জল্লাদদের উল্লাসমঞ্চ মাঝেমাঝেই ঢেকে দেয় আমার দেশের আসল মুখ!
গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ যে দেশে খুন হতে হয় প্রৌঢ়কে, সেই একই দেশে খাস গণেশ মন্দিরের ভেতরই জন্ম নিল এক মুসলিম শিশু। এবং আবেগ আপ্লুত মা-বাবা সেই নবজাতকের নাম রাখলেন গণেশ! বাবরি-দাদরির বাইরেও যে মহাভারত, এ তারই সন্তান!
সোমবারের মুম্বই নগরী। ভোর তখন প্রায় সাড়ে চারটে। স্ত্রী নুরজাহানের ডাকে ঘুম ভাঙে ইলিয়াজ শেখের। প্রসব বেদনায় তখন ছটফট করছেন নুরজাহান। নির্ধারিত দিনের চার দিন আগেই প্রসব বেদনা ওঠায় প্রাথমিক ভাবে দিশাহারা হয়ে পড়েন বছর সাতাশের ওই তরুণ। তার পর বাইরে বেরিয়ে একটি ট্যাক্সি ডেকে স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন সিয়ন হাসপাতালের উদ্দেশে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছতেই হবে! কিন্তু, একে তো সরু রাস্তা, তায় ওই ভোরবেলাতেও শহরের রাস্তায় গাড়ির ভিড়— দুইয়ে মিলিয়ে বারে বারেই শ্লথ হয়ে যাচ্ছিল ট্যাক্সির গতি। পাশাপাশি বাড়ছিল নুরজাহানের প্রসববেদনার মাত্রা। এই পরিস্থিতিতে ইলিয়াজদের গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন ট্যাক্সিচালক। শেষে তাঁরা একপ্রকার বাধ্যই হন রাস্তায় নেমে যেতে!
এর পর কী করবেন? কোনও ভাবেই মাথায় আসে না ইলিয়াজের। এক দিকে ট্যাক্সি নেই, অন্য দিকে স্ত্রীর ব্যথা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পাশেই ছিল একটি গণেশ মন্দির। কোনও রকমে ধরে নিয়ে স্ত্রীকে সেই মন্দিরে বসান তিনি। এর পর এক ছুট্টে বেরিয়ে যান ট্যাক্সির খোঁজে।
ভোরবেলা অনেকেই এসেছিলেন ওই গণেশ মন্দিরে পুজো দিতে। ব্যথায় কাতরাতে থাকা এক মহিলাকে মন্দির চত্বরে দেখে তাঁদের কয়েক জন এগিয়ে আসেন নুরজাহানের কাছে। মূলত মহিলা ভক্তরাই তাঁকে এর পর মন্দিরের ভেতরে নিয়ে যান। ওই দলে যিনি সবচেয়ে বয়স্ক, সেই মহিলাই দায়িত্ব নিলেন ধাই মায়ের। তাঁদেরই উদ্যোগে মন্দিরের ভেতরেই বিছানার চাদর আর শাড়ি দিয়ে সাময়িক ভাবে তৈরি করা হল ‘লেবার রুম’। মিনিট কয়েকের মধ্যেই সদ্যোজাতের কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল। ফুটফুটে একটি ছেলের জন্ম দিয়েছেন নুরজাহান।
সব কিছু ভাল ভাবে মিটে যাওয়ার পর কী বলছেন নতুন মা? রাস্তার মাঝে প্রবল ব্যথা উঠে যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় মনে হচ্ছিল রাস্তার উপরেই বোধহয় প্রসব হয়ে যাবে। আর তখনই নজরে এল মন্দিরটা। মনে হল ঈশ্বর সব দেখছেন। গণপতি বাপ্পার সামনে আমার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেবে, এর থেকে আর ভাল কিছু হতে পারে! ছেলের নাম গণেশ রাখব।’’
এক সপ্তাহ আগে, গত সোমবার রাতে নয়ডার দাদরি পরগনার বিসারা গ্রামে ৫০ বছরের মহম্মদ আখলাককে গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ খুন করা হয়। অভিযোগ, আখলাককে খুন করেন তাঁর গ্রামের মানুষই। নবজাতক ‘গণেশ’ অন্তত সেই ভারতে জন্মাল না! এই ভারতকেই পাবে তো সে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy