Advertisement
E-Paper

শেষ পর্যন্ত ভাঙন ঠেকানো যাবে তো মুলায়ম সিংহ যাদবের দলে?

যুদ্ধে বিরতি! নাকি এটাই সংঘাতের আনুষ্ঠানিক পরিণতি? শেষ কথা বলার সময় আসেনি। তবে এটা ঘটনা, আজ অন্তত ভাঙল না সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেল যাদব কুলে কার ঘা কতটা দগদগে!

অগ্নি রায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮
ভিতরে চলছে বৈঠক। বাইরে অখিলেশের ছবি হাতে অনুগামীরা। ছবি: পিটিআই।

ভিতরে চলছে বৈঠক। বাইরে অখিলেশের ছবি হাতে অনুগামীরা। ছবি: পিটিআই।

যুদ্ধে বিরতি! নাকি এটাই সংঘাতের আনুষ্ঠানিক পরিণতি? শেষ কথা বলার সময় আসেনি। তবে এটা ঘটনা, আজ অন্তত ভাঙল না সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেল যাদব কুলে কার ঘা কতটা দগদগে! কতটা গভীর দলের অন্দরের চিড়! যা ধামাচাপা দিতে গভীর রাত পর্যন্ত দলের মাথারা দফায় দফায় বৈঠক চালালেও গোটা পর্বে মোদ্দা যে প্রশ্নটি উঠে এল তা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ভাঙন ঠেকানো যাবে তো মুলায়ম সিংহ যাদবের দলে?

যাদব পরিবারে, দলে ও সরকারে বাপ-ছেলে, কাকা-ভাইপোর লড়াই তীব্র আকার নিয়েছিল আগেই। আজ তার নগ্ন চেহারাটা দেখল গোটা দেশ। ‘নেতাজি’ মুলায়মের উপস্থিতিতেই ভাইপো কেড়ে নিচ্ছেন কাকার মাইক! কাকা প্রকাশ্যেই মিথ্যাবাদী বলে গাল পাড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী ভাইপোকে। বাবার মন্তব্যে গর্জে উঠছেন ছেলে। আবার কিছু ক্ষণ পরেই বাবার কথা বলতে গিয়ে অবরুদ্ধ হচ্ছে পুত্রের কণ্ঠ। চলছে গাল, পাল্টা-গাল, মঞ্চেই ধাক্কাধাক্কি, স্লোগান পাল্টা-স্লোগান, কখনও বা গঙ্গাজল হাতে নিয়ে দিব্যি করার হুমকি, কখনও আবার আবেগে ভেজা গলায় গদি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার অভিমানি ঘোষণা!

লখনউ নয়, সব মিলিয়ে এ যেন ডেটলাইন কুরুক্ষেত্র! অন্তত আজ সকালে সমাজবাদী পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এমনটাই মনে হতে বাধ্য। এরই মধ্যে আবার চার দিকে কার্টুন পোস্টার-সহ স্লোগান, ‘বিভীষণকো বাহার করো।’

সমাজবাদী পার্টির যুযুধান দুই শিবিরে কে কোন মহাভারতের চরিত্র, তা নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, তারই মধ্যে রামায়ণের এই চরিত্রটি কে? তিনি অমর সিংহ। অখিলেশ যাদব বরাবর যাঁকে আঙ্কল বলে ডেকে এসেছেন, যিনি বরকর্তা ছিলেন তাঁর বিয়েতে— সেই অমরকেই এ দিন দালাল আখ্যা দেন অখিলেশ।

গোটা দিনের এই যুদ্ধ-পরিস্থিতির পরেই দলের নেতারা নেমে পড়েন পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায়। যুযুধান দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয় রাতে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা। মুলায়ম এবং অখিলেশ বৈঠক করেন। পরে দু’দফায় অখিলেশ, মুলায়ম এবং শিবপাল যাদব এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। রাতে নাটকীয় ভাবে অখিলেশের বাড়ি যান শিবপাল। কাকা-ভাইপোর কেউই ভাঙেননি কী কথা হল দু’জনে। সারা দিনের কাদা ছোড়াছুড়ির পরে এ বার দু’জনেই যান মুলায়মের কাছে। দলের শীর্ষনেতা কী বললেন তাঁদের? কাকা-ভাইপো নীরব। কথা বলার অবস্থায় নেই মুলায়মও। রাতে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, নেতাজির দাঁতে খুব ব্যথা।

মুলায়মের দলে এমন একটা ধুন্ধুমার ‘শো-ডাউন’ হঠাৎ করে হয়নি। তিন চার মাস ধরেই তৈরি হচ্ছিল এর প্রেক্ষাপট। শুধু দলেই নয়, মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তাঁর রাজ্য প্রশাসনেও এতটাই কোণঠাসা পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন যে তাঁর মুখ্যসচিব কে হবেন, সেটা পর্যন্ত স্থির করার ক্ষমতা তাঁর হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অখিলেশ অনুগামীদের একটি বড় অংশ তাই আওয়াজ তুলছেন, বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা হোক। তাঁদের পক্ষে রয়েছে প্রায় দেড়শো বিধায়কের সমর্থন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর পক্ষ থেকেও ঘরোয়া ভাবে বারবার বার্তা দেওয়া হচ্ছে, অখিলেশ নতুন দল গড়লে তাকে সমর্থন করা হবে। অজিত সিংহ, নীতীশ কুমারদের নিয়ে চেষ্টা করা হবে বিজেপি-বিরোধী মহাজোট গড়ার। কিন্তু দলীয় বৈঠকে অখিলেশই এ দিন জানিয়েছেন, তিনি দল ভাঙতে চান না। মহাজোট তৈরিরও অবস্থা তৈরি হয়নি। মুলায়মের দলে ভাঙনের আশায় বিজেপি উৎসাহিত হয়ে কালই দাবি করেছিল, বিধানসভায় গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিন অখিলেশ। দিনের শেষে তাই হতাশ বিজেপি।

যদিও দল ভাঙার প্রশ্নে অখিলেশ ও শিবপাল, দু’জনেই এ দিন বৈঠকে ছিলেন মারমুখী মেজাজে। কাকা-ভাইপোয় গলাগলি চেয়েছিলেন ‘নেতাজি’। কিন্তু বৈঠক হয়ে দাঁড়ায় গালাগালির আসরে। শিবপাল দাবি করেন, অখিলেশ নিজে এসে তাঁকে বলে গিয়েছিলেন আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে তিনি দল ভেঙে নতুন পার্টি তৈরি করবেন। ‘বেশ কিছু দল’কে নিয়ে মহাজোট গড়বেন। এর পরই ‘নেতাজি’কের স্তম্ভিত করে অখিলেশ মাইক কেড়ে নেন শিবপালের। বলেন, ‘‘আমাকে আওরঙ্গজেব বলা হয়েছে, নেতাজিকে শাহজাহান বলা হয়েছে। এটা অমর সিংহ করিয়েছেন।’’ পাল্টা মাইকে কেড়ে নিয়ে শিবপাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাবাদী।’’ এখানেই না থেমে তিনি বলেন, ‘‘আমি গঙ্গাজল হাতে নিয়ে শপথ করে বলতে পারি, অখিলেশ নতুন দল গড়তে চান। এর পরই তাঁর আহ্বান, ‘‘নেতাজি আপনি উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নিন।’’ স্লোগান দিতে থাকা অখিলেশের সমর্থকদের উদ্দেশে শিবপাল বলেন, ‘‘নেতাজির কঠোর পরিশ্রমে দল এই জায়গায় এসেছে। তোমাদের স্লোগান দেওয়ার জন্য নয়।’’ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তিনি নিজে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন, শিবপাল এই খতিয়ান দিতেই অখিলেশ-সমর্থকেরা চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘আপনি তো হেলিকপ্টারে ঘুরতেন।’’ ক্ষিপ্ত শিবপালকে বলতে শোনা যায়, ‘‘হেলিকপ্টার কেয়া তুমহারে বাপকা হ্যায়? ম্যায় মন্ত্রী থা সরকার মে!’’ অখিলেশ শিবিরের উদ্দেশে শিবপাল বলেন, ‘‘অমর সিংহ কে চরণো কি ধুল ভি নেহি হ্যায় আপলোগ।’’

গোড়ায় মুলায়ম বলছিলেন, দল এখন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। এখন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করা উচিত। এর পর তিনি অমর প্রসঙ্গে আসার পরই চার দিকে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। গর্জে ওঠেন খোদ পুত্র অখিলেশ। বাবার কথার মাঝেই তিনি বলেন, ‘‘অমর সিংহের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই দলে। উনি এক জন দালাল। তাকে কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না।’’

মুলায়ম সাফ জানিয়ে দেন, অমর-শিবপালের বিরুদ্ধে কোনও কিছুই তিনি সহ্য করবেন না। দল গড়ে তোলার দিনগুলি থেকে শিবপালের অবদান, পরে অমরের ভূমিকার উচ্চকিত প্রশংসা করেন মুলায়ম। বলেন, ‘‘অমর আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। ও না থাকলে আমাকে এত দিনে জেলে যেতে হতো। ও আমার ভাইয়ের মতো।’’ ছেলেকে বিঁধে নেতাজির পরামর্শ, ‘‘সমালোচনা সইতে না পারলে সে নেতাই নয়।’’

এ দিন অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেও মুলায়ম-তাসটি খেলতে ছাড়েননি অখিলেশ। বাবা তথা দলের নেতাজি সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘মেরে পিতা মেরা গুরু হ্যায়!’’ নতুন দলের সম্ভাবনাও আপাতত উড়িয়ে গিয়ে তিনি আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছেন, ‘‘নেতাজি যাকে সৎ মনে করেন, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করুন। আমি কেন নতুন পার্টি তৈরি করতে যাব!’’ আগামি ৩ এবং ৫ তারিখ— যথাক্রমে অখিলেশের রথযাত্রা এবং দলের রজত জয়ন্তী উৎসব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ক্ষুব্ধ অখিলেশ ৫ তারিখের অনুষ্ঠানে যাবেন না, এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। আজ অবশ্য অখিলেশ বলেছেন, ‘‘রথও চলবে, প্রতিষ্ঠা দিবসও উদ্‌যাপিত হবে।’’

Samajwadi party Akhilesh Yadav Lokhnow
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy