আলাপচারিতা: ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী-পদে বিপ্লব দেবের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মানিক সরকার এবং লালকৃষ্ণ আডবাণী । শুক্রবার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
এগিয়ে গিয়ে মঞ্চের মাঝখান থেকে প্রায় হাত ধরে পিছনে নিয়ে গেলেন তাঁকে। ‘‘বিপ্লব, ই ধার আও’’— বলে ডেকে নিলেন নবীন মুখ্যমন্ত্রীকেও। তার পরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই প্রধানমন্ত্রী বললেন, ত্রিপুরায় সম্পূর্ণ আনকোরা কিছু তরুণ সরকার চালানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। সরকার চালাতে প্রাক্তনের সহযোগিতা দরকার হবে। বিপ্লব দেবও সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে মানিক সরকারকে ফের প্রণাম করে আশীর্বাদ নিলেন।
মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার আগে মানিককে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বললেন, দিল্লি আসুন। কথা হবে। সদ্যপ্রাক্তনের অবশ্য ২৮-২৯ মার্চ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগে দিল্লি যাত্রার কথা নেই। নমস্কার জানিয়েই বিদায় নিলেন তিনি।
কিন্তু ত্রিপুরায় ‘ইতিহাস’ গড়ার দিনে দেখা গেল অন্য এক নরেন্দ্র মোদীকে! ভোটের আগে ডাক দিয়েছিলেন, মানিক ফেলে ‘হিরা’ নেওয়ার। কিন্তু এ বার বিরোধীদের প্রতি বিদ্রুপ, শ্লেষ কোথাও নেই! বরং, বিরোধী বামেদের অকুণ্ঠ সহযোগিতা চাইছেন!
হতে পারে, ভোটের ফলে ২৫ বছরের জমানা পাল্টে যেতেই ত্রিপুরা জুড়ে সিপিএমের দফতরে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর অভিযোগ, আক্রোশের বুলডোজারে লেনিনের মূর্তি উৎখাতের ঘটনা বিজেপির ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিয়েছে বড়সড়। কর্নাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে ভোটের আগে এমন হিংসার ঘটনা থামাতে মুখ খুলতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি অমিত শাহকে। হতে পারে, ত্রিপুরার নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের মঞ্চে বিরোধীদের সহযোগিতা চেয়ে দলের সেই উচ্ছৃঙ্খল বাহিনীকেই মোদী-শাহ বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, ভোট শেষ। শত্রুতাও শেষ। চাপে পড়ে হোক বা রাজনীতির চাল হোক— মোদীর সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার আহ্বানই আজ নজর কেড়েছে বেশি।
ডজনখানেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, রাজনাথ সিংহের মতো বর্ষীয়ান বিজেপি নেতাদের উপস্থিতিতে তরুণ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবের শপথের পরে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন, এই সরকারটা তাঁদের। যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদেরও। ত্রিপুরার শান্তি বজায় রাখতে হবে, উন্নয়নে এগোতে হবে। দায়িত্ব এখন আমাদের। সকলের সহযোগিতা চাই।’’ পরে বিরোধী বাম বিধায়কদের উদ্দেশে মোদীর আরও নির্দিষ্ট আর্জি, ‘‘আপনারা দীর্ঘ দিন সরকার চালিয়েছেন। এখানে মুখ্যমন্ত্রীর টিম নতুন। ওঁদের উৎসাহ আছে, আপনাদের আছে অভিজ্ঞতা। দু’টো মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’’
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব বুঝে বিনম্র আবেদনে কার্পণ্য করেননি বিপ্লবও। ত্রিপুরার জনতার উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘যে বিশ্বাস নিয়ে নতুন সরকার তৈরি করেছেন, সেই বিশ্বাস সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে। যদি ভুল-ত্রুটি হয়, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী নয়, পরিবারের ছেলে বা ভাই মনে করে কান ধরে ভুল শুধরে দেবেন!’’ উচ্ছ্বাসে তখন ফেটে পড়ছে অসম রাইফেলসের মাঠ! সে সব শুনে পরে মানিকবাবু বলেছেন, ‘‘বলছেন তো ভাল কথা! কাজে কী হয়, দেখা যাক!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর আক্ষেপ, হিংসা বন্ধের সরাসরি ডাক ওই মঞ্চ থেকে এলে ভাল হতো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy