Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জামিন কেন সমঝোতা হানায় ধৃতের, পাল্টা চাপ পাকিস্তানের

দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বৈঠকের আগে ভারতকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিল পাকিস্তান। নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, হাফিজ সইদের মতো মুম্বই হানার চক্রীরা পাকিস্তানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উস্কানি দিয়ে চলেছে ভারতের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বৈঠকের আগে ভারতকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিল পাকিস্তান। নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, হাফিজ সইদের মতো মুম্বই হানার চক্রীরা পাকিস্তানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উস্কানি দিয়ে চলেছে ভারতের বিরুদ্ধে। মুম্বই হামলার চক্রীদের বিচারের ব্যাপারে আদৌ আন্তরিক নয় ইসলামাবাদ। এরই পাল্টা পাকিস্তান এখন খুঁচিয়ে তুলছে ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ। ওই ঘটনায় ধৃত ও অভিযুক্ত অসীমানন্দের জামিনের বিরোধিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। পাক প্রশাসন এই নিয়ে সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে সরকারি ভাবে ক্ষোভ জানিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, ওই হামলায় একাধিক পাক নাগরিক প্রাণ হারানো সত্ত্বেও ভারত কেন অন্যতম অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভারত ২৩ অগস্ট জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন, অনুপ্রবেশ ও জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ তুলবেই। বিশেষ করে গুরদাসপুরে হামলা ও পাক জঙ্গি নাভেদের ধরা পড়ার মতো টাটকা ঘটনা নিয়ে ভারত যে চাপ বাড়াবে, পাকিস্তানের কাছে সেটা স্পষ্টই। তারাও হাওয়া গরম করে রাখতে চাপ তৈরির এই পাল্টা কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে দিল্লি। বালুচিস্তানে জঙ্গি হামলার পিছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ তুলছে পাকিস্তান। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গের সঙ্গে অসীমানন্দের বিষয়টি নিয়েও সরব হতে পারে পাকিস্তান।

ভারত যতই সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ তুলুক, কাশ্মীরবাসীর ‘পাশে থাকা’র ঘোষণা করাটা পাকিস্তান রুটিনের ‘কাজ’। প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবসে এ কথা জোর গলায় বলে থাকে পাকিস্তান। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইসলামাবাদ থেকে তো বটেই, আজ দিল্লিতে বসেই পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত আজ দফায় দফায় সরব হয়েছেন কাশ্মীর নিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে কোনও ভাবেই অবহেলা করা যায় না। ওই ন্যায্য সংগ্রামের জন্য যতই সময় লাগুক, পাকিস্তান কাশ্মীরের মানুষের পাশেই থাকবে। কোনও ভাবেই হাল ছাড়বে না পাকিস্তান।’’

সাউথ ব্লক মনে করছে, দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে বার্তা দিতেই এ ভাবে মুখ খুলেছেন বাসিত। পাক সেনা, সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বা মোল্লাতন্ত্র বরাবরই স্বাধীন কাশ্মীরের পক্ষে। নওয়াজ শরিফ সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইলেও, বিচ্ছিন্নতাবাদী ওই শক্তিগুলিকে অবহেলা করাও সম্ভব নয় নওয়াজের পক্ষে। সাউথ ব্লক মনে করছে, বাসিতের মুখে আজ কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এ কারণেই।

স্বাধীনতা দিবসে বা তার আগে-পরে জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় প্রতি বছরই সতর্ক থাকতে হয় ভারতকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এ বারে আমরা বেশ চিন্তায় রয়েছি। জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাবের রাস্তায় বেশ কিছু জঙ্গি ভারতে ঢুকেছে বলেই খবর। এবং তাদের সংখ্যাটা কম নয়।’’ গোটা দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও ব্যক্তির উপর হামলা রুখতে বাহিনীগুলিকে বিশেষ সতর্ক রাখা হয়েছে। এ বছর বাড়তি আশঙ্কা বিমান ছিনতাইয়ের। যে কারণে, লালকেল্লার চত্বরে ইতিমধ্যেই বসেছে বিমান-বিধ্বংসী কামান। ড্রোন উড়তে শুরু করেছে আজ থেকেই। কাল সকাল থেকেই লালকেল্লার আকাশে চক্কর কাটবে তিনটি হেলিকপ্টার। আজই দিল্লির অধিকাংশ সরকারি ভবনের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে আধাসেনা। শুধু রাজধানীতেই মোতায়েন হয়েছে ৪০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী। সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রীতিমতো দুর্গের চেহারা নিয়েছে লালকেল্লা। আগামী কাল ভোর ৫টা থেকে বন্ধ থাকবে লালকেল্লার আশপাশের সব রাস্তা। সুরক্ষিত এলাকায় কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতায় আসার পরে গত ১৫ আগস্ট বুলেটপ্রুফ কাচের ঘেরাটোপ ছাড়াই প্রথম বার লালকেল্লা থেকে বক্তৃতা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বছর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা চাইছেন, কাচের ঘেরাটোপে থেকেই বক্তব্য রাখুন প্রধানমন্ত্রী।

জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় সব রাজ্যকেও বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্র। আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) বিভিন্ন সরকারি ভবন, মেট্রো স্টেশন, নৌবাহিনীর দফতরে হামলার ছক কষায় বিশেষ ভাবে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হামলার তালিকায় রয়েছে বিজেপির সদর দফতরও। এ ছাড়া মাওবাদী হামলার আশঙ্কা থাকায় আলাদা করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE