Advertisement
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লঞ্চপ্যাডে সীমান্ত পেরনোর অপেক্ষায় ৩০০ জঙ্গি, পুঞ্চে শহিদ ২ জওয়ান

এক-দু’ডজন নয়। প্রায় তিনশো জঙ্গি এই মুহূর্তে সক্রিয় রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে লঞ্চপ্যাডে ওত পেতে রয়েছে আরও শ’তিনেক পাক জঙ্গি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

এক-দু’ডজন নয়। প্রায় তিনশো জঙ্গি এই মুহূর্তে সক্রিয় রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে লঞ্চপ্যাডে ওত পেতে রয়েছে আরও শ’তিনেক পাক জঙ্গি। ভূস্বর্গের গিরিপথগুলি তুষারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে হাতে অন্তত ৩-৪ সপ্তাহ। তার মধ্যেই লঞ্চপ্যাড থেকে যত বেশি সম্ভব জঙ্গিদের ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে পাক সেনা ও রেঞ্জাররা। সেই লক্ষ্যেই আজ দিনভর পুঞ্চের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পার থেকে গোলাগুলি চালিয়েছে তারা। জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখতে গিয়ে পাক গুলিতে দু’জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন জন নাগরিকও। সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ উপত্যকার সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা।

পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণা ঘাঁটি ও পুঞ্চ সেক্টরে আজ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় জঙ্গিরা। কৃষ্ণা ঘাঁটি এলাকায় ভারতীয় সেনা জঙ্গিদের আটকে দিলেও, পাক গুলিতে এক সেনার মৃত্যু হয়। পুঞ্চ সেক্টরেও পাক সেনার গুলিতে মারা যান এক জওয়ান। সেনার দাবি, দু’টি ক্ষেত্রেই ‘কভার ফায়ার’ করে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছিল পাক সেনা ও রেঞ্জাররা। পাল্টা গুলিতে ও-পারে একাধিক পাক সেনা চৌকি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। ফের দুই জওয়ান শহিদ হওয়ায় ক্রুদ্ধ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ ইসলামাবাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘চোখে চোখ রেখে লড়ে দেখো। আমরাই জয়ী হব।’’ এ দিন ফের তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের যে কোনও ধরনের হামলার কড়া জবাব দেওয়ার জন্য ভারত প্রস্তুত রয়েছে।’’

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বদলা নিতে এমনিতেই মুখিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা। চলতি মাসেই অবসর নেওয়ার কথা তাঁর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, যাওয়ার আগে কাশ্মীরে বড় মাপের নাশকতা ঘটিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ‘কলঙ্ক’ মুছতে চান রাহিল। মন্ত্রকের আর একটি আশঙ্কা, বড় নাশকতা ঘটিয়ে সেনাপ্রধানের পদে নিজের মেয়াদ বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে রাহিলের। ফলে আগামী একটা মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেহবুবা সরকারের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি উপত্যকায় জঙ্গি গতিবিধি রুখতে অবিলম্বে কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথ ভাবে রণকৌশল তৈরি করতে চান।

হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই কাশ্মীর জুড়ে চলছে অশান্তি। লাটে ওঠার জোগাড় ব্যবসা-বাণিজ্য-পড়াশোনা। চলতি এই অশান্তির সুযোগ নিয়েই যে পাকিস্তান এ দেশে জঙ্গি ঢোকাচ্ছে, মেহবুবাকে এ ব্যাপারে একাধিক বারই সতর্ক করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। আজ রাজ্য পুলিশের ডিজি কে রাজেন্দ্র প্রশাসনের এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে মেহবুবাকে জানান, এই মুহূর্তে বিভিন্ন দলের আড়াইশো থেকে তিনশো জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে উপত্যকায়। বরফে পথ বন্ধ হওয়ার আগে আরও শ’তিনেক জঙ্গি ঢুকিয়ে দিতে চাইছে পাকিস্তান। তাদের ছক এক বার যদি সফল হয়, তা হলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। সূত্রের খবর, অবিলম্বে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা, সেনা ও রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে বৈঠক করে আগামী দু’-তিন মাসের জন্য একটি সার্বিক পরিকল্পনা করে এগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অনুপ্রবেশ প্রশ্নে রাজ্য পুলিশের ডিজির আশঙ্কা সত্যি বলে মেনে নিচ্ছে সেনাবাহিনীও। তারাও মনে করছে, নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে বিভিন্ন লঞ্চপ্যাডে ফের অন্তত তিন-চারশো জঙ্গি জড়ো হয়েছে। লক্ষ্য, ভাল ভাবে শীত পড়ার আগে ভারতে ঢুকে পড়া। সেই লক্ষ্যপূরণেই পাক সেনা এ ভাবে মরিয়া হয়ে গুলি চালাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারত কি ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো কোনও পদক্ষেপ করবে? সেই সম্ভাবনা খোলা রেখেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ এ দিন বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে যে, আমাদের উঠোনেই শুধু নয়, আমরা ওদের ঘরে ঢুকেও লড়াই করে হারিয়ে দিতে পারি।’’

বুরহানের মৃত্যুর পর থেকে অন্তত ৩১টি স্কুল পোড়ানো হয়েছে কাশ্মীরে। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করায় উপত্যকাতেই কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিচ্ছিন্নতাকামী হুরিয়ত নেতারা। টানা বন্‌ধে পরিবহণ ও অন্য ব্যবসার ক্ষতি নিয়েও চাপ আসছিল। এই অবস্থায় কৌশল কিছুটা বদলাতে চাইছেন হুরিয়ত নেতারা। মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে তাঁরা এখন শিক্ষা, পরিবহণ ও ব্যবসাকে বন্‌ধের আওতার বাইরে রাখার কথা বলছেন। মিরওয়াইজ উমর ফারুক ও ইয়াসিন মালিক আজ সৈয়দ আলি শাহ গিলানির হায়দারপুরার বাড়িতে গিয়ে টানা ৩ ঘণ্টা কথা বলেন এ নিয়ে। স্থির হয়েছে পরশু সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে ফের বৈঠক হবে। অন্তত এক বছর শিক্ষা, পরিবহণ ও ব্যবসাকে বন্‌ধের আওতার বাইরে রাখা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ওই বৈঠকে।

দেরিতে হলেও গিলানিদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। চাপের মুখে গত ২ তারিখও বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেছিলেন এই হুরিয়ত নেতারা। প্রশাসনের বাধায় সে বৈঠক হতে পারেনি। আজ অবশ্য বাধা দেওয়া হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

2 soldiers martyr Pakistan ceasefire infiltration Poonch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy