Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘সাহস করে রাস্তায় নামলেই ঠিক দম এসে যাবে’

চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করে মঙ্গলদৈ থেকে গুয়াহাটি এসেছিলেন ধনমণিদেবী।

ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন পূরণে সারথি গুয়াহাটির ধনমণি বরা। নিজস্ব চিত্র।

ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন পূরণে সারথি গুয়াহাটির ধনমণি বরা। নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

এক জোড়া স্বপ্ন তাঁর বুকে। এক ছেলে বড় অফিসার হবে। আর এক জন বিখ্যাত ফুটবলার। আর এই স্বপ্নকে সফল করতেই অটো রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন এক মা। অন্য এক মা ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ চালাতে ই-রিকশার স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছেন। মণিপুরের প্রথম ও একমাত্র মহিলা অটোচালক লাইবি ওইনাম এখন পঞ্চাশ পার করেছেন।

গুয়াহাটির ধনমণি বরা পার করেছেন তিরিশ। সংসার টানতে দুই মায়ের দাঁত চাপা সংগ্রাম চলছে নাগাড়ে। লাইবিকে অটো চালাতে দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলেন তরুণ চিত্রপরিচালিকা। পরে তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। তাই খানিক আলো পড়েছে লাইবির সংগ্রামে। কিন্তু ধনমণিকে নিত্যদিন পুরুষ আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে দুই মায়েরই পণ, সন্তানের স্বপ্ন সফল না-হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে। ধনমণির কথায়, ‘‘মেয়েরা নিজেদের অসহায় ভাবে বলেই অসহায়। সাহস করে রাস্তায় নামলে লড়াইয়ের দম এসে যাবে।’’

চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করে মঙ্গলদৈ থেকে গুয়াহাটি এসেছিলেন ধনমণিদেবী। কিন্তু আয়হীন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়। তত দিনে এক মেয়ে, এক ছেলে হয়েছে। তাদের মুখ চেয়ে ঋণ নিয়ে ই-রিকশা কিনে ফেলেন ধনমণি। রাজ্যে তিনিই একমাত্র মহিলা ই-রিকশা চালক। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণি ও ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরে। লালমাটি থেকে রাজধানী মসজিদ পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেওয়ার মধ্যেই ছেলেমেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া ও নিয়ে আসার কাজ সেরে নেন। রাত পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ধনমণিদেবী। এ বছর নারী দিবসে যাত্রা শুরু করে মাতৃদিবসে পা রাখা ধনমণিদেবী বলেন, “মহিলাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাচ্ছে না। পুরুষ চালকরা বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। গাড়ি দাঁড়ালে আপত্তি, যাত্রী তুললে বাঁকা কথা। আজও এক জন আমায় বললেন, মেয়েমানুষের ঘরে থাকা উচিত। কিন্তু আমার টোটোয় থাকা তরুণী যাত্রী প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মেয়েরা ঘরে বসে থাকলে খাওয়াবে কে?” ধনমণির কথায়, “মা হিসেবে ভয় পেয়ে গুটিয়ে থাকার সময় বা উপায় নেই আমার। লড়াই চালাতেই হবে।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মণিপুরে লাইবি ওইনাম। নিজস্ব চিত্র।

ইম্ফলের লাইবিদেবী কাজ করতেন ইটভাটায়। অটোচালক স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সামান্য দিনমজুরিতে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই তিনিই স্বামীর অটো নিয়ে রাস্তায় নামেন। পুরুষ চালকদের বিদ্রুপ, বিভিন্ন সমালোচনা অগ্রাহ্য করে অটো চালাতে থাকেন। প্রথমে মণিপুরি মহিলাদের পোশাক ফানেক পরেই অটো চালাতেন। পরে পোশাক বদলে হয় শার্ট-প্যান্ট। প্রায় এক দশক ধরে অটো চালাচ্ছেন লাইবিদেবী। তাঁর বড় ছেলে এখন স্নাতক। ছোট ছেলে চণ্ডীগড়ে ফুটবল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। লাইবিদেবীর লড়াই নিয়ে মীনা লংজামের তৈরি তথ্যচিত্র ‘অটো ড্রাইভার’ ৬৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সামাজিক ছবির শিরোপা পেয়েছে। ছেলেরা রোজগার করা শুরু করলেও কি এভাবেই অটো চালাবেন? তাঁর কথায়, “যত দিন পারব অটোই চালাব। এই অটোই তো ছেলেদের মানুষ করল। তাই আশা করি মায়ের পেশা ওদের লজ্জিত নয়, গর্বিতই করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Laibi Oinam Manipur Guwahati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE