Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেউ ভোলে টাকায়, কেউ নারীসঙ্গে, টোপের ডালি সাজাতেন পাক চর

কেউ ভোলে টাকায়, কেউ নারীসঙ্গে। মজুত ছিল সব ব্যবস্থাই। বদলে শুধু এনে দিতে হবে গোপনতম খবর। দিল্লি পুলিশের সন্দেহ, তথ্য পাচারকারীদের হাত করতে কোনও কার্পণ্যই করতেন না পাক দূতাবাস কর্মীর ভেক ধরা আইএসআই চর মেহমুদ আখতার।

মেহমুদ আখতার।

মেহমুদ আখতার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

কেউ ভোলে টাকায়, কেউ নারীসঙ্গে। মজুত ছিল সব ব্যবস্থাই। বদলে শুধু এনে দিতে হবে গোপনতম খবর। দিল্লি পুলিশের সন্দেহ, তথ্য পাচারকারীদের হাত করতে কোনও কার্পণ্যই করতেন না পাক দূতাবাস কর্মীর ভেক ধরা আইএসআই চর মেহমুদ আখতার।

বুধবার দিল্লি চিড়িয়াখানায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতবদলের সময়ে মেহমুদ-সহ তিন আইএসআই চরকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ। মেহমুদকে বহিষ্কার করে বিদেশ মন্ত্রক। আজ তদন্তকারী দলের এক অফিসার জানান, গোপন তথ্য বের করতে মেহমুদ টাকা ওড়ানোর পাশাপাশি মধুচক্রের জালও বিছোতেন বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন। ধরা পড়া চর-চক্রের পাণ্ডা ছিলেন মেহমুদই।

একটি বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত। ধৃতদের কাছ থেকে বিএসএফের গতিবিধি ও ঘাঁটি সংক্রান্ত যে তথ্য ও মানচিত্র পাওয়া গিয়েছে, তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কারও সক্রিয় হস্তক্ষেপ বেরোনো সম্ভব নয়। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, জওয়ানদের পাশাপাশি বাহিনীর কিছু মাঝারি স্তরের কর্তাও হয়তো মেহমুদের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। তাঁরা কারা, খোঁজ চলছে। গত কাল ধৃতদের কাছ থেকে গুজরাতের কচ্ছ ও স্যার ক্রিকে ভারতীয় বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধার হয়েছে। যা মেহমুদের হাতে তুলে দিচ্ছিল ভারতীয় দুই চর মৌলানা রমজান ও সুভাষ জাঙ্গির। বিনিময়ে তাদের পাওয়ার কথা ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, গুজরাত ছাড়া মহারাষ্ট্র ও গোয়ার সামরিক ঘাঁটি ও বাহিনী সংক্রান্ত তথ্যও হাতানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মেহমুদ। ভারতের পশ্চিম উপকূলে ২৬/১১-র ধাঁচে ফের একটি হামলার সতর্কতা জারি রয়েছে কিছু দিন ধরেই। সেই ছক কষতে মেহমুদের পাঠানো তথ্যের ভূমিকা ছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

গত রাতে মেহমুদের তৃতীয় ভারতীয় সঙ্গী শোয়েবকে জোধপুর থেকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। জেরায় শোয়েব জানিয়েছে, ঘটনার দিন সে দিল্লিতেই ছিল। রমজান ও সুভাষের সঙ্গে রাজস্থান থেকে এসে উঠেছিল পুরনো দিল্লির একটি হোটেলে। পরশু বিকেলে রমজান ও জাঙ্গির দিল্লি চিড়িয়াখানায় মেহমুদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। দিল্লি পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) রবীন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘অন্য দু’জন না ফেরায় ও তাদের মোবাইল বন্ধ দেখে সন্দেহ হয় শোয়েবের। সেই রাতেই জোধপুরে ফিরে যায় সে। কিন্তু পুলিশ শোয়েবের গতিবিধির উপর নজর রাখছিল। জোধপুর থেকেই তাকে ধরা করা হয়।’’ পাসপোর্ট-ভিসা এজেন্ট শোয়েবের সঙ্গে তিন-চার বছর ধরে মেহমুদের পরিচয়। সে-ই অন্য দু’জনকে দলে টানে। গ্রেফতারের সময়ে নিজের মোবাইলটা ভেঙে ফেলতে গিয়েছিল শোয়েব। পুলিশ জানাচ্ছে, শোয়েবরা নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য বিনিময় করেই তা মুছে দিত, যাতে নজরদারি করা সম্ভব না হয়। বিশেষ প্রয়োজনে পরস্পরকে ফোন করলেও, কথা হতো সাঙ্কেতিক ভাষায়। সে সবই উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

মেহমুদকে ভারত বহিষ্কার করার পরেই গত কাল ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সুরজিৎ সিংহকে পাল্টা বহিষ্কার করে ইসলামাবাদ। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘কোনও যুক্তিই দিতে পারেনি পাকিস্তান। শুধু বলেছে, উনি কূটনৈতিক রীতি লঙ্ঘন করেছেন। এটা ভিত্তিহীন। শুধু পাল্টা কিছু করতে হবে বলে করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

honeytrap pakistan trap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE