Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Covaxin

কোভ্যাক্সিন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত, ক্ষমা চাক বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়: কেন্দ্রীয় সংস্থা আইসিএমআর

সোমবার আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর রাজীব বহাল বলেন, ‘‘যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণার কাজ চালানো হয়েছে, তাতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে।’’

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ১৯:০৮
Share: Save:

দেশে তৈরি করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের ‘দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ সংক্রান্ত অভিযোগ খারিজ করে দিল কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)! উল্টে এ বিষয়ে তারা নিশানা করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ)-কে। কারণ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাই এ সংক্রান্ত গবেষণা এবং রিপোর্ট পেশ করেছিলেন।

সোমবার আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর রাজীব বহাল বলেন, ‘‘যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণার কাজ চালানো হয়েছে, তাতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, একতরফা তথ্য সংগ্রহ করে বিএইচইউ-র গবেষকেরা কোভ্যাক্সিন নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন। তাঁরা ওই সময়সীমার মধ্যে কোভ্যাক্সিন না নেওয়া ব্যক্তিদের থেকে কোনও তথ্য সংগ্রহ করেননি, শারীরিক সমস্যা নিয়ে কোনও তুলনামূলক পরিসংখ্যান পেশ করেননি। এ জন্য বিএইচইউ গবেষকদের ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বিএইচইউ-এর গবেষকদের পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন এ রকম ৯২৬ জনের ওপরে এক বছর যাবৎ পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের দাবি, এঁদের মধ্যে ৩০ শতাংশের দেহে শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে চর্মরোগ, স্ট্রোক, গিলান-বারি সিন্ড্রোম ও রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যাডভার্স ইভেন্ট অব স্পেশাল ইন্টারেস্ট’ বা ‘এইএসআই’ বলা হয়। এ ছাড়াও মহিলাদের মধ্যে ঋতুস্রাবজনিত নানা জটিলতা দেখা গিয়েছে।

ভারতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে দু’টি কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হয়েছিল দেশবাসীকে। বিএইচইউ-এর গবেষকেরা জানিয়েছেন, সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৬৩৫ জন নাবালক এবং ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্ক। ২০২২ থেকে ২০২৩-এর অগস্ট মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা করা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩০৪ জন সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে এমন কিশোর-কিশোরী (৪৭.৯ শতাংশ) এবং ১২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক (৪২.৬ শতাংশ) শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৬৩৫ জনের ৪.৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে স্নায়ুরোগ, ১০.৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে চর্মরোগ এবং ১০.২ শতাংশের কিশোর-কিশোরীর নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া, ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮.৯ শতাংশ। পেশি এবং হাড়ের সমস্যা দেখা গিয়েছে ৫.৮ শতাংশের মধ্যে এবং স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫.৫ শতাংশ।

সেই সঙ্গে রিপোর্ট জানিয়েছে, গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে কোভ্যাক্সিন নেওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪.৬ শতাংশ মহিলার দেহে ভ্যাকসিনের প্রভাবে ঋতুস্রাবজনিত নানা সমস্যা দেখা গিয়েছে। এ ছাড়াও ২.৭ শতাংশ মহিলার মধ্যে চোখের সমস্যা এবং ০.৬ শতাংশের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজ়মের সমস্যা দেখা গিয়েছে। ০.৩ শতাংশের স্ট্রোক এবং ০.১ শতাংশের মধ্যে গিলান-বারি সিন্ড্রোম (জিবিএস) দেখা গিয়েছে। এটি এমনই একটি বিরল রোগ, যার প্রভাবে দেহ ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার তৈরি প্রতিষেধক এজ়েডডি১২২২-র (ভারতে নাম কোভিশিল্ড) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, এই টিকা নিয়ে বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। একাধিক মামলাও হয়। এর পরে প্রতিষেধকটি বাজার থেকে তুলে নিয়েছে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা। কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বলেও স্বীকার করে নিয়েছে তারা। ওই সংস্থা জানিয়েছে, তাদের তৈরি করা প্রতিষেধকের কারণে বিরল রোগ ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (টিটিএস)-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE