Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Baidnath Kumar

এক সময়ের শিশু শ্রমিক বৈদ্যনাথ আজ ৪ হাজার ছেলেমেয়ের ‘জীবনদাতা’!

সেই অবহেলার মানুষ আর হাজার হাজার ছেলেমেয়ের কাছে ‘ঈশ্বর’, তাঁদের জীবনদাতা। বৈদ্যনাথের কাহিনি শ্রদ্ধা জাগাবে আপনার মনেও।

সংবাদ সংস্থা
রাঁচী শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ১৫:৫৬
Share: Save:
০১ ১১
ছেলেবেলাটা কেটেছে অত্যন্ত যন্ত্রণায়। পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না। নিতান্ত অবহেলাতেই বড় হওয়া তাঁর। অথচ সেই অবহেলার মানুষ আর হাজার হাজার ছেলেমেয়ের কাছে ‘ঈশ্বর’, তাঁদের জীবনদাতা। বৈদ্যনাথের কাহিনি শ্রদ্ধা জাগাবে আপনার মনেও।

ছেলেবেলাটা কেটেছে অত্যন্ত যন্ত্রণায়। পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না। নিতান্ত অবহেলাতেই বড় হওয়া তাঁর। অথচ সেই অবহেলার মানুষ আর হাজার হাজার ছেলেমেয়ের কাছে ‘ঈশ্বর’, তাঁদের জীবনদাতা। বৈদ্যনাথের কাহিনি শ্রদ্ধা জাগাবে আপনার মনেও।

০২ ১১
বিহারের সমস্তিপুরে জন্ম বৈদ্যনাথ কুমারের। তাঁর বাবা-মা এতটাই দরিদ্র ছিলেন যে, ছেলের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে পারতেন না। সে কারণে কুমারের বাবা-মা তাঁকে কাকার বাড়িতে রেখে আসেন। ভেবেছিলেন, ওই বাড়িতে ছেলে ভাল থাকবে।

বিহারের সমস্তিপুরে জন্ম বৈদ্যনাথ কুমারের। তাঁর বাবা-মা এতটাই দরিদ্র ছিলেন যে, ছেলের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে পারতেন না। সে কারণে কুমারের বাবা-মা তাঁকে কাকার বাড়িতে রেখে আসেন। ভেবেছিলেন, ওই বাড়িতে ছেলে ভাল থাকবে।

০৩ ১১
কিন্তু তাঁরা জানতেন না, কাকার বাড়িতেও থাবা বসিয়েছে দারিদ্র। এবং তাঁর অবস্থা বৈদ্যনাথদের থেকেও শোচনীয়। প্রথমে অবশ্য কুমারকে একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর কাকা। প্রথম প্রথম কুমারের বাবা-মা খোঁজ নিতে আসতেন বৈদ্যনাথের। তাঁকে স্কুলে যেতে দেখে খুব নিশ্চিন্তও হয়েছিলেন।

কিন্তু তাঁরা জানতেন না, কাকার বাড়িতেও থাবা বসিয়েছে দারিদ্র। এবং তাঁর অবস্থা বৈদ্যনাথদের থেকেও শোচনীয়। প্রথমে অবশ্য কুমারকে একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর কাকা। প্রথম প্রথম কুমারের বাবা-মা খোঁজ নিতে আসতেন বৈদ্যনাথের। তাঁকে স্কুলে যেতে দেখে খুব নিশ্চিন্তও হয়েছিলেন।

০৪ ১১
বৈদ্যনাথের সে সুখ বেশি দিন টেকেনি। অর্থের অভাবে প্রতি মাসে কাকার বাড়িতে এসে তাঁর খোঁজ নেওয়াও সম্ভব ছিল না বাবা-মার পক্ষে। তার উপরে ফোনও ছিল না তখন। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান কাকা। স্কুল ছাড়িয়ে একটি স্থানীয় খাবার দোকানে কাজে ঢুকিয়ে দেন তাঁকে। বৈদ্যনাথের আয় করা টাকা নিয়ে নিতেন নিয়মিত।

বৈদ্যনাথের সে সুখ বেশি দিন টেকেনি। অর্থের অভাবে প্রতি মাসে কাকার বাড়িতে এসে তাঁর খোঁজ নেওয়াও সম্ভব ছিল না বাবা-মার পক্ষে। তার উপরে ফোনও ছিল না তখন। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান কাকা। স্কুল ছাড়িয়ে একটি স্থানীয় খাবার দোকানে কাজে ঢুকিয়ে দেন তাঁকে। বৈদ্যনাথের আয় করা টাকা নিয়ে নিতেন নিয়মিত।

০৫ ১১
খাবারের দোকানের মালিকের থেকে মারধর খাওয়া রোজকার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একটা সময়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন বৈদ্যনাথ। দীর্ঘ দিন কাজে যেতে না পারায় দোকানের কাজ চলে যায়। ফের কাকা তাঁকে অন্য একটা ধাবায় কাজে লাগিয়ে দেন। কাজের পাশাপাশি নিজের টুকটাক পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বৈদ্যনাথ।

খাবারের দোকানের মালিকের থেকে মারধর খাওয়া রোজকার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একটা সময়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন বৈদ্যনাথ। দীর্ঘ দিন কাজে যেতে না পারায় দোকানের কাজ চলে যায়। ফের কাকা তাঁকে অন্য একটা ধাবায় কাজে লাগিয়ে দেন। কাজের পাশাপাশি নিজের টুকটাক পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বৈদ্যনাথ।

০৬ ১১
শিশুশ্রম যে বেআইনি, তা তখন জানতেনই না বৈদ্যনাথ। ২০০০ সালে ওই ধাবায় খেতে আসা একদল পড়ুয়ার থেকে সেই প্রথম এ ব্যাপারে জানতে পারেন। নিজে জেনে তাঁর বন্ধুদেরও এ বিষয়ে জানান তিনি। সবাই মিলে পুলিশের নজরে বিষয়টা আনেন। কিন্তু ওই ধাবার মালিকের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করেনি পুলিশ।

শিশুশ্রম যে বেআইনি, তা তখন জানতেনই না বৈদ্যনাথ। ২০০০ সালে ওই ধাবায় খেতে আসা একদল পড়ুয়ার থেকে সেই প্রথম এ ব্যাপারে জানতে পারেন। নিজে জেনে তাঁর বন্ধুদেরও এ বিষয়ে জানান তিনি। সবাই মিলে পুলিশের নজরে বিষয়টা আনেন। কিন্তু ওই ধাবার মালিকের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করেনি পুলিশ।

০৭ ১১
বৈদ্যনাথ যখন ১৮ বছরের যুবক, তখন সম্পতিপুরের এক আদালতের বাইরে ফোটোকপির দোকানে কাজ পান। আর সেটাই ছিল তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। অনেক আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। সেখানেই বৈদ্যনাথ দেখেছিলেন, তাঁর মতো অসংখ্য অসহায় শিশু, তরুণীরা রোজ আদালতে যাতায়াত করছে।

বৈদ্যনাথ যখন ১৮ বছরের যুবক, তখন সম্পতিপুরের এক আদালতের বাইরে ফোটোকপির দোকানে কাজ পান। আর সেটাই ছিল তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। অনেক আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। সেখানেই বৈদ্যনাথ দেখেছিলেন, তাঁর মতো অসংখ্য অসহায় শিশু, তরুণীরা রোজ আদালতে যাতায়াত করছে।

০৮ ১১
তাদের হয়তো কেউ শিশু শ্রমিক, কাউকে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের চোখেই ন্যায় পাওয়ার আর্তি। সে দিনই বোধ হয় জীবনের উদ্দেশ্যটা বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

তাদের হয়তো কেউ শিশু শ্রমিক, কাউকে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের চোখেই ন্যায় পাওয়ার আর্তি। সে দিনই বোধ হয় জীবনের উদ্দেশ্যটা বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

০৯ ১১
আইনজীবী বন্ধুদের সাহায্যে ২০০৪ সালে নিজের একটা সংস্থা শুরু করে দেন বৈদ্যনাথ। স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং শিশু সুরক্ষা বিভাগের কাছ থেকে কোনও রকম অর্থনৈতিক সাহায্য তিনি পাননি। কিন্তু তাও হাল ছাড়েননি। বিপদে পড়া প্রত্যেক শিশুর দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

আইনজীবী বন্ধুদের সাহায্যে ২০০৪ সালে নিজের একটা সংস্থা শুরু করে দেন বৈদ্যনাথ। স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং শিশু সুরক্ষা বিভাগের কাছ থেকে কোনও রকম অর্থনৈতিক সাহায্য তিনি পাননি। কিন্তু তাও হাল ছাড়েননি। বিপদে পড়া প্রত্যেক শিশুর দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

১০ ১১
ক্রমে তাঁর সংস্থা বড় হয়েছে। পঞ্চায়েত, শিশু সুরক্ষা বিভাগের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। এখন শিশু সুরক্ষা বিভাগের সঙ্গে একজোট হয়েই কাজ করে চলেছেন কুমার।

ক্রমে তাঁর সংস্থা বড় হয়েছে। পঞ্চায়েত, শিশু সুরক্ষা বিভাগের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। এখন শিশু সুরক্ষা বিভাগের সঙ্গে একজোট হয়েই কাজ করে চলেছেন কুমার।

১১ ১১
এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে চার হাজারেরও বেশি শিশুকে পাচার হওয়া থেকে উদ্ধার করেছেন তিনি। দিনরাত লড়ে যাচ্ছেন শিশুশ্রম দূর করার জন্য।

এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে চার হাজারেরও বেশি শিশুকে পাচার হওয়া থেকে উদ্ধার করেছেন তিনি। দিনরাত লড়ে যাচ্ছেন শিশুশ্রম দূর করার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE