স্বাধীনতার পরে বহু দশক পেরিয়েও পাহাড়-ঘেরা মিজ়োরামে রেলপথ ছিল নামমাত্র। উত্তরে অসমের শিলচর থেকে মিজ়ো সীমানা লাগোয়া বৈরবি পর্যন্ত মিটার গেজ লাইনই ছিল একমাত্র রেলপথ। সেই লাইন ব্রড গেজে পরিবর্তন ছাড়াও মিজ়োরামের রাজধানী আইজ়ল লাগোয়া সৈরাং পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গৃহীত হয় ২০০০ সালে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া এবং ভূপ্রকৃতির মধ্যে কাজ এগোয়নি। সমীক্ষা-পর্ব মিটিয়ে পুরোনো মিটার গেজ লাইনের গেজ বদল করার কাজ শুরু করতেই ২০০৯ সাল গড়িয়ে যায়।
কাজে গতি আসে ২০১৪র পরে। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ প্রথম ৪২টি ওয়াগনের মালগাড়ি চাল নিয়ে শিলচর থেকে মিজ়োরাম সীমান্তে পৌঁছয়। ওই পথে ২৭ মে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে রেলপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে ব্রড গেজে শিলচর এবং বৈরবি জুড়লেও মিজ়োরামে রেল চলাচল কার্যত শুরু হয়নি। পাহাড় এবং জঙ্গলে ঘেরা দুর্গম পথ পেরিয়ে এত দিনে আইজ়ল রেলপথে সারা দেশের সঙ্গে জুড়তে চলেছে।
মিজ়োরামের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষের বাস রাজধানী আইজ়লে। স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর প্রথম রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন তাঁরা। প্রায় ৮৪ শতাংশ জঙ্গলে ঘেরা রাজ্যে রেলপথে সংযুক্তি অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির রাজধানীকে ব্রডগেজ রেলপথে সারা দেশের সঙ্গে জোড়ার কর্মসূচি নিয়েছে মোদী সরকার। পরের ধাপে সিকিম, মণিপুর এবং মেঘালয় নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, প্রায় ৮৬০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বৈরবি থেকে সাইরাং স্টেশনের মধ্যে ৫১.৩৮ কিলোমিটার পথে রেল লাইন তৈরি করা হয়েছে। ওই রেলপথে বৈরবি ছাড়াও আরও চারটি স্টেশন হরতকি, কাওয়ানপুই, মুয়ালখং এবং সাইরাং রয়েছে। মাত্র ৫১.৩৮ কিলোমিটার পথে ৪৮টি সুড়ঙ্গ এবং ১৫৩টি সেতু রয়েছে। সুড়ঙ্গপথের মোট দৈর্ঘ্য ১২.৮৫৩ কিলোমিটার। পাহাড়ের কোলে অসংখ্য সেতুর মধ্যে ৫৫টি বড় মাপের, ৮৭টি ছোট, পাঁচটি রোড ওভারব্রিজ এবং ৬টি রোড আন্ডারব্রিজ রয়েছে।
সাইরাং স্টেশন লাগোয়া ১৯৬ নম্বর সেতুর একটি স্তম্ভের উচ্চতা ১১৪ মিটার। গভীর খাদের মধ্যে বয়ে যাওয়া নদীর বুকে ওই স্তম্ভ নির্মাণের পরে সেতুর পাটাতন বসানোর সময় ২০২৩ সালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২৬জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। সেই বিপর্যয় সামলানো ছাড়াও পাহাড়ের কোলে একাধিক সুড়ঙ্গ এবং সেতু নির্মাণের কাজ করতে হয়েছে যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নীলাঞ্জন দেব জানান, রেলপথ নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রী এবং যন্ত্র আনার জন্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ওই রেলপথ উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)