Advertisement
১৭ মে ২০২৪

অপেক্ষায় মোদী-রাহুল, ভোটের ফল দেখে রদবদল

শনির দশায় শুক্র, না বুধের দশায় কেতু! কাল বৃহস্পতিবারের বারবেলাতেই সাফ হয়ে যাবে। আর তার দিকেই মুখিয়ে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী আর রাহুল গাঁধী। বুথ ফেরত সমীক্ষা আগেও ভুল হয়েছে, এ বারেও হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ১৮:১০
Share: Save:

শনির দশায় শুক্র, না বুধের দশায় কেতু! কাল বৃহস্পতিবারের বারবেলাতেই সাফ হয়ে যাবে।

আর তার দিকেই মুখিয়ে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী আর রাহুল গাঁধী।

বুথ ফেরত সমীক্ষা আগেও ভুল হয়েছে, এ বারেও হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু কাল হাতে-গরম টাটকা ফল চাক্ষুশ করেই মেপে পা ফেলতে চান মোদী-রাহুলরা। কারণ, এই ফলের উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে, সরকার ও দু’দলের সাংগঠনিক রদবদলের রকমফের কী হবে।

জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে চার মাস কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত বিজেপির সংগঠনের এক চিলতে বদল আনেননি অমিত শাহ। অপেক্ষা করে আছেন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের উপরেই। কারণ, খোদ নরেন্দ্র মোদীই তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। পাঁচ রাজ্যের ফল বিচার করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলটিও সেরে ফেলতে চান প্রধানমন্ত্রী।

এমনিতেই কেন্দ্রের ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে অসমে দলের সভাপতি করে দেওয়া হয়েছে। আবার তিনিই রাজ্যে দলের মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী। ফলে বিজেপি যদি অসমে সরকার গড়তে পারে, তা হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল যতই ছোট হোক না কেন, তা অবশ্যম্ভাবী। তার উপর নাজমা হেপতুল্লা, কলরাজ মিশ্রর মতো ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়া মন্ত্রীদেরও রাজভবনে পাঠিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে ছুটি দিতে চান। এ ছাড়া আরও কিছু মন্ত্রী রয়েছেন, যাঁদের কাজকর্মে খুশি নন তিনি। কয়েক জনকে মন্ত্রক থেকে দলেও পাঠাতে চান প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: রাজনকে সরান, মোদীকে চিঠি স্বামীর

এর সঙ্গেই মাথায় রাখতে হবে সামনের বছর উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলিতে জেতার অঙ্ক। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অমিত শাহ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে কাকে কাকে কেন্দ্রীয় টিমে নিয়ে আসা যায়, তার একটি তালিকা তৈরি করে ফেলেছেন। কিন্তু সবই নির্ভর করছে কালকের ফলাফলের উপর।’’ সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নিজে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে সভা করছেন। আর অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহেরা গোটা রাজ্যে হিন্দুত্ব উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি দলিত ও ওবিসি-র মন টানতে করবেন আরও ছ’টি সভা।

প্রায় একই হাল কংগ্রেস শিবিরেও। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর দু’বছর কেটে গিয়েছে, দলের সংগঠনকে এখনও পর্যন্ত ঢেলে সাজাননি রাহুল গাঁধী। খোদ রাহুল গাঁধীকে সভাপতি করার ‘উপযুক্ত’ সময় কোনটি, তা-ও এখনও নির্ধারণ করতে পারছে না দশ নম্বর জনপথ। আজও দলের পঞ্জাবের মুখ ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ বলেছেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী যদি ক্লান্ত হন, রাহুল দায়িত্ব নিতেই পারেন।’’ এর পর যদি বুথ ফেরত সমীক্ষার আভাস অনুযায়ী, কেরল ও অসমও হাত থেকে ফস্কে যায়, তা হলে বাড়তি চাপ এসে পড়বে রাহুলের উপর। সংগঠনের রদবদল করলেও দলের প্রবীণতন্ত্রের কথাও শুনতে হবে তাঁকে। কিন্তু অন্তত একটি রাজ্য ধরে রাখতে পারলে রাহুল তা-ও হাত খুলে নিজের মতো টিম সাজাতে পারবেন।

কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে বিহার ও দিল্লিতে বুথ ফেরত সমীক্ষা একেবারেই মেলেনি। ফলে এখনও পর্যন্ত আশঙ্কার কোনও কারণ ঘটেনি। আগামিকাল ফল প্রকাশ হলেই বোঝা যাবে আসল চিত্রটি। কিন্তু যদি অধিকাংশ সমীক্ষার আভাস মিলে যায়, তা হলে তো দক্ষিণে তামিলাড়ুতে ডিএমকে-র জোটসঙ্গী হিসেবে জিতে আসার ঘটনায় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হবে।’’ পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্বের কথা বলে নিয়েছেন রাহুলই। সমীক্ষা তাদের পিছিয়ে রেখেছে। অসমে পরাজয় হলেও তার দায় অনেকটাই এসে পড়বে রাহুলের উপর। দলের অন্তর্কলহ তিনি মেটাতে পারেননি। সময়মতো হিমন্ত বিশ্বশর্মাদের কাবু করতে পারেননি। শুধুমাত্র গতকাল দিল্লি পুরসভার চারটি আসন জিতে হইচই শুরু করে দিয়েছিলেন অজয় মাকেনরা। রাহুল গাঁধীর জয়ধ্বনি দিয়ে আজ জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে গিয়েছেন সনিয়া গাঁধীর কাছেও। কিন্তু কাল আরও দুই রাজ্য চলে গেলে কী হবে?

দলের অনেকে অবশ্য মনে করেন, কালকের ফল যা-ই হোক, দলের সংগঠনকে চাঙ্গা করার জন্য ভোটের ফলের দিকে তাকানো উচিত নয়। লোকসভার হারের পর থেকে গত দু’বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। জমি বিল থেকে পণ্য-পরিষেবা কর, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোদী সরকারকে ব্যাকফুটে ফেলা হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যের দুর্নীতি নিয়েও কংগ্রেস এখন সরব হতে পেরেছে। এমনকী, কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে বিজেপির ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগেরও মোকাবিলা করা হয়েছে। খোদ সনিয়া গাঁধী রাস্তায় নেমেছেন প্রতিবাদে। ফলে কাল অসম বিজেপির ঝুলিতে গেলে তারা যদি তাণ্ডবও শুরু করে, কংগ্রেসের তাতে বিচলিত না হয়েই নিজেদের রণনীতি তৈরি করা উচিত।

আপাতত অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার। দুই শিবিরেই এখন অঙ্ক চলছে, ‘আমি কোন পথে যে চলি, কোন কথা যে বলি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Narendra Modi rahul gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE