Advertisement
২১ মে ২০২৪

নয়ডার মাঠ নজরবন্দি!

সকালটা আজ কিছুটা অন্যরকম ছিল নয়ডার সেক্টর ৫৮-নমাজ পড়ার মাঠে। নাম শুনলেই বোঝা যায়, নমাজ পড়ার চল এ মাঠে বহু দিনের। দিব্যি চলছিলও সব কিছু। কিন্তু স্থানীয়েরা বলেন, ভোটের হাওয়া দিতেই ভয়ের বাতাস শুরু। 

যোগী আদিত্যনাথ

যোগী আদিত্যনাথ

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়ডা, শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

সকালটা আজ কিছুটা অন্যরকম ছিল নয়ডার সেক্টর ৫৮-নমাজ পড়ার মাঠে। নাম শুনলেই বোঝা যায়, নমাজ পড়ার চল এ মাঠে বহু দিনের। দিব্যি চলছিলও সব কিছু। কিন্তু স্থানীয়েরা বলেন, ভোটের হাওয়া দিতেই ভয়ের বাতাস শুরু।

চার বছর ধরে নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে নমাজ পড়া হত যে মাঠে, যোগী প্রশাসনের নির্দেশে তা বন্ধ হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়, গোটা রাজ্যেই পার্কে নমাজ পড়া যাবে না। চিঠি যায় সেক্টর ৫৮-র ২৩টি আইটি সংস্থায়। বলা হয়, সংস্থার কোনও কর্মী মাঠে নমাজ পড়লে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংস্থার বিরুদ্ধেও। গত ২১ তারিখ প্রথমবার বাধা পান নমাজিরা।

আজ সকালেই ওই মাঠ ঘিরে ফেলে পুলিশবাহিনী। উপস্থিত জলকামান থেকে দমকল। দুপুর ১টা বাজতেই আশপাশের কারখানায় ‘লাঞ্চব্রেক’এর সাইরেন। ব্রেক আই-টি কর্মীদেরও। কিন্তু মাঠে ঢুকলেন না একজনও। সকালে ফোন করেছিলাম ইমাম নুরমান আখতারকে। ওই মাঠে নমাজ পড়ানোয় পুলিশ আটক করেছিল তাঁকে। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমরা ঝামেলা চাই না। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হোক, তা-ও চাই না। আজ আমি ওখানে যাব না।’’

মাঠেই দাঁড়িয়ে রয়েছি, খবর এল নমাজ পড়া হচ্ছে সেক্টর-৬৩-এর এইচ ব্লকে। দুদ্দাড় করে পৌঁছলাম। মাঠের মাঝখানে চাদর-শতরঞ্চি পেতে নমাজ পড়ছেন কয়েকশো মানুষ। কথা হল সইফুদ্দিনের সঙ্গে। স্থানীয় একটি সংস্থার আইটি কর্মী। গত দেড় বছর ধরে ওই মাঠেই নমাজ পড়ছেন সইফ। তাঁর কথায়, ‘‘নমাজ পড়া পবিত্র কাজ। তাতে কারও অসুবিধা হলে আমরা বন্ধ করে দেব। কিন্তু শুক্রবারের এক বেলার নমাজে কার অসুবিধা হচ্ছে?’’

উত্তর অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন নয়ডা ৫৮-র থানার প্রধান পঙ্কজ রাই। অভিযোগ, নয়ডা ৫৮-র একটি জায়গায় মাজার তৈরি হওয়ার পর অভিযোগ আসে তাঁর কাছে। তবে এ রকম অভিযোগ তো কতই জমা পড়ে। স্থানীয়দের বক্তব্য, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের ওই অভিযোগ পৌঁছয় একেবারে লখনউয়ে। তারপর যোগীর ওই নির্দেশ। স্থানীয় গাড়ি কারখানার কর্মী ইমতিয়াজের দাবি, ‘‘মাঠে নমাজ পড়া নিয়ে যখন সমস্যা, তাহলে শুক্রবার আমাদের ছুটি দেওয়া হোক। মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়ব।’’ অন্যরাও সমর্থন করেন তাঁকে। অনেকের বক্তব্য, অবিলম্বে আলোচনায় বসা হোক যোগী প্রশাসনের সঙ্গে।

ভিড় পাতলা হচ্ছে দেখে বেরিয়ে আসছিলাম পার্কের সরু গেট দিয়ে। হঠাৎই এক যুবকের চোখে চোখ পড়ল। তাঁর কপালে হলদে টিকা। মাঠ থেকে যাঁরা বেরোচ্ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে মেপে নিচ্ছিলেন শীতল চাউনি দিয়ে। সঙ্গী যুবক ব্যস্ত ছবি তোলায়। উদ্দেশ্য কী, জানা গেল না। কানে ভাসছিল সইফুদ্দিনের কথা, ‘‘চারদিকে নজরবন্দি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Namaz Noida
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE