Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Nathuram Godse

টুইটার জোয়ারে গাঁধী-ঘাতকের নাম!

এ দিন সকাল থেকেই টুইটারে নাথুরামের জয়ধ্বনি দিয়ে টুইট-বন্যা শুরু হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সুজিষ্ণু মাহাতো
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০৫:১০
Share: Save:

গাঁধীজয়ন্তীতে টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর সঙ্গে এক সারিতে উঠে এল তাঁর হত্যাকারী, নাথুরাম গডসের নাম। শুক্রবার, ২ অক্টোবর, #গাঁধীজয়ন্তীর সঙ্গে দিনভর পাল্লা দিল #নাথুরামগডসেজিন্দাবাদ। গেরুয়া শিবিরের সমর্থক গডসে ভক্তদের এই কার্যকলাপ দেখে বিশ্লেষকদের মত, পরিকল্পনা করেই এমন করা হয়েছে।

এ দিন সকাল থেকেই টুইটারে নাথুরামের জয়ধ্বনি দিয়ে টুইট-বন্যা শুরু হয়। টুইট-বিশ্লেষণের একটি সাইট দেখিয়েছে, ভোর ৫টা থেকে #নাথুরামগডসেজিন্দাবাদ হ্যাশট্যাগে ক্রমাগত টুইট করা শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একটি বিশেষ হ্যাশট্যাগে যদি একসঙ্গে অনেক টুইট করা শুরু হয়, তা হলে তা ট্রেন্ডিং তালিকায় চলে আসে। সেই সময় যদি আর অন্য কোনও বিষয়ে টুইট না করা হয় তা হলে সেই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। তাই ভোর ৫টার মতো সময়কে বেছে নেওয়া হয় বলে মত তাঁদের। তবে এ বিষয়ে টুইট করা শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত ২টো নাগাদ। দুপুরের মধ্যেই গডসে নিয়ে টুইটের সংখ্যা আশি হাজার ছাড়িয়ে যায়। বেলা গড়াতে #গাঁধীজয়ন্তী ও #মহাত্মা গাঁধী নিয়ে টুইট বাড়তেই তা শীর্ষে উঠে আসে।

তবে পরিকল্পনা ছাড়া গডসে নিয়ে এমন হ্যাশট্যাগ তৈরি করা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গডসের সমর্থনে টুইট যাঁদের প্রোফাইল থেকে হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একাধিক ঘোষিত বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদের সমর্থককে দেখা গিয়েছে। তা জানিয়েই বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন টুইটারে গাঁধীকে সম্মান জানানোর ছবি, ভিডিয়ো পোস্ট করছেন, তখন বিজেপির আইটি সেল তাঁর হত্যাকারীর জয়গান গাইছে।

ইতিহাসবিদ তনিকা সরকারের মতে, গডসেকে সঙ্ঘ পরিবার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বরাবরই দেশপ্রেমী মনে করেন। কারণ, দেশ বলতে তাঁরা যা বোঝেন আর গাঁধী যা বুঝতেন তা বিপরীত। তনিকার কথায়, ‘‘গাঁধীর হত্যার পর দেশব্যাপী শোকে এমন মনোভাব কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। তবে হালের ভারতবর্ষে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী শিবির যে ক্ষমতা ভোগ করছে তা আগে কখনও হয়নি। তাই এ সব কথা তাঁরা প্রকাশ্যে বলার সাহস পাচ্ছেন।’’

২০১৯-এর লোকসভা ভোটের দলের প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা গডসেকে দেশপ্রমিক বলায় তাঁকে ‘কোনওদিন মন থেকে ক্ষমা করতে পারবেন না’ বলে জানিয়েছিলেন মোদী। তবে প্রজ্ঞাকে কোনও শাস্তিও দেওয়া হয়নি।

বিজেপির বহু শীর্ষ নেতাই এ দিন গাঁধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তনিকার ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপির পক্ষে প্রকাশ্যে গাঁধীকে সম্মান না জানিয়ে গডসের জয়ধ্বনি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, দেশের বাইরে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপ্রিয়, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে ইতিবাচক পরিচিতি, তা গাঁধীর জন্যই। তাই ট্রাম্প এলেও তাঁকে গাঁধীর আশ্রমেই নিয়ে যেতে হয়।’’

তাই প্রকাশ্যে গাঁধীকে অস্বীকার করতে না পারলেও ক্ষমতার জোরে শাসক শিবিরের একাংশ এ ভাবে গডসে সম্বন্ধে তাদের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে বলে মত ইতিহাসবিদের।

গাঁধীজয়ন্তীতে গাঁধীর হত্যাকারীর জয়ধ্বনির ঘটনায় গাঁধীর পৌত্র, ইতিহাসবিদ রাজমোহন গাঁধীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘গাঁধীকে হত্যার নৃশংসতা দেশকাল নির্বিশেষে সৎ, নিষ্পাপ, সাহসি ও বড় মনের মানুষদের হত্যার সঙ্গে তুলনীয়। সেই একই নৃশংসতায় সম্প্রতি এক দলিত তরুণীকে ধর্ষণ-খুন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের মনে করতে হবে নোয়াখালি ও বিহারের হিংসার পর ৭৭ বছরের গাঁধীর পদযাত্রা। নোয়াখালিতে আক্রান্তরা ছিলেন হিন্দু, বিহারে মুসলিম। কিন্তু সকলেই মানুষ। যা শুভ, তা শুভ বলেই উজ্জ্বল, আক্রমণ এড়িয়ে গিয়েছে বলে নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nathuram Godse Mahatma Gandhi Twitter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE