ফাইল চিত্র।
গাঁধী পরিবারের বাইরের কারও কংগ্রেস সভাপতি পদে বসার সম্ভাবনায় জল ঢালা শুরু হয়ে গেল। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা যা-ই বলুন, রাহুল শিবিরের নেতাদের যুক্তি,
দলের সভাপতি পদে এখন রাহুল গাঁধীকেই প্রয়োজন।
এক বছর আগে লোকসভায় ভরাডুবির নৈতিক দায় নিয়ে পদত্যাগ করে রাহুল গাঁধী কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলেছিলেন, এ বার গাঁধী পরিবারের বাইরের কারও সভাপতির দায়িত্ব নেওয়া উচিত। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও জানিয়েছেন, রাহুলের সঙ্গে তিনি একমত। গাঁধী পরিবারের বাইরে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। কিন্তু আজ দুই কংগ্রেস নেতা, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা ও শক্তিসিন গোহিল জানিয়ে দিয়েছেন, দলের নেতা-কর্মীরা রাহুলকেই সভাপতি পদে চান। ২০১৯-এ লোকসভায় হারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি ইস্তফা দিলেও, গত এক বছরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর অদম্য লড়াই, করোনার বিপদ, চিনের আগ্রাসন নিয়ে তাঁর পূর্বাভাস প্রমাণ করেছে, একমাত্র তিনিই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। সুরজেওয়ালা-গোহিল, দু’জনেই রাহুল শিবিরের সদস্য বলে পরিচিত। দু’জনের মন্তব্যে স্পষ্ট, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা প্রকাশ্যে যা-ই বলুন, রাহুল শিবির তাঁকেই সভাপতি পদে চান। এআইসিসি-র এক নেতার মন্তব্য, “কোনও বাধা তো নেই। অনর্থক দেরি করে শীর্ষ নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি করে রাখা হচ্ছে কেন?” শশী তারুরের মতো নেতারা ইদানীং প্রকাশ্যে বলছিলেন, দ্রুত সভাপতি পদে নির্বাচন হোক। আজ এআইসিসি-র সম্পাদক ভি এম রেড্ডি রাহুলকে চিঠি লিখে প্রশ্ন তুলেছেন, “মানুষের ইচ্ছায় কান না-দেওয়া আপনার স্বভাববিরোধী। দলের নেতা-কর্মীরা যখন আপনাকে সভাপতি পদে চান, তখন কি আপনার সামনে অন্য কোনও বিকল্প রয়েছে?”
যে বইয়ে প্রিয়ঙ্কার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে, সেই একই বইয়ে সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছেন, কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করতে বা দলকে মজবুত করার জন্য তাঁর সভাপতি পদের প্রয়োজন নেই। বিষয়টি সামনে আসার পর মঙ্গলবার রাত থেকেই দলে জল্পনা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি গাঁধী পরিবারের বাইরের কাউকে শীর্ষনেতৃত্বে দেখা যাবে? নাকি কাউকে সভাপতি করে গাঁধী পরিবারই রিমোট কন্ট্রোল-এ দল চালাবে? ইউপিএ-আমলে মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হলেও সনিয়া আড়াল থেকে সরকারের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “সনিয়াজি সভানেত্রী থাকলেও রাহুলই পিছন থেকে দলের কাজকর্ম সামলাচ্ছেন। রাজস্থানের সঙ্কটে তা ফের স্পষ্ট। কে সি বেণুগোপাল, অজয় মাকন, সুরজেওয়ালার মতো রাহুলের আস্থাভাজন নেতাদের দায়িত্ব, সক্রিয়তা, গুরুত্ব বেড়েছে। এখন রাহুল ছাড়া অন্য কারও পক্ষে দায়িত্ব নেওয়াও মুশকিল।” রাহুল শিবিরের মতে, “রাহুল ছাড়া আর কারও গোটা কংগ্রেসে গ্রহণযোগ্যতা নেই।”
বিতর্কে জল ঢেলে দলের প্রধান মুখপাত্র সুরজেওয়ালা দাবি করেন, প্রিয়ঙ্কার পুরনো সাক্ষাৎকার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচইয়ের পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল ২০১৯-এর ১ জুলাই। এক বছর পরে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা ফের রাহুলকেই সভাপতি পদে চাইছেন। সুরজেওয়ালা বলেন, “গণতন্ত্রের উপর মোদী-শাহের হামলাকে চ্যালেঞ্জ জানানো ও তার বিরুদ্ধে নির্ভীক লড়াইয়ের সময় এটা। লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস নেতা-কর্মীর সেই লড়াইয়ে রাহুল নেতৃত্ব দিয়েছেন। গোটা দেশেরই এই নির্ভীক ও অদম্য সাহসীকে প্রয়োজন।”
এআইসিসি-র মঞ্চ থেকে গোহিলও বলেন, “গাঁধী পরিবার কখনও পদ বা ক্ষমতা চায়নি। সেটা তাদের মহত্ব। ২০০৪-এ সনিয়ার নেতৃত্বে দল জিতলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে মনমোহন সিংহ রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। রাহুল নেননি। ২০১৯-এ দলের হারের নৈতিক দায় নিয়ে ছেড়েছেন পদ। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা মনে করতেই পারেন যে, অ-গাঁধী কেউ সভাপতি হওয়া উচিত। কিন্তু সভাপতি কে হবেন, সেটা ঠিক করবে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি এবং এআইসিসি। সেই সিদ্ধান্ত সকলে মেনে নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy