Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঢালাও প্রশংসা পেলেন শিবরাজ, বসুন্ধরা

দলের দুই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বিবৃতির দাবিতে টানা অচল রয়েছে সংসদ। ২৫ কংগ্রেস সাংসদ সাসপেন্ড হয়েছেন। অনেকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, আকাশবাণীতে এত কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী, দলের নেতাদের ‘দুর্নীতি’ নিয়েও কিছু বলুন না!

দিবাকর রায়
গয়া শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০৪:১৫
Share: Save:

দলের দুই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বিবৃতির দাবিতে টানা অচল রয়েছে সংসদ। ২৫ কংগ্রেস সাংসদ সাসপেন্ড হয়েছেন। অনেকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, আকাশবাণীতে এত কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী, দলের নেতাদের ‘দুর্নীতি’ নিয়েও কিছু বলুন না! তবু জানা যায়নি বসুন্ধরা রাজে এবং শিবরাজ সিংহ চৌহানকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’। আজ গয়ায় বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে সেই নীরবতাই ভাঙলেন প্রধানমন্ত্রী। বসুন্ধরা-শিবরাজের উন্নয়নকে দরাজ শংসাপত্র দিয়ে বোঝালেন, ললিত মোদী কাণ্ড ও ব্যপম কাঁটা সত্ত্বেও ওই দু’জনের পাশেই রয়েছেন তিনি।

এ দিন মোদীর মূল লক্ষ্য ছিল ভোটের আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও তাঁর জোটসঙ্গী লালু প্রসাদকে আক্রমণ। বর্তমান ও প্রাক্তন— দুই মুখ্যমন্ত্রীর শাসনকেই আজ তীব্র কটাক্ষ করেন মোদী। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করায় এনডিএ ছেড়েছিলেন নীতীশ। আজ তাঁর শাসনাধীন বিহারকে ‘বিমারু (অসুস্থ বা দুর্বল) বলে কটাক্ষ করেছেন মোদী। আর এই সূত্রেই সুকৌশলে জুড়ে দিয়েছেন বসুন্ধরা-শিবরাজের প্রশংসা। বলেছেন, ‘‘রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে আমরা যখন ক্ষমতা পেয়েছিলাম, তখন ওই দু’টি রাজ্য বিমারু ছিল। বিজেপির শাসনে রাজ্য দু’টির স্বাস্থ্য ফিরেছে। রাজস্থানকে বসুন্ধরা রাজে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। শিবরাজ সিংহের শাসনে মধ্যপ্রদেশও আর দুর্বল রাজ্য নেই।’’

এক বারও ললিত-কাণ্ড বা ব্যপম কেলেঙ্কারির নাম করেননি মোদী। কিন্তু দুই নেতা-নেত্রীকে নিয়ে তাঁর তথা দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আজ মোদী যখন এই কথা বলছেন, তখন মঞ্চে অমিত শাহ। এর আগে অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহেরা সাংবাদিক বৈঠক করে সুষমা স্বরাজের পক্ষে দাঁড়ান। কিন্তু বসুন্ধরা-শিবরাজ সম্পর্কে সে ভাবে স্পষ্ট মত প্রকাশ করেনি বিজেপি। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দলের তরফে দুই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত তথ্য যাচাই করা হয়েছে। তার পরেই প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলেছেন।’’

যদিও মোদীর এই বক্তব্যের পিছনে অন্য চাল দেখছেন বিজেপিরই একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, মোদী কিন্তু দু’জনকে উন্নয়নের প্রশ্নে সমর্থন করেছেন। দুর্নীতির প্রসঙ্গ তোলেনইনি। অর্থাৎ, তিনি এই নিয়ে যে দু’জনের পাশে নেই, সেটাও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলেন। এতে দলের অন্দরে দুর্বল হয়ে পড়লেন বসুন্ধরা-শিবরাজ।

“রাজস্থানকে বসুন্ধরা রাজে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। শিবরাজ সিংহের ১০-১২ বছরের শাসনে মধ্যপ্রদেশও আর দুর্বল রাজ্য নেই।” —নরেন্দ্র মোদী।

শিবরাজের শিয়রে এখন শমন ব্যপম কাণ্ড। সব দিকের প্রবল চাপে এই নিয়ে সিবিআই তদন্তেও রাজি হয়েছেন শিবরাজ। মোদী এই প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু বিহারে যে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খারাপ, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন জঙ্গলরাজের কথা বলে। সভার শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘‘লোকসভা ভোটের সময়ে গয়ায় সভা করেছিলাম। তখনও ভিড় ছিল। তবে এ বারের ভিড় তার দ্বিগুণ। ভিড় দেখেই হাওয়া বোঝা যায়। বিহারের মানুষ জুলুম, অহঙ্কার, বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে পরিবর্তনের

সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’’ মোদীর মতে, বিহারে ১৭ থেকে ২০ বছর বয়সি ৮০ লক্ষ যুবক রয়েছেন। রাজ্যে জীবিকার ব্যবস্থা করতে না পারলে তাঁরা রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হবেন। সেই কারণেই বিহারকে দুর্বল রাজ্যের তকমা থেকে বের করে আনতে হবে।

এই প্রতিটি তোপেরই জবাব দিয়েছেন নীতীশ। বলেছেন, ‘‘বিহারকে ‘বিমারু’ বলে কেউ এ ভাবে নিজেকে হাসির পাত্র করে তুলতে চাইবে না।’’ লালু কটাক্ষ করেছেন অমিত শাহের কারাবাস নিয়ে। তবে অনেকের মতে, আরও নাটক তোলা রয়েছে আগামিকাল সংসদের জন্য। কংগ্রেস সাংসদদের সাসপেনশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এত দিন তাঁরা বসুন্ধরা-শিবরাজকে নিয়ে মোদীর বিবৃতি দাবি করছিলেন। মোদী তাঁদের কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে দিলেন। এ বার তাঁর বক্তব্য ঘিরেই হয়তো নতুন করে উত্তপ্ত হবে সংসদের দুই কক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE