Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

অরুণাচল নিয়ে ব্যাখ্যা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

সুপ্রিম কোর্টে জয় হোক বা হার— অরুণাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর গদি এ যাত্রা নাবাম টুকির হাতছাড়া হওয়া প্রায় নিশ্চিত। অরুণাচলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করার পক্ষে এই যুক্তিই দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সুপারিশের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবাদের মুখে এখনও রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:২৯
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টে জয় হোক বা হার— অরুণাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর গদি এ যাত্রা নাবাম টুকির হাতছাড়া হওয়া প্রায় নিশ্চিত। অরুণাচলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করার পক্ষে এই যুক্তিই দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সুপারিশের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবাদের মুখে এখনও রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে তিনি আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও কংগ্রেস নেতাদের মত শোনেন। ওই সুপারিশ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে কিছু ব্যাখ্যাও চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই ঘিরে গত দেড় মাস ধরে অরুণাচলে সাংবিধানিক সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কালিখো পুলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের ২১ জন বিধায়ক টুকির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিজেপির ১১ বিধায়ক পুল গোষ্ঠীর সঙ্গে একযোগে স্পিকার নাবাম রিবিয়ার অপসারণ দাবি করেন। রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়া ১৪ জানুয়ারির পূর্বনির্ধারিত বিধানসভার অধিবেশন ১৬ ডিসেম্বরে এগিয়ে আনেন ও স্পিকারের অপসারণ নিয়ে আলোচনার নির্দেশ দেন। ১৫ ডিসেম্বর ডেপুটি স্পিকার টি থন্ডোক-সহ ১৪ জন বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়ককে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেন রিবিয়া। ১৬ ডিসেম্বর বিধানসভা ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন টুকি। রাজ্যপালের নির্দেশে ডেপুটি স্পিকার একটি কমিউনিটি হল ও হোটেলে বিধানসভার অধিবেশন বসান। ৬০ সদস্যের বিধানসভায় ৩৩ জন বিধায়ক স্পিকার নাবাম রিবিয়ার অপসারণে মত দেন এবং মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির নেতৃত্বে অনাস্থা জানিয়ে কালিখো পুলকে নেতা নির্বাচন করেন। কালিখো পুলদের হোটেলে কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন টুকি সমর্থকেরা। গৌহাটি হাইকোর্ট রাজ্যপালের সব নির্দেশ স্থগিত রাখায় সে যাত্রা রেহাই পান টুকি।

অরুণাচল সঙ্কট নিয়ে মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। ১৯ জানুয়ারি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বিধানসভার অধিবেশন বসিয়ে আস্থা ভোট নেওয়ার কথা বলে। ২২ জানুয়ারি বিজেপি সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা বললে টুকির আইনজীবী ফলি নরিম্যান ও কপিল সিব্বল জানান, রাজ্যে কোনও ভাবেই ৩৫৬ অনুচ্ছেদ কার্যকর করার অবস্থা নেই। কিন্তু কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অরুণাচলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টির প্রবল বিরোধিতা করে আজ রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেয় কং‌গ্রেস। আবার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আর্জিও জানিয়েছে তারা। নাবাম টুকির পাশাপাশি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিরা কড়া ভাষায় ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। কিন্তু বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদীর কথায়, ‘‘টুকি ভাল করেই জানতেন ছ’মাস বিধানসভা অধিবেশন না বসলে রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট আছে বলে ধরা হয়। কিন্তু পরাজয় নিশ্চিত জেনে তাঁরা বিধানসভা বসাননি, আস্থা ভোটেও যাননি। এখন সুপ্রিম কোর্ট বা রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করে কী লাভ?’’ সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পি টি ডি আচারি বলেন, ‘‘সংবিধানের ১৭৪ (১) ধারা অনুযায়ী, দু’টি বিধানসভা অধিবেশনের মধ্যে ছ’মাসের বেশি ব্যবধান থাকলেই তাকে সঙ্কট হিসাবে দেখা হয়।’’ আচারির কথায়, ‘‘ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বর বসা অধিবেশনের স্বীকৃতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। কেন্দ্র তাই রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতেই পারে।’’ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার মত না নিয়ে বিধানসভা বা লোকসভা তলব করতে পারেন না। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। তবু রাষ্ট্রপতি শাসনের এই সুপারিশ আদালতের অবমাননা।’’ বিজেপি সূত্রে খবর, যদি কোর্ট ডেপুটি স্পিকারের ডাকা অধিবেশনকে স্বীকৃতি দেয়, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক টুকির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানানোয় সরকার পড়ে যাবে। কোর্ট ১৬ ডিসেম্বরের অধিবেশনকে না মানলেও ৬ মাসের বেশি বিধানসভা না বসায় সরকারের পতন নিশ্চিত।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.