Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Odissi

সমাজের গঞ্জনায় আত্মহত্যার চেষ্টা, মায়ের উৎসাহে ‘মেয়েলি’ প্রেম আজ অন্যতম সেরা নর্তক

মা এবং বন্ধু— দুইয়ের ভূমিকাই পালন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মঞ্জুলতা শাহু।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:৫৫
Share: Save:
০১ ১৫
১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ওড়িশার কটক হাসপাতালে বসে এক দিনের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কথা দিয়েছিলেন কোনও অমর্যাদা হতে দেবেন না তার, আত্মসম্মানের সঙ্গে বড় করবেন ছেলেকে। মা এবং বন্ধু— দুইয়ের ভূমিকাই পালন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মঞ্জুলতা শাহু।

১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ওড়িশার কটক হাসপাতালে বসে এক দিনের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কথা দিয়েছিলেন কোনও অমর্যাদা হতে দেবেন না তার, আত্মসম্মানের সঙ্গে বড় করবেন ছেলেকে। মা এবং বন্ধু— দুইয়ের ভূমিকাই পালন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মঞ্জুলতা শাহু।

০২ ১৫
সেটাই করে দেখিয়েছেন তিনি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপিয়ে দেওয়া বাঁধন ছিন্ন করে নিজেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ছেলেকে। প্রেম শাহুর কাছে তাই মা মঞ্জুলতা বেঁচে থাকার প্রেরণা।

সেটাই করে দেখিয়েছেন তিনি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপিয়ে দেওয়া বাঁধন ছিন্ন করে নিজেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ছেলেকে। প্রেম শাহুর কাছে তাই মা মঞ্জুলতা বেঁচে থাকার প্রেরণা।

০৩ ১৫
তাই এক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও আজ ‘মেয়েলি নাচ’ হিসাবে অনেকের কাছে পরিচিত ওডিশি নাচে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রেম। মঞ্জুলতা তাঁর ছেলের ইচ্ছার পাশে সে সময় থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যখন লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে আজকের মতো সমাজ এতটা সচেতন হয়ে ওঠেনি।

তাই এক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও আজ ‘মেয়েলি নাচ’ হিসাবে অনেকের কাছে পরিচিত ওডিশি নাচে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রেম। মঞ্জুলতা তাঁর ছেলের ইচ্ছার পাশে সে সময় থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যখন লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে আজকের মতো সমাজ এতটা সচেতন হয়ে ওঠেনি।

০৪ ১৫
প্রেম আজ এক জন অত্যন্ত জনপ্রিয় ওডিশি নৃত্যশিল্পী। তাঁর নাচ দর্শকের মনে ভক্তির উদ্রেক ঘটায়। সারা বিশ্বে শিল্পকলা প্রদর্শনের জন্য ডাক পান তিনি। সকলেই এগিয়ে এসে তাঁর ভূয়ষী প্রশংসা করেন।

প্রেম আজ এক জন অত্যন্ত জনপ্রিয় ওডিশি নৃত্যশিল্পী। তাঁর নাচ দর্শকের মনে ভক্তির উদ্রেক ঘটায়। সারা বিশ্বে শিল্পকলা প্রদর্শনের জন্য ডাক পান তিনি। সকলেই এগিয়ে এসে তাঁর ভূয়ষী প্রশংসা করেন।

০৫ ১৫
সেই প্রেমই এক সময় মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। যদিও মা-বাবার কথা ভেবে সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তিনি।

সেই প্রেমই এক সময় মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। যদিও মা-বাবার কথা ভেবে সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তিনি।

০৬ ১৫
ছোট থেকেই নাচের প্রতি আলাদা ভালবাসা ছিল প্রেমের। নাচ শিখতেও চেয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে, পাড়ার অনুষ্ঠানে এবং স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এগিয়ে যেতেন নাচ করার জন্য।

ছোট থেকেই নাচের প্রতি আলাদা ভালবাসা ছিল প্রেমের। নাচ শিখতেও চেয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে, পাড়ার অনুষ্ঠানে এবং স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এগিয়ে যেতেন নাচ করার জন্য।

০৭ ১৫
মেয়েলি পোশাক পরে নাচতে ভালবাসতেন তিনি। তাঁর এই স্বভাবের জন্য ছোট থেকেই নানা কুমন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে।

মেয়েলি পোশাক পরে নাচতে ভালবাসতেন তিনি। তাঁর এই স্বভাবের জন্য ছোট থেকেই নানা কুমন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে।

০৮ ১৫
স্কুলের শিক্ষকদের টিপ্পনী থেকেও রক্ষা পেতেন না তিনি। ফলে সহপাঠীরাও তাঁকে সহজেই ব্যঙ্গ করার সুযোগ পেতেন। সময়ে অসময়ে তাঁকে কখনও ‘নাচনি’, কখনও ‘ছক্কা’ এমন সব ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। আত্মীয়স্বজনেরাও ব্যঙ্গ করার সুযোগ হাতছাড়া করতেন না।

স্কুলের শিক্ষকদের টিপ্পনী থেকেও রক্ষা পেতেন না তিনি। ফলে সহপাঠীরাও তাঁকে সহজেই ব্যঙ্গ করার সুযোগ পেতেন। সময়ে অসময়ে তাঁকে কখনও ‘নাচনি’, কখনও ‘ছক্কা’ এমন সব ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। আত্মীয়স্বজনেরাও ব্যঙ্গ করার সুযোগ হাতছাড়া করতেন না।

০৯ ১৫
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও শ্বাসরোধী হয়ে উঠতে শুরু করে প্রেমের কাছে। বাড়ি থেকে বার হওয়াই তাঁর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। কোনও বন্ধু ছিল না তাঁর অথচ তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার লোকের অভাব ছিল না।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও শ্বাসরোধী হয়ে উঠতে শুরু করে প্রেমের কাছে। বাড়ি থেকে বার হওয়াই তাঁর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। কোনও বন্ধু ছিল না তাঁর অথচ তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার লোকের অভাব ছিল না।

১০ ১৫
এমন একটা সময়ে জীবন শেষ করে দেওয়াই শ্রেয় মনে হয়েছিল তাঁর। গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। কিন্তু চোখের সামনে মা-বাবার মুখ ভেসে ওঠায় সেটা সম্ভব হয়নি।

এমন একটা সময়ে জীবন শেষ করে দেওয়াই শ্রেয় মনে হয়েছিল তাঁর। গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। কিন্তু চোখের সামনে মা-বাবার মুখ ভেসে ওঠায় সেটা সম্ভব হয়নি।

১১ ১৫
প্রেম স্থির করেছিলেন কোনও ভাবেই আর নাচবেন না। নিজেকে একেবারে ঘরবন্দি করে ফেলেছিলেন তিনি। খুব কষ্ট হলে বন্ধ ঘরেই নাচতেন। ছেলের এই মানসিক কষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন না মা মঞ্জুলতা।

প্রেম স্থির করেছিলেন কোনও ভাবেই আর নাচবেন না। নিজেকে একেবারে ঘরবন্দি করে ফেলেছিলেন তিনি। খুব কষ্ট হলে বন্ধ ঘরেই নাচতেন। ছেলের এই মানসিক কষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন না মা মঞ্জুলতা।

১২ ১৫
সমাজের এ সব একপেশে মনোভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে ২১ বছর বয়সে ছেলেকে ওডিশি নাচে ভর্তি করিয়ে দেন। ছেলেকে আত্মসম্মান নিয়ে চলার পরামর্শ দেন। ছেলের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়ে ওঠেন।

সমাজের এ সব একপেশে মনোভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে ২১ বছর বয়সে ছেলেকে ওডিশি নাচে ভর্তি করিয়ে দেন। ছেলেকে আত্মসম্মান নিয়ে চলার পরামর্শ দেন। ছেলের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়ে ওঠেন।

১৩ ১৫
ওডিশি নাচের মধ্যেই বাঁচার রসদ খুঁজে পান প্রেম। ওডিশিই হয়ে ওঠে নিজেকে এবং নিজের মানসিকতাকে ব্যক্ত করার তাঁর একমাত্র মাধ্যম।

ওডিশি নাচের মধ্যেই বাঁচার রসদ খুঁজে পান প্রেম। ওডিশিই হয়ে ওঠে নিজেকে এবং নিজের মানসিকতাকে ব্যক্ত করার তাঁর একমাত্র মাধ্যম।

১৪ ১৫
দিল্লির সাহিত্য কলা পরিষদে ২ বছরের জন্য বৃত্তিও পান তিনি। সারা বিশ্বেই তিনি নৃত্য প্রদর্শনের ডাক পান। প্রচুর প্রশংসায় ভরে যায় তাঁর হৃদয়।

দিল্লির সাহিত্য কলা পরিষদে ২ বছরের জন্য বৃত্তিও পান তিনি। সারা বিশ্বেই তিনি নৃত্য প্রদর্শনের ডাক পান। প্রচুর প্রশংসায় ভরে যায় তাঁর হৃদয়।

১৫ ১৫
অনেক বদল এসেছে প্রেমের জীবনে। শুধু বদলায়নি সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মানসিকতা। আজও তাঁরা প্রেমকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে চলেছেন। তবে সে সমস্ত ব্যঙ্গে আর ভেঙে পড়েন না প্রেম। বরং সেগুলোকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসাবেই নেন।

অনেক বদল এসেছে প্রেমের জীবনে। শুধু বদলায়নি সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মানসিকতা। আজও তাঁরা প্রেমকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে চলেছেন। তবে সে সমস্ত ব্যঙ্গে আর ভেঙে পড়েন না প্রেম। বরং সেগুলোকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসাবেই নেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy