শিলচরের পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনল শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
‘নির্ভয়’ নামের ওই সংস্থার সভাপতি বিজিৎ রায় বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রতিটি পুরসভায় পুর-আইন মেনে এক জন করে এগজিকিউটিভ অফিসার রয়েছেন। কিন্তু শিলচর পুরসভার সভাপতি হিসেবে নীহারবাবু সেই প্রথার বিরোধিতা করে আসছেন।’’ তার কারণ হিসেবে বিজিতবাবুর ব্যাখ্যা, আগে পুরসভাগুলিতে নির্বাচিত সভাপতিই ছিলেন সর্বেসর্বা। সে সুবাদে অর্থ অপচয়ের বেআইনি সুবিধা ভোগ করতেন তাঁরা। কিন্তু পরে সরকারি অর্থের নজরদারির জন্য এগজিকিউটিভ অফিসার নিয়োগ করা হয়। এতেই মাথায় হাত পড়েছে নীহারবাবুর মতো পুর-সভাপতির। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর শিলচর সফরের সময় এগজিকিউটিভ অফিসার প্রথা রদের যে দাবি করেছেন, বিজিৎবাবু তার সমালোচনা করেন। শিলচর পুরসভায় আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য নেই বলেও অভিযোগ করেন ওই সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁরা পরিসংখ্যান তুলে ধরে ইঙ্গিত দেন, নীহারবাবুর বোর্ড অস্থায়ী কর্মী নিযুক্তিতে বেশি আগ্রহী। দু’বছরে পুরসভায় অস্থায়ী কর্মীসংখ্যা ১১৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫০।
নীহারবাবুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পুরনো বহু বিষয়কেও নতুন করে উত্থাপন করে অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মী বিজিৎ রায়ের নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। তার মধ্যে রয়েছে, পুর বাজেট সাধারণের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা না করা, নোংরা জায়গা থেকে শহরে সরবরাহের জন্য জল উত্তোলনের মতো বিষয়।
আসাম পুর হিসেব বিধির ১৩ নম্বর ধারার উল্লেখ করে বিজিৎ রায়, দেবব্রত পাল, মৃণাল পালচৌধুরী ও হাবুল সাহা জানান— বাজেট পেশের পর ১৪ দিনের সময়সীমা দিয়ে করদাতাদের জন্য তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হয়। এর পর সংশোধন-সংযোজন করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়। নীহারবাবু যে সভায় বাজেট প্রস্তাব পেশ করলেন, সে সভায় বসেই সংখ্যার জোরে তা চূড়ান্ত করে দিসপুর পাঠিয়ে দেন। একে শহরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা বলেই মনে করছেন তাঁরা।
সংস্থাটির আরও অভিযোগ, শহরে সরবরাহ করা জল নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বেগে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অনেক দিন আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছে, ওই জল নিরাপদ নয়। মূল কারণ কালীবাড়িচরের মলমূত্র যেখানে নদীতে এসে পড়ে, তার নিম্ন এলাকা থেকে জল সরবরাহ করছে পুরসভা ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। অথচ ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে পুরসভার নিজস্ব জায়গা রয়েছে। সেখানে জলশোধনের দু’টি বিশাল আকারের তামার কড়াই রয়েছে। পুরসভা সে জায়গা ব্যবহার না করে বেহাত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে বিজিৎবাবুরা আশঙ্কা করেন। তাঁরা বিস্মিত, আরেকটি জল সরবরাহ প্লান্টের মঞ্জুরি পাওয়ার পর পুরসভা ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে না গিয়ে নদীর আরও নিম্ন-অববাহিকাকে বেছে নিয়েছে। ফাটকবাজারে দোকানঘরের বন্দোবস্ত নিয়ে অনেক টাকার লেনদেনেরও আশঙ্কা করছেন ‘নির্ভয়’ সংস্থার কর্মকর্তারা।
সে সব নিয়ে শিলচরের পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর এখনই মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগগুলি আগে ভাল করে বুঝে নিই।’’ কংগ্রেস পরিষদীয় দল আগে অনেক বার এ সব নিয়ে মুখ খুললেও আজ বিরোধী দলনেতা অলক কর একে ‘বিজেপির অন্তর্কোন্দল’ বলে এড়িয়ে যান। অলকবাবু বলেন, ‘‘বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল আর পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরের বিবাদে আমরা জড়াতে চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy