Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মোদীতে মাতোয়ারা মার্কিন কংগ্রেস

কিছুটা বলেই থেমে যেতে হচ্ছে। কারণ, আসন ছেড়ে উঠে হাততালি দিচ্ছেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা। মোট আট বার। যা রেকর্ড বলেই জানাচ্ছেন কূটনীতিকরা। এক সময়ে যে দেশের ভিসা পাননি, সে দেশের আইনসভার যৌথ অধিবেশন এ ভাবেই মাতিয়ে দিলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।

নমো নমো। মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতা শুরুর আগে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

নমো নমো। মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতা শুরুর আগে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

কিছুটা বলেই থেমে যেতে হচ্ছে। কারণ, আসন ছেড়ে উঠে হাততালি দিচ্ছেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা। মোট আট বার। যা রেকর্ড বলেই জানাচ্ছেন কূটনীতিকরা। এক সময়ে যে দেশের ভিসা পাননি, সে দেশের আইনসভার যৌথ অধিবেশন এ ভাবেই মাতিয়ে দিলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।

মার্কিন কংগ্রেসে এ দিন মোদীর বক্তৃতা জুড়ে ছিল ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গভীরতার বার্তা। তাতে জায়গা পেয়েছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী থেকে মার্টিন লুথার কিংগ— সকলেই। ভারতের সংবিধানই তাঁর সরকারের কাছে ‘পবিত্র গ্রন্থ’ বলে জানিয়েছেন মোদী। সেই সঙ্গে স্বীকার করেছেন সেই সং‌বিধান রচয়িতা বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকরের উপরে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন সংবিধানের প্রভাবের কথা। আবার গাঁধীজির অহিংসা নীতির প্রভাব মার্টিন লুথার কিংগের উপরে পড়ার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, শিকাগোয় স্বামী বিবেকানন্দের যুগান্তকারী বক্তৃতার কথাও। বোঝাতে চেয়েছেন, আমেরিকা আর ভারত সব অর্থেই ‘স্বাভাবিক মিত্র’। কারণ, দু’দেশের সম্পর্কের শিকড় রয়েছে গণতন্ত্র, ব্যক্তি স্বাধীনতার মতো আদর্শে। যে কথা অনেক আগেই বলেছিলেন ভারতের আর এক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।

আর সেই স্বাভাবিক মিত্রদের বিপদের কথা বলতে গিয়ে এসেছে সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ। পাকিস্তানের নাম না করে মোদী জানিয়েছেন, ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে শুরু করে আফ্রিকা পর্যন্ত সন্ত্রাসের নানা নাম। যেমন লস্কর, তালিবান। বলেছেন, মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের উচিত, যারা রাজনৈতিক লাভের জন্য সন্ত্রাসকে মদত দেয় তাদের কড়া বার্তা দেওয়া। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার সময়ে ভারতের পাশে থাকার জন্য কংগ্রেসের সদস্যদের ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের পুর্নগঠনে যে আমেরিকার পাশাপাশি ভারতও কাজ করছে তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার চিনের নাম না করে আমেরিকাকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, শক্তিশালী ভারত মার্কিন কৌশলগত স্বার্থের অনুকূল।

রাজনীতিকদের মতে, সংবিধান ও গণতন্ত্রের কথা বলে মোদী আমেরিকায় তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা সংশোধন করতে চেয়েছেন। কারণ, অসহিষ্ণুতা বিতর্কভারত-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা ছায়া ফেলেছিল। মোদী সরকার সংখ্যালঘুদের ভরসা দিতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের কোনও কোনও সদস্য। শেষ বার ভারতে এসে বিদায়ী বক্তৃতায় পরোক্ষে অসহিষ্ণুতা নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন ওবামাও। সেই সমালোচনারই এ দিন জবাব দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আবার সন্ত্রাস নিয়ে মুখ খোলার পক্ষেও খুবই অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছেন মোদী। কারণ, আমেরিকার সাহায্যে গত কালই আন্তর্জাতিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাব এমটিসিআর-এ যোগদানের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে গিয়েছে দিল্লি। যে গোষ্ঠীর সদস্য থাকলে জঙ্গি মোকাবিলায় মার্কিন প্রিডেটর ড্রোনের মতো অস্ত্র কিনতে পারবে মোদী সরকার। আবার এই সফরেরই শুরুতে আফগানিস্তানের হেরাটে ‘বন্ধুত্বের বাঁধ’ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমেরিকার পাশাপাশি ভারতের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। ‘ভাল তালিবান, খারাপ তালিবান’ তত্ত্বের স্রষ্টা ওয়াশিংটনই। সেই তত্ত্বের অসারতা ফের জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রতিরক্ষা এবং পরমাণু ক্ষেত্রে মার্কিন সহযোগিতা আদায় করার পাশাপাশি মার্কিন বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যেও চলতি সফরে মাঠে নেমেছিলেন মোদী। ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘‘এমন একটা সময়ে আপনাদের সামনে এসেছি, যখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতি যথেষ্ট দুর্বল। বিশ্বের এখন প্রয়োজন আর্থিক বৃদ্ধির জন্য নতুন উদ্যোগ।’’

শুধু কথাই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও মিলেছে মার্কিন লগ্নিকারীদের কাছ থেকে। সম্মেলনে উপস্থিত ইউএসআইবিএস (ইউ এস ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল)-এর চেয়ারম্যান জন চেম্বার্স জানিয়েছেন, ‘‘২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউএসআইবিএস-এর সদস্য সংস্থাগুলি আগামী ৩ বছরের মধ্যে ভারতে ৪,১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল। আজ আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি দু’বছরের কম সময়েই মার্কিন সংস্থাগুলি ২,৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে।’’ চেম্বার্স জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সংস্কারের রেকর্ড দেখে বাড়তি ৪,৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সংস্থাগুলি।

আমেরিকায় যা লাভ হয়েছে তার জন্য অবশ্য তাঁর সঙ্গে বারাক ওবামার ব্যক্তিগত রসায়নকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদী। বলছেন, ‘‘আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বারাককে ধন্যবাদ দিচ্ছি। ভারতের প্রতি তাঁর গভীর দায়বদ্ধতা রয়েছে।’’ আর মার্কিন কংগ্রেসে নানা বিষয়ে গভীর বিরোধ নিয়ে হাল্কা সুরে জানাচ্ছেন, ‘‘আপনাদের মতো হাত মিলিয়ে চলা ও সর্বদল সহযোগিতার নজির আমাদের সংসদেও দেখতে পাই। বিশেষত উচ্চ কক্ষে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi U.S. Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE