Advertisement
E-Paper

দুর্গামণ্ডপে এক টুকরো প্রাচীন মিশর

মিশরের প্রাচীন লোকগাথাকেই এবারের পুজোর থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে হাইলাকান্দির মা অন্নপূর্ণা ক্লাব। প্রাচীন মিশরের লোকগাথার ধর্মীয় চরিত্রের সঙ্গে প্রাচ্যের দেবদেবীর সামঞ্জস্য ঘটিয়ে শিল্পকলার এক অপরূপ নিদর্শন তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পুজোর আয়োজকরা।

অমিত দাস

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৩
মিশরীয় লোকগাথার আদলে দুর্গাপ্রতিমা। মা অন্নপূর্ণা ক্লাবে। — নিজস্ব চিত্র।

মিশরীয় লোকগাথার আদলে দুর্গাপ্রতিমা। মা অন্নপূর্ণা ক্লাবে। — নিজস্ব চিত্র।

মিশরের প্রাচীন লোকগাথাকেই এবারের পুজোর থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে হাইলাকান্দির মা অন্নপূর্ণা ক্লাব। প্রাচীন মিশরের লোকগাথার ধর্মীয় চরিত্রের সঙ্গে প্রাচ্যের দেবদেবীর সামঞ্জস্য ঘটিয়ে শিল্পকলার এক অপরূপ নিদর্শন তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পুজোর আয়োজকরা।

হাইলাকান্দি শহরের ৯ নং ওয়ার্ডের গৌতম রায় লেনের মা অন্নপূর্ণা ক্লাবের পুজো মাত্র চার বছরে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে এই পুজো অন্য আয়োজকদের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলার বড় বাজেটের পুজো আয়োজকদের সঙ্গে রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে এই ক্লাব।। দারুণ সব থিম বেছে বেছে পুজোর আয়োজন করায় ইতিমধ্যেই আলোচনায় উঠে আসার পাশাপাশি দর্শনার্থী টানার ক্ষেত্রেও বড় বাজেটের পুজোগুলির সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে মা অন্নপূর্ণা।

প্রাচীন মিশরিয় লোকগাথায় বর্ণিত দেবী ইসিসকে তুলে আনা হয়েছে। ইসিস হচ্ছেন স্বাস্থ্য-বিবাহ ও জ্ঞানের দেবী। স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা এই দেবী আবার পাখির মতো ডানায় ভর করে উড়তে পারেন। মিশরিয় সোককথায় ইসিস হচ্ছেন শুভ শক্তির প্রতীক। ঠিক আমাদের দুর্গার মতো। সেই দেবী ইসিসকে হাইলাকান্দির পুজো মণ্ডপে দেখা যাবে দেবী দুর্গার রূপে, অসুরদলনীর ভুমিকায়। শিল্পীর কল্পনায় মা অন্নপূর্ণা ক্লাবের মণ্ডপে দশভুজা ইসিসকে দেখা যাবে দুই সিংহে-র উপর দাঁড়ানো। দেবীর দু’দিকে দুটি ডানা। বাহন সিংহ দু’টিরও রয়েছে ডানা। মায়ের যখন ডানা রয়েছে, তখন পুত্র-কন্যারাই বা বাদ যান কেন। সরস্বতীর হাঁস, লক্ষ্মীর প্যাঁচা বা ময়ূরের তো ডানা আছেই, এ খানে গণেশের বাহন ইঁদুরেরও ডানা রয়েছে। এক যাত্রায় পৃথক ফল তো হতে পারে না। অন্নপুর্ণা ক্লাবের এই এই থিমে রয়েছে পরিচিত অসুর, মহিষাসুর। তবে একটু অন্য রূপে। মিশরিয় ধর্মবিশ্বাস মতে, অন্ধকার জগতের দৈত্য বলে কথিত ওসাইরিস। এ ক্ষেত্রে তিনিই নিয়েছেন মহিষাসুরের জায়গা। ওসাইরিস থাকছেন দেবী ইসিস বা দুর্গার পদতলে। সেইসঙ্গে মণ্ডপ সজ্জাতেও থাকছে মিশরিয় ছোঁয়া। থাকছে ইজিপ্টের পরম পরাক্রমশালী শাসক ফারাও-এর ‘মমি’। মণ্ডপের প্রবেশ পথে থাকবে বিভিন্ন ফারাওয়ের মূর্তি।

এবারের থিম নিয়ে কয়েকমাস আগে থেকেই চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন ক্লাবের কর্তারা। আয়োজকদের পক্ষে গৌতম ঘোষ জানালেন, মিশরিয় সভ্যতারই এক মিশ্র রূপকে তাঁরা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এই মণ্ডপে থাকছে মরু প্রান্তর। আর সেই মরু প্রান্তরের উপরে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য, পিরমিড। আয়োজক গৌতম ঘোষ এবং সৌরভ পাল জানালেন, পিরামিড তৈরি করছেন মণ্ডপ-শিল্পী শংকর নাথ। এ ছাড়াও এই ব্যাতিক্রমী প্রতিমার দায়িত্বে মৃৎশিল্পী হরি পাল। মূলত থার্মোকল, প্লাস্টার অব প্যারিস, বাঁশ-কাঠ-কাপড় ইত্যাদি সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে মণ্ডপ নির্মাণে। ক্লাবের আলোকসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন আলোকশিল্পী তনু পাল। তনুবাবু এবার আলোকসজ্জায় অভিনবত্ব আনবেন বলে দাবি আয়োজকদের। মণ্ডপ শিল্পী শংকর নাথ জানান, মিশরীয় ভাস্কর্য প্রাচীন মিশরের কথাই মনে করিয়ে দেবে দর্শকদের। এবারের পুজোর বাজেট কত? আয়োজকরা তা খোলসা করতে চাননি। পুজোর অন্যতম পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘ধরে নিন, বিগ বাজেটেরই পুজো এটি।’’ পুজোর নিষ্ঠা ও ষোল আনা সাত্ত্বিকতা যাতে বজায় থাকে সেদিকেও কড়া নজর আয়োজকদের। গৌতম বাবু জানান, গত বছর থিমের জন্য এই পুজো দর্শনার্থীদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এবারও তারা ব্যাতিক্রমী থিম বেছে নিয়েছেন পুজোয় বৈচিত্র্য আনতে। তাঁর কথায়, যদি তাঁদের পুজো মানুষকে টানতে পারে, আনন্দ দিতে পারে তবেই প্রয়াস সফল হবে।

Durga Idol Ancient Egypt Annapurna Club
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy