Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
Odisha Triple Train Accident

‘আমার ভাইকে দেখেছেন কেউ?’ ফোটো হাতে হাসপাতালে দাদা, ছবির সঙ্গে মিলছে না!

বাবু, রাকেশের থেকে কিছুটা হলেও ভাগ্যবান দিলীপ কুমার। বিহার থেকে এসেছিলেন ভগ্নিপতির খোঁজে। এসে জানতে পারেন, হাসপাতালেই চিকিৎসা হচ্ছে তাঁর।

image of train accident

ভুবনেশ্বরের একটি হাসপাতাল থেকে বার করে আনা হচ্ছে বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের কফিনবন্দি দেহ। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ ১৬:২০
Share: Save:

হাসপাতালের করিডরে হন্যে হয়ে ঘুরে চলেছেন বাবু সাহেব। কর্মীদের কাছে হাতজোড় করে বার বার অনুরোধ করে চলেছেন। হাতে ছোট ভাইয়ের ছবি। শুক্রবার বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ভাই। বিহার থেকে সেই ভাইয়েরই দেহ নিতে এসেছেন ভুবনেশ্বর এমসে। কিন্তু এখনও দেহ মেলেনি। কারণ, পচাগলা দেহের ছবি দেখে নিজের ভাইকে তার মধ্যে থেকে শনাক্তই করতে পারেননি বাবু। বাবু একা নন। এটাই এখন ছবি ভুবনেশ্বর এমসের।

শুক্রবারের দুর্ঘটনায় ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। ভারতীয় রেলের তরফে জানানো হয়েছে ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওড়িশা সরকারের শেষ প্রকাশিত তথ্য বলছে, এখনও ১৮২টি দেহ শনাক্ত করা যায়নি। রবিবার ১১০টি দেহ ভুবনেশ্বরের এমসে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি দেহ আর্মি হাসপাতাল, ক্যাপিটাল হাসপাতাল, সাম হাসপাতাল-সহ অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শনাক্তকরণের জন্য সেখানে কয়েক দিন রাখা থাকবে দেহগুলি। যদিও সেই শনাক্তকরণ পরিজনের কাছে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ কোনও দেহে মাথা নেই, কোনওটির মুখ থেঁতলে গিয়েছে বা পুড়ে গিয়েছে। পচনের কারণে প্রায় কোনও দেহ আর অক্ষত নেই।

মৃতদেহ শনাক্তকরণের একটি ব্যবস্থা রবিবার সকাল থেকে করেছে ওড়িশা প্রশাসন। মৃতদেহের ছবি তুলে, সেগুলিকে এক একটি নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে সেই সব ছবি। হাসপাতাল এবং থানায় এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেহ দেখে চিহ্নিত করতে পারলে তখনই তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে ওড়িশা প্রশাসন। প্রজেক্টরে সেই ছবি দেখে শনাক্ত করতে কালঘাম ছুটছে পরিজনের।

বিহার থেকে ভুবনেশ্বর এমসে ভাইয়ের দেহ নিতে আসা বাবুর কথায়, ‘‘হাসপাতালেই রয়েছে দেহ, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না।’’ হাতের ছবির সঙ্গে প্রজেক্টরে দেখানো ছবি মেলাতে পারছেন না তিনি। একই অবস্থা রাকেশ কুমার যাদবেরও। তিনিও ভাইয়ের দেহের খোঁজে এসেছেন ভুবনেশ্বরের এমসে। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে বাবু, রাকেশের থেকে কিছুটা হলেও ভাগ্যবান দিলীপ কুমার। বিহারের পুর্নিয়া থেকে এসেছিলেন ভগ্নিপতির খোঁজে। এসে জানতে পারেন, হাসপাতালেই চিকিৎসা হচ্ছে তাঁর। এ বার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে দিলীপ।

শুক্রবার বালেশ্বরের বাহানগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এবং মালগাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। মালগাড়িকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেই অভিঘাতে লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে তার কয়েকটি কামরা। তখন উল্টো দিক থেকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেই কামরার ধাক্কা লাগে। ঘটনাস্থলে দলা পাকিয়ে যায় দু’টি ট্রেন। ক্রমেই লাইন মেরামতি করে সেখানে ট্রেন চালু করা হয়েছে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের আশা, বুধবার সকালের মধ্যে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE