Advertisement
১৮ মে ২০২৪
মার খেলেন কানহাইয়া

ফের রণক্ষেত্র কোর্ট চত্বর, বিড়ম্বনা বাড়ছে বিজেপির

কোর্ট চত্বরে কানহাইয়া কুমার।আদালতে পেশ হওয়া কানহাইয়ার আর্জি। হাতে তেরঙ্গা। মুহূর্মুহূ ‘বন্দেমাতরম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান। এক ঝলকে মনে হতে পারে রাজনৈতিক প্রচারসভা।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

কোর্ট চত্বরে কানহাইয়া কুমার।আদালতে পেশ হওয়া কানহাইয়ার আর্জি।

হাতে তেরঙ্গা। মুহূর্মুহূ ‘বন্দেমাতরম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান। এক ঝলকে মনে হতে পারে রাজনৈতিক প্রচারসভা। কিন্তু জায়গাটা ঠাহর করলে আর ভিড়ের পোশাকআশাক দেখলে বোঝা যায় এটা আদালত চত্বর।

জেএনইউ থেকে ধৃত ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের আসার জন্য যেটুকু অপেক্ষা। পুলিশ তাঁকে নিয়ে ঢোকামাত্র ওখানেই যেন নিকেশ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল উন্মত্ত ভিড়টা। মুখে স্লোগান, ‘গোলি মার দো’। ‘খতম কর দো’। তেরঙ্গার লাঠি হাতিয়ার হয়ে উঠে এসেছে হাতে। পাথর ছুটে আসছে মিসাইলের মতো।

বুধবার দুপুরে কার্যত সোমবারের অ্যাকশন রিপ্লে-র সাক্ষী থাকল পাটিয়ালা কোর্ট। যদিও সোমবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই জন্য আজ আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, শুনানির সময় সরকারি উকিল ছাড়াও কানহাইয়ার উকিল, তাঁর পরিবারের দু’জন, জেএনইউয়ের এক জন ছাত্র ও শিক্ষক প্রতিনিধি এবং পাঁচ জন সাংবাদিক উপস্থিত থাকতে পারবেন। পুলিশি বন্দোবস্তও কম ছিল না। কিন্তু তার পরেও যে ভাবে রণাঙ্গনের চেহারা নিল কোর্ট চত্বর, সেটা দেখে শিউরে উঠেছে শীর্ষ আদালত। দিল্লি পুলিশ কমিশনারকে তাঁর দফতরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে শুক্রবারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

গত সোমবার আদালত চত্বরে মার খাওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। সেই কারণে আজ কপিল সিব্বল, দুষ্মন্ত দুবে, রাজীব ধবনের মতো ছয় জন বর্ষীয়ান আইনজীবীকে পর্যবেক্ষক করেও পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাঁদের সামনেই আজ কানহাইয়ার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন একদল আইনজীবী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, কানহাইয়ার মুখ লক্ষ্য করে ঘুষি মারা হয়। পাথর ছোড়া হয় মাথা লক্ষ্য করে। তাঁকে লাথি মারার চেষ্টা করেন অনেকে। মার খান বেশ কিছু সাংবাদিক। ভেঙে দেওয়া হয় ক্যামেরা।

বাদ যাননি পর্যবেক্ষকরাও। শীর্ষ আদালতকে রাজীবরা জানিয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য করেও ফুলের টব, পাথর ছোড়া হয়। তাঁদের পাকিস্তানের চর বলে গালাগালি দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছে, পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কী কারণে কানহাইয়া ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসন। কানহাইয়া নিজে আদালতে জানিয়েছেন, তাঁকে মারধর করা হয়। তবে ভিড়টা যতটা মারমুখী ছিল, তাতে আরও বড় বিপদ হতে পারত। তার হাত থেকে অবশ্য পুলিশ তাঁকে বাঁচিয়েছে বলে জানান তিনি।

সোমবারের ঘটনায় বিক্রম চৌহান নামে এক আইনজীবীর দিকে আঙুল উঠেছিল। সূত্রের খবর, এ দিনও সংঘর্ষের পিছনে রয়েছেন বিক্রমই। তিনি আদালত চত্বরে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁর সঙ্গে বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতার ছবি সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে।

পরপর এই রকম প্রকাশ্য মারপিটের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্ট নড়েচড়ে বসায় সরকারের উপরে চাপ বেড়েছে। এমনিতে জেএনইউ নিয়ে কড়া অবস্থান এবং চড়া সুরের প্রচারে আমজনতার মনে প্রভাব বিস্তার করার কৌশল নিয়ে বিজেপি এগোচ্ছিল। কিন্তু নাগরিক সমাজের শিক্ষিত অংশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে যে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে, সেটা নিয়েও সতর্ক থাকতে হচ্ছে তাঁদের। আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মিডিয়াকে আক্রমণের কড়া নিন্দা করেছেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এ কথাও বলেছেন যে, ‘‘জেএনইউ-এর মতো প্রতিষ্ঠানে একটি বিকল্প কণ্ঠস্বর আছে। সেটাও মন দিয়ে শোনা উচিত।’’ সর্বোপরি সরকার ভিতরে ভিতরে স্বীকার করছে, কানহাইয়ার ব্যাপারে একটু বাড়াবাড়ি করা হয়েছে।

দিল্লি পুলিশ যে ভাবে তড়িঘড়ি কানহাইয়ার নামে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। গোয়েন্দারা জেনেছেন, সে দিন ভারত-বিরোধী স্লোগানের পিছনে মূলত বহিরাগতরা ছিল। ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস ইউনিয়নের নেতা উমর খালিদ তাদের নিয়ে এসেছিল। কানহাইয়া ঘটনাস্থলে থাকলেও আপত্তিকর স্লোগান দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ না আনলেও চলত বলেই মত মন্ত্রকের। সেই মনোভাব আজ জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ কমিশনার বাসসিকেও। বিকেল থেকে সুর নরম করতে শুরু করেন বাসসি। এ দিন গোড়ায় বলছিলেন, কানহাইয়ার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ হাতে আছে। পরে তিনিই বলেন, কানহাইয়া জামিনের আবেদন করলে বিরোধিতা করবে না দিল্লি পুলিশ। কানহাইয়া যে আজ আক্রান্ত হয়েছেন, সেটাও স্বীকার করতে চাননি তিনি। পাটিয়ালা কোর্ট ২ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কানহাইয়াকে।

এই অবসরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব নিজেদের হাতে চেয়ে ফের সওয়াল করেন। কেজরী টুইট করেন, ‘‘দিল্লির আইন-শৃঙ্খলার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। আমি খুব দ্রুত এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলব।’’ প্রসঙ্গত এ মাসের শেষে অবসর নেওয়ার কথা বাসসি-র। তাঁকে তথ্য কমিশনার করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। কমিশনার পদে আসতে পারেন অলোক বর্মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kanhaiyakumar patialahousecourt lawyer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE