Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কের অভাব ডাকঘরে মেটাবে কেন্দ্র

ব্যাঙ্কই নেই। তা হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি সাহায্য পৌঁছবে কী ভাবে? নরেন্দ্র মোদীর সামনেই এই প্রশ্নটা তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে ব্যাঙ্কের এই অভাব ডাকঘর দিয়ে মেটাতে চাইছে মোদী সরকার।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৩

ব্যাঙ্কই নেই। তা হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি সাহায্য পৌঁছবে কী ভাবে? নরেন্দ্র মোদীর সামনেই এই প্রশ্নটা তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে ব্যাঙ্কের এই অভাব ডাকঘর দিয়ে মেটাতে চাইছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আমলারা জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গের সব গ্রামে ব্যাঙ্ক না থাকলেও ডাকঘর রয়েছে। তাকে কাজে লাগিয়েই সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টে সরকারি অর্থসাহায্য পৌঁছে দেওয়া যাবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের ৭৪টি প্রকল্পে এখন নগদ ভর্তুকি, স্কলারশিপ বা ভাতা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর পরে মোট ১৪৭টি প্রকল্পে এই ব্যবস্থা চালু করার প্রচেষ্টা চলছে। সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছনোর সব প্রকল্পকেই এই ডিসেম্বরের মধ্যে আধারের সঙ্গে জোড়ার কাজ শেষ করতে চাইছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে সব রাজ্য এই ব্যবস্থায় চলে যাক। আর রাজ্যগুলি ছাত্রছাত্রী বা গরিব মানুষকে যে সব ভাতা বা ভর্তুকি দেয় সেগুলিও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হোক।

এখানেই আপত্তি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যুক্তি দেন, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার তুলনায় ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা নিতান্তই কম। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়। রাজ্যের ৮০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এখনও কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। যার অর্থ হল, পশ্চিমবঙ্গের চার ভাগের এক ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই ব্যাঙ্কের শাখা নেই। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, সব গ্রামে ব্যাঙ্কের শাখা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা চালু হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের ১০০ শতাংশ পরিবারেই অন্তত এক জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গোটা রাজ্যে ১ কোটি ৯২ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৮৭ পরিবার রয়েছে। সব পরিবারেই কারও না কারও অ্যাকাউন্ট আছে। ওই পরিবারের কেউ সরকারি সাহায্য পেলে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বা ব্যাঙ্ক-মিত্ররা গ্রামে গিয়ে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে পারবেন। প্রতি মাসে অ্যাকাউন্টে সরকারি সাহায্য জমা পড়লে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরাই গ্রামে গিয়ে টাকা পৌঁছে দেবেন।

কিন্তু রাজ্যের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সব সময়ে গ্রামে ব্যাঙ্ক-মিত্র বা প্রতিনিধিদের দেখা পাওয়া যায় না। জনধন যোজনার মতো প্রকল্প চালু হলে কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে গ্রামে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হয় ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু সব সময়ে গ্রামবাসীরা এই সুবিধে পান না। এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ডাকঘর। কেন্দ্রের আমলাদের মতে, এমনিতেই ডাকঘরের মাধ্যমে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মজুরি দেওয়া হয়। কিছু দিনের মধ্যেই ডাক বিভাগ বা ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ শুরু করবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার নীতিগত মঞ্জুরি দিয়ে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রামের যে কেউ সরকারি প্রকল্পের আওতায় এলে তিনি ওই ডাকঘর-ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানেই সরকারি অর্থ সাহায্য পেতে পারেন। মোদী সরকারের যুক্তি হল, কেন্দ্রের মতো সব রাজ্যও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি ভর্তুকি দিলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। দিল্লিতে এ নিয়ে এক বৈঠকে ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিন্‌হা বলেন, ‘‘সরাসরি নগদ হস্তান্তরের ফলে যে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, তা রাজ্যগুলির সঙ্গেও ভাগ করে নেওয়া হবে।’’ মোদী সরকারের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, সরাসরি ব্যাঙ্কে সরকারি অর্থসাহায্য পৌঁছে দেওয়ায় গত দু’বছরে প্রায় ৩৬,৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কারণ সরকারি সাহায্যের তালিকায় থাকা ভুয়ো নাম, রেশন কার্ড ধরা পড়েছে। প্রতি মাসে সরকারি অর্থসাহায্যের টাকা পেতে গিয়ে কাউকে ঘুষ দিতে হচ্ছে না। ক্যাবিনেট সচিব জানান, এখনও পর্যন্ত ৭৪টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষেই বিলি হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা।

ক্যাবিনেট সচিবের যুক্তি, সব রাজ্যেই নগদ ভর্তুকি হস্তান্তরের জন্য একটি পৃথক দফতর খোলা হোক। কেন্দ্রের ৮৪টি মন্ত্রকের মধ্যে ৭১টিতেই এ জন্য পৃথক বিভাগ খোলা হয়েছে। অনেক রাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যেই এই বিষয়টি চালু করা কঠিন। কারণ হাতে বিশেষ সময় নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, এতে রাজ্যেরই সুবিধা। এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নীতি আয়োগের কর্তারা।

Narendra Modi Mamata Banerjee Bank Post Office
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy