Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সীমান্ত পেরিয়ে মায়ের কাছে পৌঁছবে রমজান?

মায়ের সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর পর কথা হল ছেলে রমজানের। মা পাকিস্তানে থাকেন। আর গত আড়াই বছর ছেলের ঠিকানা সীমান্তের এ পারে ভোপালের একটি হোম। কিন্তু, সীমান্ত পেরিয়ে ফের দু’জনের দেখা হবে তো? ফের একসঙ্গে থাকতে পারবেন তো তারা?

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:১১
Share: Save:

মায়ের সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর পর কথা হল ছেলে রমজানের। মা পাকিস্তানে থাকেন। আর গত আড়াই বছর ছেলের ঠিকানা সীমান্তের এ পারে ভোপালের একটি হোম। কিন্তু, সীমান্ত পেরিয়ে ফের দু’জনের দেখা হবে তো? ফের একসঙ্গে থাকতে পারবেন তো তারা? প্রশ্ন তো আছেই। কিন্তু, পাশাপাশি তীব্র আশায় বুক বেঁধেছে সীমান্তের দু’পারে থাকা মা ও ছেলে।

বিচ্ছেদের শুরু পাঁচ বছর আগে। বাবা মহম্মদ কাজলের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল ১০ বছরের রমজান। দেশ ছেড়ে কাজল পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলাদেশে। সেখানে গিয়ে একটি বিয়ে করেন তিনি। আর সেই সময় থেকেই দুর্ভোগের শুরু রমজানের। সত্ মা মোটেও যত্নআত্তি করতেন না। উল্টে প্রতিদিন তাঁর গঞ্জনাই জুটত ছোট্ট রমজানের। বিধ্বস্ত কিশোর এর পর ঘর ছাড়ার কথা ভাবতে শুরু করে। সে কথা তার বন্ধুদের বলতেই সুরাহার রাস্তা বেরোয় একটা। কী সেই রাস্তা? বন্ধুরা পরামর্শ দেয়, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে ভারতে ঢুকতে হবে রমজানকে। তার পর সেখান থেকে কোনও ভাবে ফের চোরা পথে যেতে হবে পাকিস্তান। আর তাতেই কেল্লা ফতে।

বন্ধুদের দেখানো পথে নেমে পড়ে কিশোর। সেটা বছর তিনেক আগের কথা। চোরা পথে সে পেরিয়ে আসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। কিন্তু এ দেশে পা দিয়ে সে ভাবতে থাকে কোথায় যাবে? একেবারে পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম সীমান্ত পেরিয়ে কী ভাবে পৌঁছবে সে তার মায়ের দেশে? যেটা আসলে জন্মসূত্রে তারই দেশ! ভাবনা নিয়ে পথচলা শুরু হয় ফের। কিশোর মনে কোনও ভাবে ছোটবেলায় বইয়ে পড়া ও দেখা ট্রেন ঢুকে যায়। ট্রেনকেই সে বেছে নেয় বাড়ি ফেরার মাধ্যম হিসেবে। এর পর একের পর এক ট্রেন পাল্টে সে রাঁচি, দিল্লি, মুম্বই-সহ নানা শহর পেরোয়। কিন্তু, দেশে ফেরার রাস্তা খুঁজে পায় না!

অবশেষে রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় বছর বারোর রমজান। সেটা ২০১৩-র অক্টোবর মাস। পুলিশের হাত ঘুরে আদালত হয়ে সে পৌঁছয় ভোপালেরই একটি হোমে। আর এখানেই ভাগ্য খুলে যায় ছোট্ট রমজানের। কারণ, এই হোমেই তার সঙ্গে চাটার্ড অ্যাকাউন্টস-এর ছাত্র বছর কুড়ির হামজা বসিতের পরিচয় হয়। আর গোটা ঘটনাটা মোড় নেয় সিনেমার আদলে। বসিত রমজানের কাছে হয়ে ওঠে সিনেমার সলমন খান— বজরঙ্গি ভাইজান।

কী ভাবে?

বসিত প্রথমে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে রমজানের ছবি আপলোড করে গোটা ঘটনাটা লেখেন। সেখান থেকেই এ দেশের সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরোয়। সেই খবরের কাটিং ফের ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। কোনও ভাবে সেই খবরটি নজরে পড়ে পাকিস্তানের এক সাংবাদিক সৈয়দ তালিম রসুলের। তিনি হোয়াটস্‌অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন বসিতের সঙ্গে। দু’জনের কথা হয়। রমজানের সঙ্গে কথা বলে বসিত জানতে পেরেছিলেন, ওই কিশোরের বাড়ি করাচির কাছে মুসা কলোনিতে। সে কথা রসুলকে জানান বসিত। এর পর রসুল ইউনিসেফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যৌথ উদ্যোগে মুসা কলোনিতে রমজানের ছবি-সহ পোস্টার সাঁটানো হয়। আর এর পরেই ঘটনায় ফের টুইস্ট আসে।

কলোনির দেওয়ালে দেওয়ালে সেই পোস্টার নজরে আসে রমজানের মা বেগম রাজিয়ার এ পক্ষের স্বামীর। তিনি রমজানের ছবিওয়ালা একটা পোস্টার স্ত্রীকে দেখান। আর তাতেই ভেঙে পড়েন রাজিয়া। এতো তাঁরই ছেলে রমজান! কোথায় আছে সে? এর পরই তাঁরা যোগাযোগ করেন রসুলের সঙ্গে। যে বাড়িতে রাজিয়া পরিচারিকার কাজ করেন, রসুলের সহযোগিতায় সেখান থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হয় বসিতের সঙ্গে। মা ও ছেলের মধ্যে কথা হয়। পাঁচ বছর পর!

দু’জনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। রমজানের কথায়, ‘‘মা জানতই না, আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আছি। কাঁদতে কাঁদতে আমার কথা জিজ্ঞেস করে। কেমন আছি? কী খাচ্ছি?— এই সব। আমি বলি, ভাল আছি। ডাল, সব্জি খেতে দেয় এরা।’’ শুনে কান্নায় ডুবে যাওয়া রাজিয়া ছেলেকে বলেন, ‘‘তুই ওখান থেকে কোথাও যাস না। আমি তোকে নিয়ে আসব ওখান থেকে। আর বাড়িতে আসলেই বিরিয়ানি খাওয়াব।’’ হাসি ফোটে দু’জনের মুখে।

এর পর গত তিন দিন ধরে মা-ছেলের রোজ কথা হচ্ছে। আর চেষ্টা চলছে কী ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে রমজানকে তাঁর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া যায়। এ পারে উদ্যোগী সেই বসিত ভাইজান, আর ও পারে রসুল। বিদেশ মন্ত্রককে জানানোর পাশাপাশি সব রকম চেষ্টাই করা হচ্ছে।

কিন্তু, সীমান্তের বেড়া পেরিয়ে মায়ের কাছে পৌঁছতে পারবে তো ১৫ বছরের রমজান? বজরঙ্গি ভাইজান কি বাস্তবের মুখ দেখবে? প্রশ্নটা ঘুরছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ramzan pak boy ramzan india mohammed kajol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE