Advertisement
E-Paper

রাজপুত ভোট রাখতেই মুখে কুলুপ প্রধানমন্ত্রীর

এক দিকে তিনি ভোটব্যাঙ্কের জন্য মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। অন্য দিকে পদ্মাবতী নিয়ে এই বিতর্ক অহেতুক বলে যাঁরা মনে করছেন, তাঁদের কথাও শুনছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৬

মুখ খোলার জন্য চাপ বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু পদ্মাবতী নিয়ে নরেন্দ্র মোদী নীরবই।

এক দিকে তিনি ভোটব্যাঙ্কের জন্য মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। অন্য দিকে পদ্মাবতী নিয়ে এই বিতর্ক অহেতুক বলে যাঁরা মনে করছেন, তাঁদের কথাও শুনছেন।

পদ্মাবতী বিতর্কে মোদী চুপ কেন, সিনেমার জগত থেকে সবার আগে সেই প্রশ্ন উঠেছিল। বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহাও এ বার সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমাদের জনপ্রিয়তম প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে নির্বিকার নীরবতা পালন করছেন!’’

শত্রুঘ্ন অনেক দিন ধরেই বিজেপির মোদী-বিরোধী শিবিরে। কিন্তু মোদীকে চাপে ফেলে গুজরাতের রাজপুতরা দাবি তুলেছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খুলতে হবে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী আগেই রাজ্যে পদ্মাবতীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা করেছেন। কিন্তু গুজরাতের রাজপুতরা গাঁধীনগরে বিরাট জমায়েত করে দাবি তুলেছেন— রূপাণী যা বলছেন, তা আসলে ভোটের গিমিক। ভোট হয়ে গেলেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিতে হবে, গুজরাতে পদ্মাবতী কখনই ছাড়পত্র পাবে না।

মোদী সরকারের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী মনে করেন, ‘পদ্মাবতী’ ছবি নিয়ে এই বিতর্ক অহেতুক। যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁরা কেউই ছবিটি দেখেননি। আপত্তির কারণগুলি অধিকাংশই ভিত্তিহীন। সরকারের এই মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়েওছেন। এক ক্যাবিনেট মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘ছবির পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের এ ভাবে তালিবানি হুমকি দেওয়া হলে মোটেই ভালো বার্তা যায় না।’’

প্রশ্ন উঠেছে, তা বুঝেও সরকার বা মন্ত্রীরা চুপ কেন? বিজেপির নেতারা মাথার দাম ঘোষণা করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে?

ভোটের অঙ্কই এর প্রধান কারণ বলে বিজেপির অন্দরের ব্যাখ্যা। গুজরাত ভোটের আগে যেমন হিন্দু আবেগকে উসকে দিতে রূপাণী নিজেই অযোধ্যার রাম মন্দিরের কথা বলছেন, তেমনই ‘পদ্মাবতী’ বিতর্কেরও সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি। গুজরাতেও রাজপুত ভোট কম নয়। রাজকোট, মেহসানা, পাটানে রাজপুতরা বাইক মিছিল করেছে। এমনিতেই রাজ্য বিজেপির সভাপতি জিতু ভাগনানির সঙ্গে রাজপুত নেতাদের সম্পর্ক ভাল নয়। গাঁধীনগরে প্রায় এক লক্ষ রাজপুত জড়ো হয়ে ‘পদ্মাবতী’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তা ছাড়া আগামী বছর রাজস্থানে ভোট। প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা সামলাতে ব্যস্ত বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া রাজপুতদের চটাতে নারাজ। সেই কারণে কংগ্রেসও পিছন থেকে রাজপুতদের উস্কানি দিচ্ছে বলে বিজেপি নেতাদের অভিযোগ।

কিন্তু বিতর্ক যে অহেতুক, সেটা মানছেন মোদীর অনেক মন্ত্রী। এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ছবিটি আমার দু’জন পরিচিত দেখেছেন। শুনলাম ছবিতে পদ্মাবতী-আলাউদ্দিন খলজির এক সঙ্গে কোনও দৃশ্যই নেই। কাল্পনিক দৃশ্যও নেই। এমন হলে কোনও ঐতিহাসিক ছবিই হবে না!’’ ওই মন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘এখন ‘মুঘল-ই-আজম’ সিনেমাটি হলে কী হত? ইতিহাসবিদেরা তো বলেন, আনারকলি বলে কেউ ছিলেনই না!’’

মুশকিল হল, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন না-পেলে এঁরা কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু অবশ্য এর নিন্দা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, গণতন্ত্রে এই ধরনের হিংসাত্মক হুমকির কোনও জায়গা নেই। নায়ডুর যুক্তি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ হতেই পারে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানানো যেতে পারে। কিন্তু শারীরিক হেনস্থা বা হুমকি দেওয়া চলে না। আইনের শাসনকে খাটো করা যাবে না।

Rajput নরেন্দ্র মোদী Narendra Modi Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy