Advertisement
০৬ মে ২০২৪
উদ্বেগে উত্তর-পূর্ব

আট রাজ্যের দূত হয়ে মোদীর দ্বারস্থ মানিক

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ‘বিশেষ মর্যাদা’ বজায় রাখার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। আজ উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মুখপাত্র হিসেবে এই দাবি তুলেছেন মানিকবাবু। এতদিন সিকিম ও উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য অনগ্রসর এলাকা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নানা রকম বিশেষ আর্থিক সাহায্য পেত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০৩:০২
Share: Save:

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ‘বিশেষ মর্যাদা’ বজায় রাখার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। আজ উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মুখপাত্র হিসেবে এই দাবি তুলেছেন মানিকবাবু।

এতদিন সিকিম ও উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য অনগ্রসর এলাকা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নানা রকম বিশেষ আর্থিক সাহায্য পেত। সাধারণ কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়াও বিশেষ আর্থিক সহায়তা পেত আটটি রাজ্য। এ ছাড়াও বিশেষ যোজনা সহায়তা দেওয়া হত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিশেষ কর ছাড়ের ব্যবস্থা ছিল।

কিন্তু চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পর উত্তর-পূর্বের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য আর কোনও বাড়তি সুবিধা হয়তো থাকছে না। এমনিতেই অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে সব রাজ্যকে বাড়তি অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে নরেন্দ্র মোদী সরকার যুক্তি দিয়েছে। অর্থ কমিশনেরও যুক্তি, কোনও রাজ্যকেই আর বিশেষ শ্রেণিভুক্তের তালিকায় রাখার প্রয়োজন নেই। এই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বের সব মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে দাবি জানানো হবে। সকলের তরফে মানিকবাবুই এই দাবি পেশ করবেন বলে বৈঠকে ঠিক হয়। কিছু দিন আগে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অভিযোগ করেন, মানিকবাবু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য দেড় মাস আগে সময় চেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে মোদী সময় দিচ্ছেন না। এরপরেই আজকের বৈঠক।

সূত্রের খবর, মানিকবাবু মোদীকে জানিয়েছেন, এতদিন কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলার ফলে এমনিতেই উন্নয়নের নিরিখে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। এরপর তারা বিশেষ শ্রেণিভুক্ত রাজ্যের তকমা হারালে ওই অঞ্চলের সামাজিক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন ধাক্কা খাবে। পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই রাজ্যগুলি বিশেষ কেন্দ্রীয় সহায়তা ও বিশেষ যোজনা সহায়তার উপরই নির্ভরশীল। চলতি আর্থিক বছরের জন্য অরুণ জেটলি যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতেও এই দু’টি খাতে কোনও বরাদ্দ করা হয়নি। অর্থ কমিশনও এই ধরনের কোনও সুপারিশ করেনি। উত্তর-পূর্বের মুখ্যমন্ত্রীদের তরফে মানিকবাবুর দাবি, ‘‘পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির যে ঘাটতি থাকে, কেন্দ্রই তা এতদিন পূরণ করত। অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বাড়তি অর্থ পাওয়ার পরেও রাজ্যগুলির পক্ষে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতের ব্যয় পুরোপুরি বহন করা সম্ভব নয়। কারণ এই রাজ্যগুলির রাজস্ব বাবদ আয় খুবই কম। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন্দ্রের অংশ কমানোর পক্ষে হাঁটছে। তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানিক। তাঁর যুক্তি, এ ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির উপর বাড়তি বোঝা চাপবে। উত্তর-পূর্বের কোনও রাজ্যের পক্ষেই সেই বাড়তি বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির দাবি খতিয়ে দেখা হবে বলে মোদী আশ্বাস দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর।

মানিকবাবু যখন উত্তর-পূর্বের দূত হিসেবে সক্রিয়, তখন তাঁর বিরোধীরাও দিল্লিতে সমানভাবে সক্রিয়। আজই মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি জমা দিলেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস। টিপিসি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন সুদীপ রায়বর্মন। ছিলেন ত্রিপুরার ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ভি নারায়ণস্বামীও। তাঁদের অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকারের সক্রিয় মদতে বেসরকারি লগ্নি সংস্থাগুলি ত্রিপুরার গরিব মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে। রাজ্য ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গরিব মানুষের টাকা ফেরানোর ব্যাপারেও উদ্যোগী নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE