Advertisement
E-Paper

ম্যাডিসনের মিনি ভারতে নায়ক মোদী

নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে জনতার উচ্ছ্বাসে তখন যেন শোনা যাচ্ছে মে মাসে ভারতের নানা প্রান্তের প্রতিধ্বনি। তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে ‘ম্যান অব দ্য মোমেন্ট’... নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকায় জনপ্রিয়তার নিরিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে যিনি নয়া নজির তৈরি করে ফেলেছেন। ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের আগেও অবশ্য শনিবার তারুণ্যের কথা শোনাতে নিউ ইয়র্কের আসরে এক বার হাজিরা দিয়েছেন মোদী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
পর্দায় মোদী। রবিবার ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে। ছবি: পিটিআই

পর্দায় মোদী। রবিবার ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে। ছবি: পিটিআই

নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে জনতার উচ্ছ্বাসে তখন যেন শোনা যাচ্ছে মে মাসে ভারতের নানা প্রান্তের প্রতিধ্বনি। তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে ‘ম্যান অব দ্য মোমেন্ট’... নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকায় জনপ্রিয়তার নিরিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে যিনি নয়া নজির তৈরি করে ফেলেছেন।

ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের আগেও অবশ্য শনিবার তারুণ্যের কথা শোনাতে নিউ ইয়র্কের আসরে এক বার হাজিরা দিয়েছেন মোদী। নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে চলছিল ‘গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল’। সেই মঞ্চে তখন চলছে বিয়ন্সে, জে জেড-দের অনুষ্ঠান। তারই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধানের পরিচয় করিয়ে দিলেন অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান। শোনালেন চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গল্পও। শ্রোতাদের বড় অংশই তরুণ। আর মোদী জানালেন, তরুণদের সঙ্গে বন্ধ কনফারেন্স রুমের চেয়ে খোলা পার্কেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ। কারণ, নবীন প্রজন্মই ভবিষ্যৎ। তারা আজ যা করবে তাতেই ভবিষ্যতের দিশা তৈরি হবে।

সেন্ট্রাল পার্ক যদি ষষ্ঠীর সকাল হয় তবে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে অষ্টমীর সন্ধ্যার প্রস্তুতি চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। রবিবার সেখানে ভারতের নতুন কর্ণধারের জন্য হা পিত্যেশ করে অপেক্ষা করেছিলেন ২০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন। তা ছাড়া, টাইমস স্কোয়ার-সহ নানা প্রান্তে টিভি, ট্যাবলেট, মোবাইলের পর্দায় চোখ রেখেছিলেন অনেকে।

মোদী মঞ্চে আসার আগেই নিউ ইয়র্কের বুকে এক টুকরো ভারত তৈরির কাজটা শুরু করেছিলেন শিল্পীরা। তাঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন অনেক ভারতীয়-মার্কিন, তেমনই ছিলেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। ‘রঙ্গিলো মারো ঢোলনা’-র পরে ‘আই লাভ মাই ইন্ডিয়া’-র সুরে ম্যাডিসন স্কোয়ারের স্নায়ু বেঁধে ফেলেছিলেন তাঁরা।

বলিউড, ক্রিকেট, রাজনীতির অনেক সেলিব্রিটিকেই আমেরিকা ঘুরে যেতে দেখেছেন রাজীব নিগম। মোদী যে তাঁদের সকলকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন তা ম্যাডিসন থেকেই ফোনে স্বীকার করে নিলেন তিনি। মঞ্চে তখনও আসেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাজীব বললেন, “যে নেতা ভারতের ভবিষ্যতের পক্ষে সঠিক পদক্ষেপ করতে পারবেন তাঁকেই ভারতীয়-মার্কিনরা সমর্থন করবেন। মোদী যে তেমনই এক নেতা তা নিয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই।”

মোদী সম্পর্কে ভারতীয়-মার্কিনদের এই ধারণার সঙ্গে বাস্তবের অনেকটাই যোগ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন নিউ জার্সি প্রবাসী পলি গুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই ভারতে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে দিল্লি বা অন্য রাজ্যে অসুবিধেয় পড়েছেন। কিন্তু মোদীর রাজ্যে গিয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে অন্য রকম। ফলে, মোদী ভক্তের সংখ্যা বেড়েছে ভারতীয়-মার্কিনদের মধ্যে।”

এই সংযোগের কথাই ম্যাডিসন স্কোয়ারে বললেন মোদী। জানালেন, ভারত যে সাপুড়ের দেশের ভাবমূর্তি থেকে বেরোতে পেরেছে তার অন্যতম কারিগর প্রবাসীরা। এখন সাপ নয়, ‘মাউস’ নিয়ে খেলেন ভারতের তরুণ-তরুণীরা। তাঁরা ‘মাউস’ নাড়লে সারা দুনিয়ায় টালমাটাল শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানাচ্ছেন, ভারতের জন্য তাঁর মন্ত্র ‘থ্রি-ডি’, যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় ভারতের শক্তিকে। ‘থ্রি-ডি’ অর্থাৎ ডেমোক্রাসি, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও ডিম্যান্ড। একে একে ব্যাখ্যা করেছেন মোদী। তাঁর মতে, সবচেয়ে প্রাচীন সংস্কৃতির দেশ ভারতের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স এখন ৩৫ বছরের নীচে। গণতন্ত্রে বলীয়ান এই ‘নবীন’ রাষ্ট্রের এখন পিছিয়ে পড়ার কোনও কারণই নেই। সারা বিশ্বের নজর ভারতের দিকে আছে। কারণ, বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারতে আছে বিরাট বাজার।

তাঁর সরকারের কাছে দেশ-বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রত্যাশা যে বিপুল তা বিলক্ষণ জানেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রত্যাশা মেটানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ১৫ মিনিটও ছুটি নেননি। যে সব প্রবাসী ভারতীয় তাঁকে প্রচারে সাহায্য করেছেন সময় পাননি তাঁদের ধন্যবাদ বলারও। ম্যাডিসন স্কোয়ারে তাই তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি।

লোকসভা ভোটের আগে মোদীময় হয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর, উত্তরের শ্রীনগর থেকে দাক্ষিণাত্যের কন্যাকুমারী। তার পরে গঙ্গায় জল গড়িয়েছে। দেশে উপ-নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে মোদীর দল। কিন্তু নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে লোকসভা ভোটের আগের সেই চিত্রটাই দেখল দুনিয়া। উপস্থিত জনতার এক বড় অংশ তরুণ। যাঁদের ‘মোদী মোদী’ গর্জন নিশ্চয়ই তারুণ্যের প্রতি তাঁর বার্তা সফল হয়েছে বলেই ভাবতে বাধ্য করছে প্রধানমন্ত্রীকে। আপ্লুত হয়ে তাই তিনি বলছেন, “এত ভালবাসা খুব কম নেতাই পেয়েছেন।”


উচ্ছ্বসিত মোদী-ভক্তরা। রবিবার নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে। ছবি: পিটিআই

বক্তৃতায় মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর উল্লেখ করে মোদী বলেছেন, “গাঁধী আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন? পরিবর্তে আমরা কি দিয়েছি? আসুন, আমরা তাঁকে পরিচ্ছন্ন ভারত দিই।” ১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদাবাদে এসে পৌঁছেছিলেন গাঁধী। সেই ইতিহাসকে স্মরণ করে আগামী বছর প্রবাসী দিবস দিল্লিতে নয়, আমদাবাদে পালিত হবে, জানান মোদী। এ ভাবেই নিজের কর্মকাণ্ডের মূল ক্ষেত্রকে ফের প্রচারের আলোয় আনলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

মোদীর বক্তৃতা শুনতে রবিবার সকাল থেকে ম্যাডিসন স্কোয়ারে লাইন দেন ভারতীয়-মার্কিনরা। অনুষ্ঠানের সময়ে তাঁদের উচ্ছ্বাসে মনে হয়েছে ম্যাডিসন স্কোয়ার বদলে গিয়ে হয়েছে ‘মোদীসন’ স্কোয়ার। তবে বাইরে মোদী-বিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভও দেখান বেশ কিছু মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। এটাই গণতন্ত্র।

madison square centre narendra modi un visit usa visit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy