Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Organ Donation

দু’জনের মৃত্যু, প্রাণ বাঁচল ৭ জনের! অঙ্গদানে নজির গড়ল দিল্লির এমস হাসপাতাল

মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭ জন রোগীর শরীরে হৃদ্‌যন্ত্র, বৃক্ক এবং যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়। কর্নিয়াগুলি এই মুহূর্তে দান করা যায়নি, সেগুলি এমসের আরপি সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

Organs of 2 brain dead patients save life of 7 people

মায়া ও বাচ্চু। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৭
Share: Save:

মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল আগেই। শুধু কোনও মতে টিমটিম করে জ্বলছিল প্রাণপ্রদীপটুকু। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘ব্রেন ডেথ’। তাঁদের পরিবারের সম্মতি এবং সহায়তায় দুই ‘মৃত’-ব্যক্তির শরীর থেকে একাধিক অঙ্গদান করা হল, যাতে প্রাণ বাঁচল ৭ জনের!

দিল্লির এমস হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে অঙ্গদানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উভয় পরিবারের তরফে অনুমোদন পাওয়ার পর চিকিৎসকরা দু’জনের শরীর থেকে একটি হৃদ্‌যন্ত্র, চারটি বৃক্ক, দু’টি যকৃৎ এবং চারটি কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭ জন রোগীর শরীরে এই অঙ্গগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়। কর্নিয়াগুলি এই মুহূর্তে দান করা যায়নি, সেগুলি এমসের আরপি সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, রাজস্থানের ভরতপুরের বাসিন্দা বাচ্চু নামে ৫১ বছর বয়সি এক ব্যক্তি গত ১২ জানুয়ারি হরিয়ানার পালওয়ালে রেল স্টেশনে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাঁকে জয়প্রকাশ নারায়ণ অ্যাপেক্স ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। গত ২৪ জানুয়ারি বাচ্চুকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়। বাচ্চু পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও দুই নাবালক পুত্র-কন্যা রয়েছে।

ফরিদাবাদের বাসিন্দা মায়া নামে আর এক মহিলা গত ২৩ জানুয়ারি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক জখম হন। পরিবারের লোকজন ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করেন তাঁকে। ২৫ জানুয়ারি মহিলাকে ‘ব্রেন ডেড’ বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মায়ার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি ধার্মিক মহিলা ছিলেন। সব সময় মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতেন। তাই ব্রেন ডেথের পর পরিবারের সদস্যরা মায়ার অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেন।

মায়া এবং বাচ্চুর মৃত্যুর পর জাতীয় অঙ্গ এবং টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন-এর মাধ্যমে সমস্ত অঙ্গ বরাদ্দ করা হয় গ্রহীতাদের। একটি লিভার এবং একটি কিডনি দিল্লির এএইচআরআর হাসপাতালে, একটি কিডনি সফদরজং হাসপাতালের গ্রহীতাদের দেওয়া হয়। বাকি হার্ট, লিভার এবং দু’টি কিডনিগুলি দিল্লির এমস হাসপাতালের কয়েক জন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। মায়ার ত্বকও সংগ্রহ করা হয়েছে, যা এমসের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সেন্টারের সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্কিন ব্যাঙ্কে সংরক্ষিত রয়েছে।

এমসের অর্গান রিট্রিভাল ব্যাঙ্কিং অর্গানাইজেশনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা আরতি ভিজ মায়া এবং বাচ্চুর পরিবারের এই নিঃস্বার্থ সিদ্ধান্তের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাউন্সেলিং, ব্রেন ডেথ শংসাপত্র, ডোনার অর্গ্যান ম্যানেজমেন্ট দল, চিকিত্সক, ট্রান্সপ্লান্ট কোঅর্ডিনেটর, কাউন্সেলর, নিউরোসার্জন, অ্যানাস্থেটিস্ট, ট্রান্সপ্লান্ট টিম, প্রশাসক এবং ফরেনসিক বিভাগের সমন্বয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে।

অঙ্গদান এবং প্রতিস্থাপনের সংখ্যার নিরিখে দিল্লির এমস হাসপাতালের সুনাম রয়েছে। ২০২৩ সালে সেখানে ১৪টি অঙ্গদান করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organ Donation Delhi AIIMS Brain Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE