E-Paper

পাকিস্তানের মাথায় ‘হাত’ চিন-তুরস্কের, সাবধান নয়াদিল্লি

পহেলগাম-কাণ্ডের পর পাকিস্তানকে ‘কল্পনাতীত প্রত্যুত্তর’ দেওয়ার জন্য সমস্ত রণনৈতিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৬

—ফাইল চিত্র।

বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিভাজিত এবং অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় প্রায় ভঙ্গুর পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে ‘বোড়ের মতো’ ব্যবহার করেছে অন্য শক্তি। ঠিক যে ভাবে পিছন থেকে এখন বাংলাদেশকেও সেটাই করা হচ্ছে বলে সাউথ ব্লকের ধারণা।

পহেলগাম-কাণ্ডের পর পাকিস্তানকে ‘কল্পনাতীত প্রত্যুত্তর’ দেওয়ার জন্য সমস্ত রণনৈতিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি। এবং সেই সূত্রেই এই ধারণা পোক্ত হচ্ছে যে, অর্থনীতি-প্রযুক্তি-সামরিক শক্তিতে অনেক বলশালী ভারতের মাটিতে এই ধরনের স্পর্ধা দেখানোর সাহস এবং সক্রিয় সমর্থন ইসলামাবাদকে জোগাচ্ছে আদতে চিন এবং তুরস্ক। সূত্রের খবর, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনও বড় অভিযান করার আগে এই বিষয়টিকে হিসাবে রাখছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা।

পাকিস্তানের সামরিক সামর্থ্যের বিস্তারিত তত্ত্বতালাশ করতে গিয়ে বেজিং এবং ইস্তানবুলের সিলমোহর বারবার নজরে আসছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ফলে চোখে চোখ রেখে জবাব দেওয়ার সময় তাঁদের চিন এবং তুরস্কের ঘনিষ্ঠতার দিকটিকেও একই ভাবে সামলাতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চিনের তরফে পাকিস্তানকে সামরিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং সেখানে বিনিয়োগের অন্যতম উদ্দেশ্যই হল পরোক্ষে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তাদের বড় শত্রু ভারতকে ক্রমাগত পিছন থেকে আঘাত করে যাওয়া— এমনটাই অনুমান ভারতের। পহেলগামের নাশকতার পিছনে চিনের সরাসরি হাত না থাকলেও পাকিস্তানের ভারত-বিরোধিতায় দীর্ঘদিনের ইন্ধনের চিহ্ন স্পষ্ট। পাক অধিকৃত অঞ্চলের সাকসগং উপত্যকা চিনকে এর আগেই দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। সেটা বেজিংকে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত চাপ বাড়াতে সুবিধা করে দিয়েছে। পাশাপাশি ভারত যখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, চিন সেটা তার সুবর্ণসুযোগ হিসাবে দেখছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তুরস্কের বিষয়টি আরও জটিল। চিনের পর যে দেশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে ইসলামাবাদ, তা হল তুরস্ক। এই ভারত-বিরোধী রাষ্ট্রটি পাকিস্তানকে নিরন্তর সামরিক সহযোগিতা তো করছেই, পাশাপাশি ইসলামিক মৌলবাদী আদর্শও জুগিয়ে চলেছে, যা চিনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। জানা যাচ্ছে, ইস্তানবুল পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে জেহাদের নিত্যনতুন পাঠ পড়িয়ে থাকে। সাউথ ব্লকের একাংশের মতে, যদি শুধুমাত্র চিনই অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম জুগিয়ে যেত, তা হলে সমস্যা এতটা জটিল হত না। কারণ চিনা অস্ত্রের গুণগত মান কখনওই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। উদাহরণ হিসাবে বলা হচ্ছে চিনের যুদ্ধবিমান এফসি-৩১ এবং ডুবোডাহাজ (যা কম দামে ২০২১ সালে চিন দিয়েছিল পাকিস্তানকে) অনেক ক্ষেত্রেই কাজে আসেনি। কিন্তু তুরস্ক ‘এশিয়া নিউ ইনিশিয়েটিভ’-এর মঞ্চ গড়ে ভারতের প্রতিবেশী ইসলামি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কট্টরবাদের সেতু রচনা করে সম্পর্ক শক্তিশালী করেছে। তারা যে অস্ত্র সরবরাহ করে পাকিস্তানকে, তা কার্যকরী তো বটেই। উপরন্তু সেগুলি ইসলামি সন্ত্রাসবাদের জন্যই খানিকটা বিশেষ ভাবে তৈরি করা,
এমনটাই খবর।

এ কথাও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সাধারণ ভাবে মনে করা হয় যে নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে আমেরিকা যখন পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে, তখন সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করেছে চিন। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। চিন-পাক সহযোগিতা এবং সমন্বয় অনেক গভীর, যা শুরু হয়েছিল ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ই। এই মুহূর্তে এক দিকে প্রকাশ্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার বার্তা দিচ্ছে চিন। বিমান চলাচল শুরু করা, কৈলাস-মানস যাত্রা আবার শুরুর কথা বলছে। অন্য দিকে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্য বাড়াতেও বেজিং উদ্যোগী রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এই জোড়া ফলাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ ছোড়া হচ্ছে। এই জটিল নক্সার সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যাঘাতের কৌশল খুঁজছে ভারত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pahalgam Pahalgam Terror Attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy