিক হিসেবে দেখিয়ে বিক্রি করা) ও ৪২০ (অসৎ উদ্দেশ্যে লোকঠকানো) ধারায় মামলা দায়ের করতে হবে। প্রথম তিনটি ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ছ’মাস কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা। আর ৪২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা। তিন অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াও ম্যাগির প্রস্তুতকারক সংস্থা নেস্‌লে ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহন গুপ্ত ও জয়েন্ট ডিরেক্টর সাহাব আলমের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করাহয়েছে। এখন প্রশ্ন, অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপনে মুখ দেখানো সেলিব্রিটিকে কি পণ্যের গুণমানের দায় নিতে হবে?

বিজ্ঞাপন জগতের পরিচিত মুখ রাম রে জানাচ্ছেন, ‘‘কোনও পণ্যের বিজ্ঞাপন করার দু’টো দিক আছে। প্রথমত কেউ বললেন, আমার এই বিস্কুটটা খেতে ভাল লাগে। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যদি তিনি বলেন যে, এই বিস্কুটে এই-এই পুষ্টিগুণ আছে, তা হলে তিনি একটা দাবিকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরছেন। এবং আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, সে ক্ষেত্রে ওই দাবি ঠিক কি না, তা ওঁর আগাম খতিয়ে দেখা উচিত। আমাদের দেশে কেউ কেউ এই আগাম খতিয়ে দেখার কাজটা করেন। অনেকেই করেন না।’’

অমিতাভ অবশ্য দাবি করছেন, ম্যাগির বিজ্ঞাপনের আগে তার গুণমান নিয়ে নেস্‌লেকে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক জবাব পেয়ে তবেই বিজ্ঞাপন করতে রাজি হন। তা ছাড়া, সংস্থার সঙ্গে তাঁর চুক্তিতে এ কথাও বলা আছে যে বিজ্ঞাপন নিয়ে কোনও আইনি জটিলতা দেখা গেলে সংস্থা তার পাশে দাঁড়াবে। তবে একই সঙ্গে এই বিতর্কে তাঁর আর কোনও ভূমিকা নেই বলেই দাবি করেছেন অমিতাভ। গত কালই তিনি বলেছেন, ‘‘ওদের সঙ্গে আমার চুক্তি তো শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

পণ্যের গুণমানের দায় বিজ্ঞাপনে মুখ দেখানো সেলিব্রিটির উপরেও বর্তায় বলে দাবি করছেন রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও সেলিব্রিটি যখন কোনও পণ্যের বিজ্ঞাপন করছেন, তখন তাঁর বোঝা উচিত যে তাঁর উপস্থিতি জনমানসে বিপুল প্রভাব ফেলবে। সুতরাং বিজ্ঞাপন করার আগে তাঁর সতর্ক হওয়া দরকার।’’ এ রাজ্যে একাধিক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়া নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠেছে একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রীর দিকে। তাঁদের অনেকেই আবার তৃণমূলের নেতা-সাংসদ। সাধনবাবুর অবশ্য সাফ কথা, ‘‘কেউ যদি চিটফান্ডের বিজ্ঞাপন করেন, তা হলে সেই সংস্থার আইন ভাঙার দায় তাঁকে নিতে হবে বইকি।’’

সাধনবাবু জানাচ্ছেন, গত সপ্তাহে দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যিনি বিজ্ঞাপন করবেন, তাঁকে পণ্যের গুণমান যাচাই করে নিতে হবে। তা না হলে বিভ্রান্তির দায় তাঁর ঘাড়েও বর্তাবে।

এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক মত নন একাধিক পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, তথা তৃণমূল সাংসদ দেব। তিনি বলেন, ‘‘অমিতাভ বচ্চন যখন ম্যাগির বি়জ্ঞাপন করছেন, তখন তিনি নিজেকে ওই পণ্যের মুখ হিসেবে তুলে ধরছেন। ওই পণ্যের গ্যারান্টার হিসেবে নয়। আমরা যখন কোনও পণ্যের বিজ্ঞাপন করি, তখন সরল বিশ্বাসে এটা ধরে নিয়েই করি যে সব সরকারি নিয়ম মেনেই সেটি তৈরি হচ্ছে। এ বার থেকে হয়তো চুক্তি করার আগে বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে লিখিত আশ্বাসপত্র চাইব যে পণ্যের গুণমানের জন্য আমি দায়ী নই।

দেবের বক্তব্যের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন ক্রেতা সুরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মালা দাশগুপ্ত। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে সেলিব্রিটিকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়। আসল দোষী স্বাস্থ্য দফতরের সেই সব কর্মী, যাঁরা পণ্যটিকে বাজারে বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন।

Maggi Controversy Bihar Court Amitabh Bachchan Madhuri Dixit Preity Zinta FIR
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy