Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সংসদে কোণঠাসা করতে পারে বিরোধীরা, বিদেশ থেকেই আসরে মোদী

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অরবিন্দ কেজরীবাল দাবি তুলছেন নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য। আর সংসদে নরেন্দ্র মোদীকে কোণঠাসা করার জন্য অন্য বিরোধী দল তো বটেই, এমনকী অসন্তুষ্ট মোদীর শরিকদের সঙ্গেও হাত মেলাচ্ছেন এই নেতারা।

জাপানে প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

জাপানে প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ২১:৪৩
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অরবিন্দ কেজরীবাল দাবি তুলছেন নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য। আর সংসদে নরেন্দ্র মোদীকে কোণঠাসা করার জন্য অন্য বিরোধী দল তো বটেই, এমনকী অসন্তুষ্ট মোদীর শরিকদের সঙ্গেও হাত মেলাচ্ছেন এই নেতারা। এই পরিস্থিতিতে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই আসরে নামলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

জাপানে অনাবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে আরও বড় দু’টি হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন। এক, ৩০ ডিসেম্বর, পুরনো নোট জমা করার শেষ দিনের পরেও কালো টাকার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা তিনি নিতে পারেন। দুই, এই দফায় এক বার কারও বেইমানির টাকা ধরা পড়লে তাঁর ঠিকুজি-কুষ্ঠি বের করবেন। মোদীর কথায়, এ ধরনের লোক যাতে বাঁচতে না পারেন, তার জন্য প্রয়োজনে স্বাধীনতার আমল থেকে সব হিসেব খতিয়ে দেখবেন। তার জন্য যত লোককে লাগানো দরকার, তা করবেন।

ঘোষণার চার দিন পরে গোটা দেশের যে ছবিটি ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রথমে সাধুবাদ জানালেও নোট বদল করতে না পেরে আর টাকা না পেয়ে মানুষের অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। আর আম জনতার সেই অসন্তোষকে সামনে রেখেই একজোট হচ্ছে বিরোধীরা। খোদ সরকারপক্ষই আজ কবুল করেছে, আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনের আগে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি মিটবার নয়। আর এটি আঁচ করেই তৃণমূল আগেই সংসদে আলোচনার জন্য নোটিস দিয়েছে। সে পথ ধরেছে রাহুল গাঁধীর দলও। রাহুল গাঁধী, মমতা, কেজরীবাল, মায়াবতী, মুলায়মের মতো দলেরা বিরোধিতা তো করছেনই। মোদীর শরিক দল শিবসেনা, অকালির মতো অসন্তুষ্ট দলকেও কক্ষ সমন্বয় করে মোদীর বিরুদ্ধে একজোট করার চেষ্টা করছেন মমতারা।

আজ সকালেই কেজরীবাল ফের সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, বিজেপি নিজেদের টাকা আগেভাগেই ব্যবস্থা করে নিয়েছে। নিজেদের বন্ধুদেরও বলে তা করতে বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা না হলে কেনই বা বিজেপির পঞ্জাবের নেতা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দু’দিন আগে টুইটারে নতুন ২ হাজার টাকার ছবি দিলেন? আর কেনই বা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্কগুলিতে সব থেকে বেশি টাকা ঢুকল? মোদীর বন্ধুরা আগে জানতেন বলেই তাঁরা আগেভাগে টাকা সরিয়ে দিয়েছেন। গোটাটাই ভাঁওতা। সন্ধ্যায় দিল্লির এক সব্জি আড়তে গিয়েও কেজরীবাল প্রশ্ন তোলেন, টাকার অভাবে সব্জি-ফলের যোগান বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এঁরা সকলেই কি কালো টাকার কারবারি বলে মোদী মনে করেন? কলকাতায় বসে সরাসরি মোদীকে বিঁধে সুর চড়িয়েছেন মমতাও।

গতকাল দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটের একটি ব্যাঙ্কে রাহুল গিয়ে সাধারণ মানুষের হেনস্থার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আগের সেনা অভিযানের মতো প্রধানমন্ত্রীকে আর দরাজ সার্টিফিকেট না দিয়ে বরং তাঁকেই বিঁধেছিলেন। আজ এক টুইট বার্তায় তিনি বরং দলের যুব নেতাদের আবেদন করেন, সাধারণ মানুষকে ফর্ম ভরতে, জল দিতে সাহায্য করতে। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা বুঝবেন না। তাই কংগ্রেসকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। যা দেখে বিজেপির কটাক্ষ, আসলে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, স্বাধীনতার আমল থেকে সবার ঠিকুজি বের করবেন, সেটি বলতে তিনি আসলে রাহুল গাঁধীকেই আক্রমণ করেছেন। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে তাঁর দলই সব থেকে বেশি সময় দেশ শাসন করেছে। আর একের পর এক দুর্নীতির কারিগর তাঁরাই।

বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মতে, এখন নরেন্দ্র মোদীকে একাধারে দু’টি কাজ করতে হচ্ছে। এক, দ্রুত আম জনতার ভোগান্তি দূর করে নোটের যোগান স্বাভাবিক করা, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা। দুই, যে ভাবে সংসদের অধিবেশনের মুখে বিরোধী রাজনীতিকরা একজোট হচ্ছেন, সেটিও রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করা। বিজেপির মতে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, যে সব রাজনৈতিক দল মুখে দুর্নীতি দমনের কথা বলে এখন বিরোধিতা করছে, তারা নিজেদের কালো টাকা নিয়ে চিন্তিত। সামনে তারা মানুষের ভোগান্তিকে অস্ত্র করছে। কিন্তু নেপথ্যে চিন্তা আসলে নিজেদেরই। সে কারণেই চাপ দিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করাতে চাইছে। অরুণ জেটলি আজ যে কারণে বলেন, ‘‘ভুরি ভুরি আবেদন আসছে ছাড় দেওয়ার দাবি তুলে। কিন্তু আমরা এমন কোনও ছাড় দেব না, যেটি কালো টাকা সাদা করার কল হয়।’’

কিন্তু আম জনতার ভোগান্তি খোদ মোদীকে ভাবাচ্ছে বলেই আজ জাপানের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি বেনজির ভাবে দেশের বিষয় নিয়ে সবিস্তার মুখ খুললেন। সেখানে এক দিকে যেমন এই ভোগান্তির কথা কবুল করলেন। তেমনই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকেও এক হাত নিলেন। বললেন, ‘‘মুখে আঙুল ঢুকিয়ে অনেকে মোদীর বিরুদ্ধে বলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ৪-৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মানুষ কষ্টভোগ করছেন। ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কেউ দেখছেন এটিএম বন্ধ। এটিই উজ্জ্বল দেশের লক্ষ্য।’’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘১,২,৫ লক্ষ লোক পাপ করেছে হয়তো। আগে গঙ্গায় সিকি ফেলতেন, এখন নোট ফেলছেন। পয়সা না পাই, পুণ্য তো হোক। বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো মা-র অ্যাকাউন্টেও এখন ছেলে আড়াই লক্ষ টাকা ভরছেন। আমি তো নানা দিক থেকে আশীর্বাদ পাচ্ছি।’’

এর পরেই হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘সব থেকে বড় সাফাই অভিযানে বেইমানের রেহাই নেই। যাঁরা আমাকে জানেন, তাঁরা জানেন এমন কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’ বিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে কেজরীবালের তোলা অভিযোগ খণ্ডন করে জেটলি বলেন, ‘‘আগে কেউই জানতেন না এই সিদ্ধান্ত। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিন বেশি টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে, অর্থ কমিশনের বাড়তি টাকা হাতে আসায়। বিরোধী দলগুলি অকারণে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে গুজব ছড়াচ্ছেন। নুনের ঘাটতির গুজবও এ ভাবে ছড়ানো হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: নোট বাতিল করে পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে বৃহত্তম পদক্ষেপ নিয়েছি: মোদী

ঘোষণার করেই মোদী বিদেশে, কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে সেই জেটলিকে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Rs500 Rs1000
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE