Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ওই-নই বিতর্কে সরব বরাক

‘ওই’ না ‘নই’! এনআরসি নবীকরণের নামে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে অসমে। ক্ষুব্ধ বরাক উপত্যকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। আজও এই বিতর্ককে ঘিরে আন্দোলন মুখর হয়ে ওঠে শিলচর। গত কাল হাইলাকান্দিতে হয় নাগরিক সভা। আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে করিমগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তেও।

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন নীতিশ ভট্টাচার্য। হাইলাকান্দিতে অমিত দাসের তোলা ছবি।

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন নীতিশ ভট্টাচার্য। হাইলাকান্দিতে অমিত দাসের তোলা ছবি।

উত্তম সাহা ও অমিত দাস
শিলচর ও হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

‘ওই’ না ‘নই’!

এনআরসি নবীকরণের নামে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে অসমে। ক্ষুব্ধ বরাক উপত্যকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। আজও এই বিতর্ককে ঘিরে আন্দোলন মুখর হয়ে ওঠে শিলচর। গত কাল হাইলাকান্দিতে হয় নাগরিক সভা। আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে করিমগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তেও।

এনআরসি তৈরির জন্য নথিপত্র পরীক্ষার কাজ যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, তখনই এক নির্দেশিকা ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে: অসমের আদি বাসিন্দা বা ‘অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট’ (ও আই—ওই)-দের নথিপত্র পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তাঁরা নথিপত্র না দিলেও আপত্তি নেই। এদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে উপজাতি ও চা জনগোষ্ঠীর মানুষের কথা। এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বাকিদের নন-অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট (এন ও আই—নই) বা অন্য কিছু লেখা হচ্ছে না।

‘সে লেখা হোক বা না হোক’, ক্ষুব্ধ জনতার অভিযোগ: ‘ওই’ লেখার পর বাকিরা যে ‘নই’, তা আর উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না। আসলে কৌশলে এনআরসি-তে বাঙালি-সহ জনগোষ্ঠীর একাংশকে পৃথক করে রাখাই এর উদ্দেশ্য।

এই শ্রেণি-বিভেদ সৃষ্টির নতুন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আজ শিলচরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য-কর্মকর্তারা। ‘ইয়ুথ এগেনস্ট সোশ্যাল এভিল’ (ইয়াসি) নামে এক এনজিও এর আহ্বায়ক ছিল। কিন্তু বহু সংস্থা-সংগঠনের সক্রিয় সমর্থন ও উপস্থিতির দরুন তা কার্যত নাগরিক কর্মসূচিরই চেহারা নিল।

ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে সকাল ১১টা থেকে দু’ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘট পালন করে তাঁরা। পরে জেলার ডেভেলপমেন্ট কমিশনার মধুমিতা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অসমের রাজ্যপাল পি বি আচার্যের উদ্দেশে স্মারকপত্র পেশ করা হয়। প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সাধন পুরকায়স্থ, ইয়াসির প্রধান সঞ্জীব রায়, অসম মণিপুরি ছাত্র সংস্থার হেরাজিত সিংহ, বরাক ভ্যালি হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন সোসাইটির নেহারুল আহমদ মজুমদার, আইনজীবী সৌমিত্র নাথ, পৃথক বরাক দাবি কমিটির শুভদীপ দত্ত প্রমুখ ওই-নই নিয়ে নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেন। সকলেই নাগরিকত্ব প্রমাণের পরও ‘নই’ করে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর পিছনে বাঙালি-বিরোধী ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে তাঁরা প্রত্যেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে ভাসমান জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে আশঙ্কা হাইলাকান্দিবাসীরও। প্রতিবাদী আন্দোলন ছাড়া এই চক্রান্ত প্রতিহত করা যাবে না বলে সবাইকে আন্দোলনে নামতে আহ্বান জানিয়েছেন জেলার বিশিষ্টজনেরা। কাল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের জেলা সমিতির ডাকে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এনআরসি-তে বাঙালিদের আদি বাসিন্দা বলে উল্লেখ না করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বরাক বঙ্গের জেলা সভাপতি পরিতোষ চন্দ্র দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সবাই বরাক-ব্রহ্মপুত্রের বাঙালীদের জোটবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা যে মাটিতে ছিলাম সেই মাটি অন্য রাষ্ট্র হয়ে গেল। কিন্তু আমরা কী করে বিদেশি হয়ে যাই।’’

নীতীশবাবু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন, এক দেশে এক রাজ্যে কখনও দু’ধরনের নাগরিক থাকতে পারেন না। বাঙালিদের ক্ষেত্রে ‘আদি বাসিন্দা’ শব্দ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত সংবিধান বিরোধী বলেই তিনি মন্তব্য করেন। কংগ্রেস নেতা হিলালউদ্দিন লস্করের কথায়, অসমে এভাবে বার বার বাঙালিদের হেনস্থা করা হচ্ছে। ধর্মের নামে, ভাষার নামে বার বার বাঙালিরা বিভাজিত হওয়ায় বর্তমানে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। হাইলাকান্দি জেলা বিজেপি সভাপতি ক্ষিতীশ রঞ্জন পাল বরাকবঙ্গের আগামী সভায় বরাক উপত্যকার সকল বিধায়ককে এক মঞ্চে ডাকার পরামর্শ দেন। একই ভাবে বামপন্থী নেতা নারায়ণ দেবনাথ, অসম গণ পরিষদের জেলা সম্পাদক কমরুল ইসলাম বড়ভুইয়া, সারিমুল হক, বিজয়কুমার ধর, সুকোমল পাল প্রমুখ অসমের বাঙ্গালিদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। হাইলাকান্দি রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত এই সভায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি অশোক দত্তগুপ্তও উপস্থিত ছিলেন।

একই ভাবে ওই-নই বিতর্কে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে করিমগঞ্জের সংস্থাগুলিও। বিভিন্ন নাগরিক কমিটি এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চলেছেন। নতুন করে উৎকণ্ঠার শিকার সাধারণ মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barak valley Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE