Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গুজরাতে হেফাজতে মৃত্যুর জের

থানায় পাথর বৃষ্টি, গুলিতে নিহত কৃষক

দাহোদ জেলার জেসবাড়া থানায় পুলিশি জেরার পরপরই এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার ভোরে। এতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা।

সংবাদ সংস্থা
দাহোদ (গুজরাত) শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

ভোটের বাজারে পুলিশের গুলিতে কৃষক-মৃত্যুর অভিযোগ উঠল নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে। যে ঘটনার সূত্রে তা ঘটেছে, তাতেও অভিযোগের আঙুল গুজরাত পুলিশের দিকে। যা নিয়ে বিজেপি ও রাজ্যের বিজয় রূপাণী সরকার খানিকটা হলেও অস্বস্তিতে।

দাহোদ জেলার জেসবাড়া থানায় পুলিশি জেরার পরপরই এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার ভোরে। এতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। আশপাশের গ্রামের শ’পাঁচেক মানুষ থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই ব্যক্তিকে পিটিয়েই মেরে ফেলেছে পুলিশ। দোষী পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় জনতা। কিন্তু তা নিয়ে টালবাহানা দেখে উগ্র হয়ে ওঠে থানা ঘিরে বিক্ষোভ। পুলিশ ও থানার দিকে পাথর ছুড়তে শুরু করে ক্ষিপ্ত জনতা। আগুন লাগিয়ে দেয় একটি পুলিশ ভ্যানে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রথমে ১০টি কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে। তাতে কাজ না হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের হঠাতে এ বার গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। অভিযোগ, এতেই মৃত্যু হয় রামসু মোহানিয়া নামে এক জনের। জখম হন দুই বিক্ষোভকারী ও ৮ জন পুলিশ।

বেসরকারি সূত্রের খবর, নিহত রামসু আদৌ বাকি গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন না বলে দাবি করেছেন তাঁর ভাই। তাঁর দাবি, ‘‘রামসু ভিড় থেকে ছুটে পালাচ্ছিলেন। এমন সময়ে পুলিশ তাঁর মাথায় গুলি করে।’’ পুলিশ অবশ্য এখনও বলতে রাজি নয় যে, উসর্ভ গ্রামের বাসিন্দা মানসু তাদের গুলিতেই মারা গিয়েছেন। তবু স্থানীয় স্তরের একটি অবঞ্ছিত ঘটনাকেই না এ বার হাতিয়ার করেন রাহুল ও তাঁর সাইবার বাহিনী, সেটাই ভাবাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। কারণ, বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী সরকারকে গরিব-কৃষকদের বিরোধী তকমা দিতে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে পুলিশের গুলিতে কৃষকদের মৃত্যুর পরে রাহুল গাঁধী উঠে পড়ে লেগেছিলেন কৃষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে। গুজরাতে ডিসেম্বরের ভোটের মুখে দাহোদের ঘটনা তাই মোটেই স্বস্তির নয় বিজেপির পক্ষে।

আরও পড়ুন: গুরুঙ্গের অস্ত্র কেরোসিন, বরুণের মৃত্যুও

এলাকাটি উপজাতি অধ্যুষিত। চাষবাসই পেশা বেশির ভাগের। বছর ৪৫-এর রামসুও ছিলেন কৃষক। সেটাও বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ভোটের মুখে। উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য জুড়ে যখন জোর তরজা বিজেপি-কংগ্রেসে, তারই মধ্যে গুজরাতে পুলিশের গুলিতে চাষির মৃত্যুর মতো ঘটনা গোটা দেশের নজর কেড়েছে সংবাদমাধ্যমের দৌলতে।

যদিও দাহোদের ঘটনার মূলে কৃষক বা কৃষি সংক্রান্ত কোনও বিষয় ছিল না। গোটা পর্বের সূত্রপাত এক ডাকাতকে ধরা নিয়ে। বেশ ক’টি ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত নরেশ গামারকে ধরতে জেসবাড়া থানার পুলিশ বুধবার শেষ রাতে চিলাকোটা গ্রামে গিয়েছিল। নরেশকে না পেয়ে তার দুই ভাই কনেশ ও রাজু গামারকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। কয়েক ঘণ্টা পরে কনেশকে বাড়িতে ফেরতও দিয়ে যায় তারা। এর কিছু ক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় কনেশের। বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, পুলিশের মারধরেই মারা গিয়েছেন তিনি। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দোষী পুলিশদের শাস্তি চাইতে থানায় যান গ্রামবাসীরা। কিন্তু থানার অফিসার নিয়মের কথা বলে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন ও দেহ নিয়ে আসতে বলেন। গ্রামবাসীরা তখন কনেশরের দেহ নিয়ে ফের যান থানায়। জেলার পুলিশ সুপার প্রেম সিংহ জানাচ্ছেন, এই সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কিছু লোক পাথর ছুড়তে শুরু করে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE