Advertisement
০৩ মে ২০২৪

জলপ্রকল্প আছে, কিন্তু জল নেই চণ্ডী বিলের আবাসনে

শহরি বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৯০টি আবাসগৃহ তৈরি হয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের যাবতীয় শর্তই এ ক্ষেত্রে লঙ্ঘনই শুধু করা হয়নি, ন্যুনতম প্রয়োজন যে পানীয় জল, তারও সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নেই রাস্তা, নিকাশি। এই নেই-আবাসনই এখন ছাড়ার কথা ভাবছেন গরিব মানুষগুলি।

করিমগঞ্জের আবাসন এবং সেই জল প্রকল্পের অফিস। —নিজস্ব চিত্র।

করিমগঞ্জের আবাসন এবং সেই জল প্রকল্পের অফিস। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তমকুমার মুহরী
করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

শহরি বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৯০টি আবাসগৃহ তৈরি হয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের যাবতীয় শর্তই এ ক্ষেত্রে লঙ্ঘনই শুধু করা হয়নি, ন্যুনতম প্রয়োজন যে পানীয় জল, তারও সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নেই রাস্তা, নিকাশি। এই নেই-আবাসনই এখন ছাড়ার কথা ভাবছেন গরিব মানুষগুলি।

২০০৮ সালে করিমগঞ্জ শহর লাগোয়া চণ্ডী বিল এলাকায় লক্ষ্মীবাজার রোডের সরকারি জায়গায় এই আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তখন পুরপ্রধান ছিলেন দেবর্ষি ভট্টাচার্য। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারি এই প্রকল্পে মোট ৪৫৮টি আবাস-গৃহ তৈরি করা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত সেখানে ২৯০টি ঘর তৈরি হয়েছে। সময়মতো ঘর তৈরি হলেও খুব সহজে উপকৃতরা সেই গৃহের প্রবেশ পত্র পাননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, তাঁদের প্রত্যেককে ৯ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। তারপরেও মাথার ছাদ পেতে অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে। অবশেষে ২০১৪ সালে প্রাপকদের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। সেই সময় জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের জলপ্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছিল। সেই কারণে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে অনেকগুলি পাম্প বসানো হয়। এ বছরের পুর নির্বাচনের কিছু দিন আগে আবাসিক প্রকল্পে স্থায়ী পানীয় জলপ্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রাক্তন জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বর্তমান অন্যতম উপদেষ্টা গৌতম রায়।

তবে গৌতমবাবু ফিতে কেটে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে এক ফোঁটা জলও সেখানে সরবরাহ করা হয়নি। দফতর সূত্রের খবর, ভোটের আগে তড়িঘড়ি প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোরই এখনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। জলপ্রকল্পটি চালানোর জন্য এখনও কোন কর্মী বরাদ্দ করা হয়নি। ফলে, জলের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও লোকে বিশুদ্ধ জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে আবাসিক প্রকল্পে ১৬০টি পরিবার বাস করছেন। তাঁদের নির্ভর করতে হয় শুধুমাত্র একটি অস্থায়ী পাম্পের উপর। কারণ অন্য পাম্পগুলির মধ্যে সাতটি খারাপ। চালু তিনটি পাম্পের মধ্যে দু’টির জল অতিরিক্ত লাল। পান করার উপযুক্ত নয় বলে কেউই তা পান করেন না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে পানীয় জলের হাহাকার। অনেকগুলি পরিবার আবাসন ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘‘জলের সমস্যার পাশাপাশি নিকাশি ও রাস্তার সমস্যাও এই পরিকল্পিত আবাস-প্রকল্পে রয়েছে। এত বড় প্রকল্পের নিকাশির
কোনও ব্যবস্থাই নেই। চারদিকে জল জমে শুধু আবাসনের নয়, আশপাশের এলাকারও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।’’ আর মানুষ যেখান দিয়ে যাতায়াত করেন সেটা রাস্তা নয়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফেলে রাখা জমি। বর্ষা কালে এই মাঠ দিয়ে যাতায়াত সম্ভব নয় বলেই স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য। আবাসনের মানুষ অনেক বার জেলা ও পুর প্রশাসনের কাছে তাদের নানা সমস্যার কথা বলেছেন বটে, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। দাবিপত্র গিয়েছে উপর মহলেও। কিন্তু আবাসন-বাসীরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। এ বিষয়ে নতুন
পুরনেত্রী শিখা সূত্রধরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মাত্র চারদিন হয়েছে চেয়ারে বসেছি। সব কিছু এখনও জানি না। তবে দু’-এক দিনের মধ্যে ওই এলাকা ঘুরে দেখব।’’ এবং সমস্যা সমাধানের ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়েছেন নতুন পুরপ্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE