Advertisement
১১ মে ২০২৪
কথা জলবায়ু সমঝোতা নিয়েও

পরমাণু, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে দিল্লির পাশে ওবামা

দু’বছরে চার চারটি আমেরিকা সফর এবং সাতটি শীর্ষ বৈঠক। হায়দরাবাদে হাউসে ঘনিষ্ঠ ‘চায়ে পে চর্চা’। কূটনৈতিক কেতা ভেঙে ‘বারাক’ বলে সম্বোধন।

আলিঙ্গনে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

আলিঙ্গনে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

দু’বছরে চার চারটি আমেরিকা সফর এবং সাতটি শীর্ষ বৈঠক। হায়দরাবাদে হাউসে ঘনিষ্ঠ ‘চায়ে পে চর্চা’। কূটনৈতিক কেতা ভেঙে ‘বারাক’ বলে সম্বোধন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই বহুচর্চিত চিত্রনাট্যের শেষ পর্ব আজ শুরু হল ওয়াশিংটন ডিসিতে। ওবামা-মোদী শীর্ষ বৈঠকের পরে পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করার কথা সরকারি ভাবে জানাল আমেরিকা। ফলে সুইৎজারল্যান্ডের পরেই এনএসজি সদস্যপদের জন্য আরও একটি ভোট জোগাড় করতে পারলেন মোদী। এ ছাড়াও যৌথ বিবৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস দমনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাত মিলিয়ে চলার কথা বলেছে দু’দেশ। মোদী জানিয়েছেন, জি-২০ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর বৈঠকে ফের ওবামার সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।

নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই ওবামা প্রশাসনের গোধূলিবেলায় মোদীর লক্ষ্য বাণিজ্য এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু সুবিধে আদায় করে নেওয়া। প্রথম দিন কূটনৈতিক দৌত্যে ভারত অনেকটাই সফল বলে দাবি সাউথ ব্লক সূত্রের। কারণ অভিজাত আন্তর্জাতিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাব বা ‘এমটিসিআর’-এর সদস্য হতে চলেছে ভারত। দীর্ঘদিন চেষ্টা করার পরে আমেরিকা এই বিষয়ে পুরোপুরি ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এমটিসিআর-এ ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি করার শেষ তারিখ ছিল ৬ জুন। কিন্তু এ ব্যাপারে সদস্য দেশগুলি তাৎপর্যপূর্ণ নীরবতা পালন করায় স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের দরজা খুলে গেল। কূটনীতিকদের মতে, আমেরিকার সক্রিয়তাতেই এই ঘটনা সম্ভব হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মতৈক্য তৈরি হয়ে গেলেও এখনই কোনও ঘোষণা হবে না। আগামী নভেম্বরে এমটিসিআর-এর অধিবেশনে ভারতের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হবে।

নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে এটি নয়াদিল্লির কাছে একটি মাইলফলক। কারণ, এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ভারত চালকহীন ‘প্রিডেটর ড্রোন’ বিমানের মতো অস্ত্র কিনতে পারবে আমেরিকার কাছ থেকে। তালিবানের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকার ড্রোন ব্যবহার ইসলামি বেশ কিছু রাষ্ট্রের ভর্ৎসনা কুড়োলেও বিষয়টির দিকে নজর রেখে চলছিল সাউথ ব্লক। তবে শুধু অস্ত্র কেনাই নয়। এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় ভারত উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র রফতানি করতে পারবে বিভিন্ন দেশে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র’ তৈরি করা শুরু করেছে। সেই ক্ষেপণাস্ত্রও এ বার তৃতীয় দেশে বিক্রি করতে পারবে দিল্লি ও মস্কো। তবে এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কিছু নিয়ম মানতে হবে ভারতকে। তার অন্যতম হল, কোনও অবস্থাতেই ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে না।

এমটিসিআর-এর ৩৫তম সদস্য হওয়ার বিষয়টি পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-র সদস্য হওয়ার প্রশ্নেও ভারতের হাত অনেকটাই শক্ত করল বলেই মনে করা হচ্ছে। সাধারণ ভাবে পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করা দেশগুলিকেই এমটিসিআর-এর আওতায় আনা হয়। এ ক্ষেত্রে ওই চুক্তিতে সই না করেও ভারতের অন্তর্ভুক্তি পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধে নয়াদিল্লির ভূমিকাকেই আবার বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করল। আজ ওবামার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন মোদী। সেখানে এনএসজি নিয়ে আলোচনায় মোদী এ ব্যাপারে সুইস সমর্থনের বিষয়টিও ওবামাকে জানিয়েছেন। এর পরে মেক্সিকোয় গিয়েও এনএসজি নিয়ে দরবার করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ দিনই ভারতের এনএসজি সদস্যপদ নিয়ে ফের উল্টো সুর গেয়েছে চিন। এ নিয়ে গোষ্ঠীর ৪৮টি দেশই রাজি না হলে যে ভারতের আশা মিটবে না তা পরোক্ষে ফের মনে করিয়ে দিয়েছে বেজিং ।

ওবামার সঙ্গে বৈঠকে আরও যে বিষয়গুলি অগ্রাধিকার পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষার অন্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তর, অসামরিক পরমাণু চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন, পরিবেশ সংক্রান্ত চুক্তি। দু’দেশের মধ্যে এখনও পরমাণু ক্ষেত্রে কোনও বাণিজ্যিক চুক্তি হয়নি। মার্কিন পরমাণু চুল্লি প্রস্তুতকারক সংস্থা ওয়েস্টিংহাউস এবং ভারতের ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোঅপারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড’ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে ছ’টি চুল্লি গড়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হবে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে দু’দেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barack Obama Narendra Modi Nuclear power
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE