যমুনায় জল ঘোলা। তাই তাতে আর ডুব দেওয়া আর হল না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। করা হল না ছট পুজোও।
মাস ঘুরলেই বিহারে নির্বাচন। তাই যমুনার জলে ডুব দিয়ে ছট উৎসবের শেষ সকালে, উদিত সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্তত বিজেপির তরফে ঘরোয়া ভাবে সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছিল। তা হলে সম্ভবত প্রথম বার ছট পুজোয় অংশ নিতেন মোদী। যার মূল লক্ষ্য হত, বিহারবাসীকে বার্তা দেওয়া: ‘আমি তোমাদেরই লোক’। সেই লক্ষ্যেই আজ শেষ দিনে উৎসবকে বাড়তি মাত্রা দিতে এবং বিহারে কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে ভোরবেলায় যমুনায় ডুব দিয়ে ছট পুজো করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন মোদী। ঠিক যে ভাবে এ বারে দুর্গাপুজোর সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের কথা মাথায় রেখে মহাষ্টমীর দিন দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের কালী মন্দির সোসাইটির পুজোয় আরতি করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীর ডুব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল নকল যমুনাও। দিল্লির ‘মজনু কি টিলা’র কাছে বাসুদেব ঘাটে যমুনা নদীর চড়ায় নদীপ্রবাহের সমান্তরালে পুকুর খুঁড়ে ফেলেছিল দিল্লি সরকার। যাকে তুলে ধরা হচ্ছিল (নকল) যমুনার প্রবাহ হিসাবে। যে জলাশয় পানীয় জল দিয়ে ভরা হয়েছিল। সে কথা গত কালই স্বীকার করে নেয় দিল্লির রেখা গুপ্তের সরকার। সেই স্বচ্ছ জলেই ডুব দেওয়ার কথা ছিল মোদীর। আম আদমি পার্টির নেতা সৌরভ ভরদ্বাজের কথায়, ‘‘স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল, স্বচ্ছ নকল স্থির যমুনার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে ঘোলা যমুনার দূষিত জল। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, আমজনতা পুজোর জন্য যমুনার ঘোলা জল, আর মোদীর জন্য পানীয় জলের পুকুর কেন! কেন যমুনা সাফাইয়ে ব্যর্থ দিল্লি সরকার?’’ সৌরভের দাবি, সাজানো যমুনার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসতেই যাবতীয় অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
একেবারে শেষ মুহূর্তে ওই অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় বিকল্প স্থান বাছার সুযোগ ছিল না প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কাছে। পরে আজ সকালে সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘ভগবান সুর্যের প্রাতঃকালীন অর্ঘ্যের মধ্য দিয়েই ছটের মহাপর্ব শুভ সমাপ্ত হল।...ছট মায়ের অসীম কৃপা আপনাদের জীবনকে আলোকিত করুক।’’ এ দিকে এ নিয়ে আজ কোনও মন্তব্য করতে চাননি দিল্লি বিজেপির নেতারা।
বিহারবাসীর সঙ্গে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একাত্মতার বার্তা দিতে গোড়া থেকেই ছট উৎসবকে হাতিয়ার করে এগিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। ছট উপলক্ষে বাড়তি ট্রেন চালানোর পাশাপাশি, ট্রেন ও স্টেশনে বাজানো হয়ে চলেছে ছটের গান। বিরোধীদের মতে, গত কাল ছটের মাধ্যমে বার্তা দিতে মাঠে নামানো হয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিসরে গত কাল অস্তগামী সূর্যের আরাধনা করেন রাষ্ট্রপতি। আজ সকালে শেষবেলায় বার্তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছিলেন মোদী। কিন্তু সৌরভের কথায়, ‘‘স্বচ্ছ যমুনার আশ্বাস দিয়ে ঘোলা যমুনায় মোদীকে এনে ফেলেন রেখা গুপ্তরা। মোদীর যাবতীয় উদ্যোগে চোনা ফেলে দেয় দিল্লিরই বিজেপি সরকার।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)