Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ঐক্যেই আস্থা মমতার, জেলে ভরলেও চলবে প্রতিবাদ, বলছে তৃণমূল

নোট-বিতর্ক চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, তাঁকে গুলি করে দিলেও কিছু যায় আসে না!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

নোট-বিতর্ক চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, তাঁকে গুলি করে দিলেও কিছু যায় আসে না! কেন্দ্রীয় সরকারের তুঘলকি সিদ্ধান্ত এবং তার জেরে সাধারণ মানুষের হয়রানির প্রতিবাদ তিনি করবেনই। এ বার রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই চ্যালেঞ্জ করে বললেন, তাঁদের দলনেত্রীকে জেলে ঢোকানো হলেও প্রতিবাদ চলবে।

সংসদের বিতর্কে আজ প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলির উপস্থিতিতেই ডেরেক বলেছেন, ‘‘সরকারের নীতির যিনি বিরোধিতা করছেন, তিনিই দেশবিরোধী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত! প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, তিনি একাই মসিহা আর আমরা সবাই খারাপ লোক।’’ এর পর দু’দিকে হাত মেলে দিয়ে প্রায় নাটকীয় ভঙ্গিতে ডেরেকের মন্তব্য, ‘‘আপনার বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে যত পারুন, আমাদের উত্যক্ত করুন। এমনকী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে ঢোকানোর চেষ্টাও করতে পারেন। কিন্তু তার ফলে আমাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে। কারণ, আমরা মানুষের জন্য লড়ছি।’’

তৃণমূলের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন দেখা উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি নোট-বিতর্কে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার জেরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কা করছেন ডেরেকরা? ইতিমধ্যেই বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। লোকসভায় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হয়রানির অভিযোগের কথা মমতা নিজেই বলেছেন। ডেরেক আজ যে ভাবে রাজ্যসভায় প্রতিহিংসার প্রসঙ্গ টেনেছেন, তাতে মনে করা হচ্ছে, পাল্টা আঘাত আসবে ধরে নিয়েই মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোমর বাঁধছেন মমতা। বাস্তবে তেমন ঘটলে তিনি বলতে পারবেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর জন্যই তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। নয়তো এত দিন কেন্দ্র অর্থলগ্নি সংস্থা বা অন্য মামলায় চুপচাপ বসে ছিল কেন?

এই পরিস্থিতিতে আজ কলকাতা ফেরার আগে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফের দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েক দিনে এই নিয়ে তিন বার তাঁর রাষ্ট্রপতি ভবন সফর। সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারকে বারবার বলা হচ্ছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কর্ণপাত করেননি। রাষ্ট্রপতি দেশের সংবিধানের অভিভাবক। তাই তাঁকেই বারবার পরিস্থিতির ভয়াবহতা জানাচ্ছি।’’ দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এটা মানুষেরই আন্দোলন। আমরা খুশি যে, সব ধরনের মানুষ এই ধরনের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। এই বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে।’’

জনধন প্রকল্পে টাকা রাখার তালিকায় পশ্চিমবঙ্গকে শীর্ষ স্থানাধিকারী হিসাবে তুলে ধরে যে তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্র, তাতে আরও রুষ্ট হয়েছেন মমতা। বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসাবেই দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে

কেন্দ্রকেই পাল্টা আক্রমণ করে মমতা বলেছেন, ‘‘ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় পড়ে। এ ব্যাপারে রাজ্যকে টেনে আনা হচ্ছে কেন? এই সরকারের নীতিই হচ্ছে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’!’’ এমতাবস্থায় অন্য বিরোধী দলগুলির প্রতি তাঁর আবেদন, ‘‘প্রত্যেকে নিজের মতো করে কর্মসূচি নিন। চলুন, একসঙ্গে লড়াইটা বজায় রাখি। আমার দল প্রত্যেক বিরোধী দলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’

সংসদে যেমনই সমন্বয় হোক, বাইরে বামেরা অবশ্য তৃণমূলের থেকে দূরত্ব রেখেই আজ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নোট-বিতর্কে প্রতিবাদের কর্মসূচি নিয়েছে। এই বিষয়ে সিপিএম সঙ্গে পেয়েছে বামফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলিকেও। কর্মসূচির অংশ হিসাবে কলকাতায় কেন্দ্রীয় প্রতিবাদ হবে ২৯ তারিখ। আর তার আগের দিন অন্য সব বিরোধী দলের মতোই দেশ জুড়ে পালন করা হবে ‘আক্রোশ দিবস’। তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে যে কর্মসূচির নাম দিয়েছে ‘গণবিদ্রোহ দিবস’। কলকাতায় সে দিন প্রতিবাদের পরে মমতার যাওয়ার কথা লখনউ। সেখানে সভা ২৯ তারিখ। রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়কে আজ লখনউ পাঠানো হয়েছে সভার ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pranab mukherjee Mamata banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE