অমিত শাহের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার করে বিজেপি আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা তুলতে চাইছে বলে বিরোধী শিবির মনে করছে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে গত কাল বৈঠকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এই নিয়োগ পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই আপত্তি সত্ত্বেও গভীর রাতেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস জ্ঞানেশ কুমারকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আজ রাহুল একে ‘প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অসম্মানজনক ও অসৌজন্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এই নিয়োগের আইন ও তার নিয়োগ কমিটির গঠন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির ৪৮ ঘণ্টা আগে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত। লোকসভার বিরোধী দলনেতা গত কাল তাঁর আপত্তি জানিয়ে বৈঠকে যে ‘ডিসেন্ট নোট’ দিয়েছিলেন, তা আজ তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে পরিবর্তন করে মোদী সরকার আগেই বিনা বাধায় নিজের পছন্দের লোককে কমিশনে বসানোর বন্দোবস্ত করেছিল। এ বার শাহ একেবার নিজের আস্থাভাজনকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার করেছেন। কারণ জ্ঞানেশ কুমার শাহের সমবায় মন্ত্রকের সচিব হিসেবেই অবসর নিয়েছেন। তার আগে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চ পদে ছিলেন। সে সময়ে কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ থেকে রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। তৃণমূলের অভিযোগ, শাহ নিজের লোককে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার করে আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা তুলতে চাইছেন। আজ তৃণমূলের সাংসদ সাকেত গোখলের কটাক্ষ, অমিত শাহ কার্যত নিজেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হয়ে গিয়েছেন। এর পরে কমিশনকে বিজেপির শাখায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্য সফল হবে। তবে বিজেপি ২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গে সফল হতে পারবে না।
আগামী ২৬ জানুয়ারি ২০২৯ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন জ্ঞানেশ। তাঁর সময়কালে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছাড়াও ২২টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। চলতি বছরের শেষে জ্ঞানেশের তত্ত্বাবধানে প্রথম বিহারের ভোট হবে। তার পরে আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অসমের মতো রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন।
মোদী সরকার ২০২৩-এ নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন চালু করে বাছাই কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে এসেছিল। তিন সদস্যের কমিটিতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বাদে বাকি দু’জন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—সরকারের লোক হওয়ায় রাহুল তা নিয়ে গত কালের বৈঠকে প্রতিবাদ করেছিলেন। এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছে, আজ তার শুনানি হওয়ার কথা। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আজ বিচারপতি সূর্য কান্তের কাছে আর্জি জানান, এই মামলার যাতে গোড়ার দিকেই শুনানি হয়। কারণ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য এই মামলা প্রচণ্ড জরুরি। সরকার সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় নিয়ে প্রহসন করছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত অবশ্য গোড়ার দিকে শুনানি হবে বলে কোনও নির্দেশ জারি করেননি। তবে জানিয়েছেন, নতুন মামলা ও জরুরি মামলার শুনানি শেষ হলে এই মামলা শোনা হবে।
অন্য দিকে, সদ্য প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার নির্বাচনে হারের পরে বিরোধীরা কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলছেন বলে সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা নির্বাচনী ফল মেনে নিতে পারেন না তাঁরা কমিশনকে অন্যায় ভাবে আক্রমণ করেন। নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সরকারি অফিসারদের আক্রমণ করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। ধরে নেওয়া হয় নির্বাচন কমিশন হল বলির পাঁঠা এবং তাকে আক্রমণ শানানো যাবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)