দেশের পুলিশকে ‘স্মার্ট’ করতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি চান, বলিউডের সিনেমায় পুলিশকে যেন নেতিবাচক ভূমিকায় দেখানো না হয়।
আজ গুয়াহাটিতে ডিজিপি সম্মেলনে পড়শি দেশের শত্রু, সীমান্তপারের জেহাদি বা অন্য জঙ্গিদের প্রসঙ্গ না তুলে দেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতর নিয়েই কথা বলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, বলিউড বা দেশের অন্য প্রান্তের বেশিরভাগ সিনেমায় পুলিশের সঙ্গে খলনায়কেরই ভাল সম্পর্ক দেখানো হয়। দেশের মানুষের নিরাপত্তায় শহিদ হয়েছেন অনেক পুলিশকর্মী। কিন্তু সিনেমার পর্দায় সব সময় তার প্রতিফলন হয় না। এতে নাগরিকদের মনে পুলিশকে নিয়ে অহেতুক ভয়, অবিশ্বাস, ঘৃণা তৈরি হয়। মোদী বলেন, “জনসংযোগ এজেন্সির মাধ্যমে সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁদের অনুরোধ করা হবে, পুলিশকে যেন নেতিবাচক ভূমিকায় দেখানো না হয়।”
‘স্মার্ট’ পুলিশ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন মোদী? বিশদে তারও ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী। ‘স্মার্ট’ শব্দটি ভেঙে ভেঙে তিনি জানান, ‘এস’ মানে স্ট্রিক্ট, সেনসেটিভ (কড়া ও সংবেদনশীল)। ‘এম’ হল মডার্ন, মোবিলিটি (আধুনিক ও গতিশীল)। ‘এ’-এর অর্থ অ্যালার্ট, অ্যাকাউন্টেবল (সতর্ক ও দায়বদ্ধ)। ‘আর’ মানে রিয়ায়েবল, রেসপনসিভ (বিশ্বস্ত ও দ্রুত কার্যকর) এবং টি টেকনো স্যাভি, ট্রেন্ড (প্রযুক্তিতে দক্ষ, প্রশিক্ষিত)।
নয়াদিল্লির বাইরে প্রথম বার ৪৯-তম ডিজি সম্মেলন করানোর কারণ কী, তা-ও এ দিন জানান মোদী। তাঁর কথায়, “দিল্লিতে সম্মেলন হলে অন্য রাজ্যের পুলিশকর্তারা নিজেদের অনেক কাজ নিয়ে যান। দিল্লি পুলিশের কর্তারাও সেখানে রোবটের মতো হাজির হন। সম্মেলনে কারও মন থাকে না। তাই এ বার থেকে পালা করে বিভিন্ন রাজ্যে এই সম্মেলন করানো হবে।” গোয়েন্দা বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে মোদী বলেন, “ইতিহাসে পড়েছি, চাণক্যের সময় থেকেই রাষ্ট্ররক্ষায় অস্ত্রের চেয়ে অস্ত্রবাহকের ক্ষমতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব গুপ্তচরদের। গুপ্তচর বাহিনী যদি শক্তিশালী হয়, তবে অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজনই হবে না।” প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে ৩৩ হাজার পুলিশকর্মী শহিদ হয়েছেন। কিন্তু কেউ সেই খবর রাখেন কি? মোদী জানান, প্রতিটি রাজ্যের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে কর্তব্যের স্বার্থে প্রাণ দেওয়া পুলিশকর্মীদের জীবনীপাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে। তৈরি করতে হবে শহিদদের বিবরণ নিয়ে ‘ই-বুক’।
কাল কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে এনএসজি-র ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী বলেছিলেন, “পুলিশের উপর মানুষের বিশ্বাস ক্রমে হারাচ্ছে। তা যে করেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে।”
এ দিন গুয়াহাটির সম্মেলনে আইবি প্রধান আসিফ ইব্রাহিম দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আল কায়দা-সহ বাকি জেহাদি শক্তিগুলিকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, পশ্চিম এশিয়ায় আইসিসের অভ্যূত্থান, ভারতীয় যুবকদের আইসিসে যোগদান, আল কায়দার ভারত-কেন্দ্রিক জেহাদি পরিকল্পনাও আশঙ্কার বিষয়। লস্করের কাশ্মীর মডিউলের পাশাপাশি জেএমবি জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গেড়েছে। ইংল্যান্ড, আমেরিকায় খালিস্তানি বাহিনী গঠনের কথাও প্রকাশ্যে এসেছে। বিভিন্ন রাজ্যে মাওবাদীদের সামরিক শক্তি এখনও অটুট। উত্তর-পূর্বে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন তোলাবাজি, অপহরণ চালাচ্ছে। আসিফ বলেন, “এ বারের ডিজি সম্মেলনে তাই সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা তথ্য নির্ভর অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy