নির্ভয়া-কাণ্ডের বিতর্কিত তথ্যচিত্র সম্প্রচার করায় বিবিসি-কে আইনি নোটিস দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেন্দ্রের আর্জি উড়িয়ে ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই তা দেখিয়ে দিয়েছে বিবিসি। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হচ্ছে, চ্যানেল ফোর-এ ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের আগেই বিবিসি-কে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, তথ্যচিত্রটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হবে না, এই শর্তেই তাদের তিহাড় জেলে শুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই শর্ত ভঙ্গ করেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিবিসি কর্তৃপক্ষ নোটিসের কোনও জবাব দেননি বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে।
তবে বিবিসি-কে ঠেকাতে না পারলেও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে লেসসি উডউইনের তথ্যচিত্রটির লিংক সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি। বস্তুত, বিবিসি-র সম্প্রচারের চেয়ে ইউটিউবে তথ্যচিত্রটি এসে যাওয়াটাই কেন্দ্রের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়েছিল। বিবিসি-র সম্প্রচার এ দেশে কেউ দেখতে পাননি। কিন্তু ইউটিউবের কল্যাণে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ছড়িয়ে যায় ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার সেল বলছে, গত কাল রাত থেকেই ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়েছে তথ্যচিত্রটি। ইতিমধ্যেই অন্তত কয়েক লক্ষ হিট হয়ে গিয়েছে লিংকটিতে। এর পরেই ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বোঝানো হয়, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। রাতে লিংকটি সরিয়ে নেয় ইউটিউব। কিন্তু এতে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয়ী মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশই। কারণ, লিংক সরানোর আগে তথ্যচিত্রটি বেশ কয়েক হাজার বার ডাউনলোড করা হয়েছে। যা পরে হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আরও অনেকের মধ্যে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পর প্রবল ভাবে মুখ পুড়েছিল তৎকালীন মনমোহন সিংহ সরকারের। সেই অস্বস্তির জের এ বার ফিরে আসছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ঘাড়ে। গত কাল রাজ্যসভায় ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া-কাণ্ডের উপর তথ্যচিত্র ভারতে সম্প্রচার করতে দেওয়া হবে না। এমনকী ব্রিটেন তথা বিশ্বের কোনও প্রান্তেই ওই তথ্যচিত্রটি দিনের আলো দেখবে না। ভারতীয় চ্যানেলগুলির মতো বিবিসি-কেও মোদী সরকার অনুরোধ জানিয়েছিল যাতে তা দেখানো না-হয়। কিন্তু বিবিসি জানিয়ে দেয়, তারা একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম। তারা সম্প্রচার বন্ধ রাখবে না।