কালাপানি অঞ্চলের লিপুলেখ পাস নিয়ে নেপালের আপত্তি খারিজ করে দিল ভারত। তবে কাঠমান্ডু এই বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা চাইলে, তার দরজা খোলা রয়েছে বলেও জানিয়েছে নয়াদিল্লি। দীর্ঘ দিন ধরেই উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাসকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে থাকে নেপাল। সম্প্রতি চিনের সঙ্গে ওই পথ ধরেই সীমান্তবাণিজ্য চলবে বলে স্থির করেছে ভারত। তার পরেই এই বিষয়ে আপত্তি জানায় নেপালের কেপি শর্মা ওলির সরকার।
বুধবার নেপালের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, সরকারি মানচিত্রে কালী নদীর পূর্ব দিকে থাকা লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুরা এবং পূর্ব কালাপানিকে সে দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে। তাই ভারত সরকারকে ওই অংশে রাস্তা নির্মাণ কিংবা সম্প্রসারণ কিংবা সীমান্তবাণিজ্য না-করার আর্জি জানানো হয়। বিতর্কিত ওই এলাকা যে তাদেরই অংশ, তা চিনকেও জানানো হয়েছে বলে দাবি করে নেপাল।
নেপালের ওই বিবৃতির পর বুধবার গভীর রাতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। নেপালের লিপুলেখ সংক্রান্ত দাবি ‘অযৌক্তিক, অসমর্থনযোগ্য এবং অনৈতিহাসিক’ বলে জানিয়ে সেখানে বলা হয়, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ১৯৫৪ সালে লিপুলেখ পাস ধরে ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমান্তবাণিজ্য শুরু হয়। কয়েক দশক ধরে তা চলেছে। কোভিড এবং অন্য কয়েকটি কারণে সম্প্রতি তা স্থগিত ছিল।” নেপালের আপত্তি যে ভারত মানবে না, তা-ও কার্যত স্পষ্ট করে দেওয়া হয় ওই বিবৃতিতে।
কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত অবশ্য সেই ব্রিটিশ আমলেই, ১৮১৬ সালে। ওই বছর স্বাক্ষরিত হওয়া সুগৌলির সন্ধি অনুসারে, কালী নদী ভারত এবং নেপালের মধ্যে ভৌগোলিক সীমারেখা হিসাবে কাজ করবে। তবে এই নদীর উৎসস্থল নিয়েও মতান্তর রয়েছে। নেপালের দীর্ঘ দিনের দাবি, লিপুলেখের উত্তর-পশ্চিম দিকে লিম্পিয়াধুরা নদীটির উৎসস্থল। সেই হিসাবে জায়গাটি তাদের সীমান্তের মধ্যেই পড়ছে বলে মনে করে থাকে কাঠমান্ডু। ভারতের পাল্টা দাবি, কালী নদীর উৎপত্তিস্থল কালাপানি গ্রামের একটি প্রস্রবণ। আর সেই প্রস্রবণ উত্তরাখণ্ডের মধ্যে পড়ছে।
২০২০ সালে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রার জন্য লিপুলেখ পাস বরাবর ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা বানিয়েছিল ভারত। তখনও তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে আপত্তি জানিয়েছিল নেপাল। সোমবার দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর ভারত সফরের সময়েই স্থির হয় যে, ভারত এবং চিনের মধ্যে ফের সীমান্তবাণিজ্য শুরু হবে। কোন পথে ধরে সেই বাণিজ্য চলবে, প্রাথমিক ভাবে তা-ও স্থির করা হয়। তার পরেই আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দেয় নেপাল।