পোর্ট ব্লেয়ারে প্রস্তাবিত নতুন টার্মিনালের নকশা।
অসুবিধা কিছু আছেই। তার মধ্যেই পোর্ট ব্লেয়ারকে আন্তর্জাতিক বিমান-মানচিত্রে আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই জন্য ৪১৭ কোটি টাকা খরচ করে সেখানে তৈরি হতে চলেছে নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাও হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শর্ত মেনে। অচিরেই পোর্ট ব্লেয়ারে বিদেশি বিমান ওঠানামা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্দামানে বিমান ওঠানামায় অসুবিধা মূলত দু’টি। দৃশ্যমানতা এবং সমুদ্রের হাওয়া। দু’টো সমস্যা আবার পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। সামুদ্রিক হাওয়ায় পোর্ট ব্লেয়ারের আবহাওয়া হুটহাট খারাপ হয়ে যায়। অন্ধকার নেমে আসে। ওই অবস্থায় বিমান ওঠানামা করতে পারে না। সমুদ্র-ঘেরা রানওয়েতে নামতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই পোর্ট ব্লেয়ারের আকাশ থেকে ফিরে যেতে হয় বিমানকে। এই অবস্থায় সেখানে আন্তর্জাতিক বিমান ওঠানামা নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেক বিমান সংস্থারই।
তাই আপাতত দৃশ্যমানতার সমস্যার দিকেই বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ী। ওই সমস্যার মোকাবিলায় পোর্ট ব্লেয়ারে টিলা কেটে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই খাতে আলাদা ভাবে খরচ হবে ১০ কোটি টাকা।
কোনও বিমানবন্দরে আইএলএস না-থাকলে ৩৬০০ মিটার দৃশ্যমানতার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ওই উচ্চতা থেকে রানওয়ে পরিষ্কার দেখা গেলে তবেই নামতে পারে বিমান। আইএলএস চালু হয়ে গেলে ৮০০ মিটার দৃশ্যমানতাতেও বিমান ওঠানামা করতে পারে। তাই আশা করা হচ্ছে, পোর্ট ব্লেয়ারে আইএলএস বসে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিমানকে আর নামতে না-পেরে মুখ ঘুরিয়ে অন্যত্র উড়ে যেতে হবে না।
পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এখন কলকাতা ও চেন্নাই থেকে সেখানে নিয়মিত উড়ান চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এবং স্পাইসজেট। কিন্তু বিমান ওঠানামার অসুবিধা জন্যই সেখানে উড়ান চালায় না ইন্ডিগো। এমনকী কলকাতা ও চেন্নাই ছাড়া অন্য শহর থেকে উড়ান চালানো হয় না সেখানে। শুদ্ধসত্ত্ববাবুর কথায়, “এখন দিনের নির্দিষ্ট সময়ের পরে পোর্ট ব্লেয়ারে কার্যত বিমান চলাচল বন্ধ থাকে। আইএলএস বসে গেলে সন্ধ্যার পরেও বিমান ওঠানামা করতে পারবে।” ইন্ডিগোর এক কর্তা জানান, দৃশ্যমানতার উন্নতি হলে তাঁরাও পোর্ট ব্লেয়ারে উড়ান পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করবেন।
কর্তৃপক্ষের আশা, উড়ান বাড়লে আগামী পাঁচ বছরে যাত্রী-সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাই ৩৯ হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে নতুন টার্মিনাল তৈরির নকশা করা হয়েছে। বর্তমান টার্মিনাল ভবনের এলাকা ছ’হাজার বর্গমিটার। ওই ভবনে সর্বাধিক ৪০০ যাত্রীর ঠাঁই হয়। নতুন টার্মিনাল ভবনে একসঙ্গে ১২০০ যাত্রীকে জায়গা দেওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবার কথা মাথায় রেখেই নতুন টার্মিনালের দোতলায় আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য তৈরি হবে বিশেষ লাউঞ্জ। বসানো হবে অ্যারোব্রিজ, নতুন কনভেয়ার বেল্ট, চেক-ইন কাউন্টার। ২০১৮ সালের মধ্যে নতুন টার্মিনাল তৈরির কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিন্তু হাওয়ার সমস্যা মেটানোর পথ মিলছে না। যে-সব পাইলট নিয়মিত পোর্ট ব্লেয়ারে যাতায়াত করেন, তাঁদের বক্তব্য, সেখানে ওঠানামার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান সমস্যা হাওয়া। রানওয়ের এক দিকে পাহাড়, অন্য দিকে সমুদ্র। বিমানকে ওঠানামা করাতে হয় সমুদ্রের দিক থেকেই। এক পাইলটের কথায়, “হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫ নটিক্যাল মাইলের বেশি হলে সমস্যা হয়।” বেলা ১১টার পর থেকে মাঝেমধ্যেই পোর্ট ব্লেয়ারে সমুদ্রের দিক থেকে হাওয়ার গতিবেগ বেড়ে ১৫ নটিক্যাল মাইলের বেশি হয়ে যায়। এবং আপাতত এই হাওয়ার সমস্যা সমাধানের কোনও উপায়ও নেই কর্তৃপক্ষের হাতে।
তবে আইএলএস বসিয়ে প্রয়োজনীয় দৃশ্যমানতার ব্যবস্থা করা গেলে হাওয়ার মর্জি মেনেই দেশি-বিদেশি বিমান পোর্ট ব্লেয়ারে যাবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা। তাই তাঁরা নতুন টার্মিনাল প্রকল্পে এগোচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy