দল বেঁধে সভায় গিয়েও অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারলেন না বিক্ষুব্ধরা। ফলে সভায় না গিয়েও আস্থা-বিতর্কে উতরে গেলেন কাছাড় জেলা পরিষদের সভাপতি, কংগ্রেস নেত্রী সাথী কর্মকার। সৌজন্যে— বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত সদস্য ত্রয়োবাসী দাস।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন ১৩ জন সদস্য। তার মধ্যে এআইউডিএফ, নির্দল মিলিয়ে ৫ জন। বাকি ৮ জন কংগ্রেসেরই নির্বাচিত সদস্য। পরে বিজেপি-ও তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। জেলা পরিষদে গেরুয়া বাহিনীর ৫ জন সদস্য থাকলেও এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ত্রয়োবাসী দাসকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। মূলত তাঁর কাঁধে ভর করেই আজ নিজের পরাজয় ঠেকালেন সাথিদেবী।
২৭ সদস্যের পরিষদে অনাস্থা টেকাতে ১৮টি ভোটের প্রয়োজন। বিক্ষুব্ধরা আশায় ছিলেন, বিজেপির ঘরোয়া বিবাদ এখানে প্রভাব ফেলবে না। ত্রয়োবাসী দাস তাঁদেরই সমর্থন জানাবেন। কিন্তু আজ ভোটাভুটির দিনে কাটিগড়ার এই সদস্য শিলচর-মুখো হননি। তাঁর জন্য অপেক্ষা করে-করে ১৭ ভোট আর ১৮-য় পৌঁছয়নি। কী আর করা! দল বেঁধে ১৭ জনই ঢোকেন সভাকক্ষে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সভা পরিচালনার দায়িত্বে উপ-সভাপতি সালেহা বেগম লস্করও। তখন ঘড়িতে ১১টা ৫৩ মিনিট।
এ দিকে, কংগ্রেস অনাস্থা-সভায় উপস্থিত থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। দলের সকল সদস্যের উদ্দেশে হুইপ জারি করা হয়। তবে কোর কমিটি তিন প্রবীণ সদস্যকে পরিদর্শক হিসেবে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অত্যন্ত গোপনে নির্দেশ দেয়। কৌশল মেনেই কৃষ্ণপদ দত্ত, প্রদীপ দে ও বিকাশ দাস সভার নির্ধারিত সময় ১১টার আগেই উপস্থিত হন। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাঁদের বাইরে কেউ উপস্থিত নেই দেখে তাঁরা এগজিকিউটিভ অফিসার এসএন সিংহের কাছে সভা স্থগিত রাখার আর্জি জানান। অসম পঞ্চায়েত আইনের ৭৬(৩) ধারার উল্লেখ করে বলেন, অনাস্থা বিতর্কের জন্য আহূত সভা নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টার মধ্যে শুরু করতে হবে। সালেহা বেগম সওয়া ১২টায় সভার কাজ শুরু করতেই তিন কংগ্রেস সদস্য সভা বাতিলের দাবি তোলেন। বিক্ষুব্ধরা এ নিয়ে বিতর্কে জড়ালেও আসাম পঞ্চায়েত আইন পড়ে সালেহা বেগম নিজেই সভা স্থগিতের ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, পরবর্তী সভা হবে ৭ নভেম্বর বেলা ১টায়।
এর পরই নিজের অফিসে ঢোকেন সভাপতি সাথী কর্মকার। সঙ্গে দলের অন্য ৭ সদস্য। ছিলেন জেলা কমিটির কর্মকর্তা রঞ্জিত রায়, সুজন দত্ত, অরুণ দত্ত মজুমদার, পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী। অনাস্থা-আলোচনা স্থগিতের পর নতুন করে সভা ডাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পঞ্চায়েত আইন দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন— আইনের ৭৩ ধারায় বলা হয়েছে, একবার অনাস্থা প্রস্তাব পেশের ৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার অনাস্থা আনা যায় না। লক্ষ্মীপুরের কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা বলেন, ‘‘হুইপ অমান্য করে যাঁরা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি সাথী কর্মকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। দুর্নীতি প্রমাণের চ্যালেঞ্জ জানান সাথীদেবী নিজেও।
এ দিকে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসের নেতা, জেলা পরিষদের প্রাক্তন উপ-সভাপতি সামসুর রহমান লস্কর বলেন, ‘‘শুধু কী আর দুর্নীতি! কলেজ-পড়ুয়া সাথীদেবীর পরিষদ পরিচালনার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। তাঁর ব্যর্থতার দরুন দেড় বছর থেকে কাছাড় জেলা পরিষদে একটি টাকাও আসেনি।’’ তাঁর বক্তব্য, সে জন্য ফলে এলাকাবাসীর কাছে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে তাঁদের। তাই নৈতিক দায়দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে সাথী কর্মকারকে বদলানোর দাবি জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘দলীয় নেতৃত্ব বিষয়টি বুঝতেই চায়নি।’’ হুইপ জারি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ইত্যাদিকে যে তাঁরা আর গুরুত্ব দিচ্ছেন না, সে কথা উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, ৭ নভেম্বরের সভায় সব কিছুর প্রমাণ মিলবে।
আধঘণ্টার মধ্যে শুরু না-হলে যে অনাস্থা সভা স্থগিত হয়ে যায়, তা তাঁদের জানা ছিল না বলে স্বীকার করেন সামসুর রহমান। একই কথা শোনান বিজেপির মুকেশ পান্ডে, এআইইউডিএফ-এর ফখরুল ইসলাম মজুমদার। তাঁরা বলেন, ‘‘সব সময়ই পরিষদের সভা শুরু হতে এক-দেড় ঘণ্টা দেরি হয়।’’ তার উপর আজ যেহেতু সাথী-পন্থীরা আসবেন না, তাই তাঁরা ধীরেসুস্থে ঢুকছিলেন। বহিষ্কৃত বিজেপি সদস্য ত্রয়োবাসী দাস তাঁদেরই পাশে রয়েছেন বলে দাবি করেন তাঁরা। এ দিকে, পরিষদে বসে যখন তাঁরা এমন দাবি করছিলেন, সে সময় ত্রয়োবাসীবাবু কংগ্রেস কার্যালয়ে নতুন দলের সদস্যপদ নিচ্ছিলেন। তাঁর হাতে আজ দলের সদস্যপদ তুলে দেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য, সাংসদ সু্স্মিতা দেব, বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা।
এআইইউডিএফ-এর ফখরুল ইসলাম মজুমদারের অভিযোগ, অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে প্রচুর টাকার খেলা চলছে। সাংসদ সুস্মিতা দেব নিজে ময়দানে নেমেছেন। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ দেবকে পাঠিয়ে বিক্ষুব্ধদের অনেককে টোপ দিয়েছেন। তাঁকেও টেলিফোন করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হয় বলে জানান ফখরুলবাবু।
সুস্মিতা দেবী ‘বিনা স্বার্থে’ যাঁরা আজ কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এর বাইরে কিছুই বলতে রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy