রাজ্যে বিজেপি সরকারের ক্ষমতায়নের পাঁচ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। পূর্তমন্ত্রী হিসেবে পরিমল শুক্লবৈদ্যও পার করে দিলেন একই সময়। শিলচর-সহ বরাক উপত্যকার রাস্তাঘাটের হাল ফেরা তো দূরের কথা, সড়কের জরাজীর্ণতা একেবারে চরমে উঠেছে। পুজোর মুখে ভোল বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু দেওয়ালির আলোতেও হোঁচট খাচ্ছেন বরাকবাসী। এই অবস্থায় প্রকৃতিকেই আপাতত খলনায়ক হিসেবে দাঁড় করালেন পরিমলবাবু। বললেন, বৃষ্টির জন্য কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। বিরোধীদের কথায়, এ তো অজুহাত মাত্র!
নির্বাচনী সভাগুলিতে বরাক উপত্যকায় বিজেপি রাস্তাঘাটের কথাই সব চেয়ে জোর দিয়ে প্রচার করেছিল। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে চেহারা বদলে যাবে প্রতিটি রাস্তার। সর্বানন্দ সোনোয়াল তাঁর সঙ্গে শপথ গ্রহণের জন্য যখন পরিমল শুক্লবৈদ্যর নাম ঘোষণা করেন এবং তাঁকে পূর্ত দফতরের দায়িত্ব দেন, তখন এই অঞ্চলের মানুষ বড় খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু কোথাও কাজকর্ম শুরু না হওয়ায় তাঁদের অধিকাংশই হতাশ। বিশেষ করে, পুজোর আগে প্যাচওয়ার্কের কথা বলেও কাজ না হওয়ায় পথেঘাটে পরিমলবাবুর সমালোচনা স্পষ্টই শোনা যাচ্ছে। লোকে মুখ খুলছে।
পূর্তমন্ত্রী পরিমলবাবু আজ আরও একবার জানিয়েছেন, ‘‘শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কেন্দ্রের কাছ থেকে মঞ্জুরি পাওয়া গিয়েছে।’’ এতদিনের সমস্যার জন্য বৃষ্টিকে দায়ী করে তিনি বলেন, পুজোর দিনগুলিতেও রেহাই মেলেনি। তবু সামান্য কিছু কাজ করা হয়েছিল। পরিমলবাবু আশাবাদী, আর ধারাবর্ষণের জন্য ভুগতে হবে না। ফলে এখন আর জোড়াতালির কাজ নয়। যা হবে পাকাপাকি। কেন্দ্রের মঞ্জুরি পেতেই তাঁরা কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিয়েছেন। আগে প্যাকেজ হিসেবে কাজের টেন্ডার হতো। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থাকত দিসপুর-গুয়াহাটিতে। এ বার বিধানসভা-আসন ভিত্তিক কাজ হবে। টেন্ডার পড়বে ডিভিশনাল কার্যালয়গুলিতে। ফলে টেন্ডারের ভিত্তিতে এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
মন্ত্রী জানান, প্রতিটি বিধানসভা আসনে রাস্তার জন্য পাঁচ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে। রাস্তা মেরামতির এক তহবিলে ২ কোটি, আরআইডিএফ প্রকল্পে ৩ কোটি করে। বিধায়করাই বিভাগীয় কর্তাদের সঙ্গে বসে অগ্রাধিকারের তালিকা চূড়ান্ত করবেন। এ ছাড়া, জাতীয় সড়ক নির্মাণে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হচ্ছে। মাঝে পাথর-বালি নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেটাও মিটেছে।
রাস্তা নিয়ে সমস্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভ তিনি শেষ পর্যন্ত মিটিয়ে দেবেন বলেই আশাবাদী এই প্রবীণ বিজেপি নেতা। পরিমলবাবু বলেন, ‘‘শুরুতে টাকাটাই ছিল বড় সমস্যা। পূর্বতন সরকার ২-৪ টাকা রেখে যাওয়ার বদলে ১৮০০ কোটি টাকার দায় চাপিয়ে গিয়েছে। ঠিকাদাররা বকেয়া আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব ধীরে ধীরে মেটানো হবে। তবে নতুন কোনও কাজে বকেয়া ব্যবস্থা থাকবে না।’’ কাজের জন্য অর্থ এখন আর কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন পরিমলবাবু। তিনি জানান, আগের বছর কেন্দ্রের কাছ থেকে ৬০০ কোটি মিলেছিল। এ বার ৮০০ কোটি টাকার মঞ্জুরি আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসওয়ে নামে দেড় থেকে দু’হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বরাক উপত্যকাতেও জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
এক দিকে, এত সব পরিকল্পনা! অন্য দিকে, এত সমালোচনা! পরিমলবাবুর কথায়, ‘‘আমি চাপে নেই বললে সত্যকে অস্বীকার করা হবে। বরং বলা যায়, চাপটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। আর সে চ্যালেঞ্জ জেতা শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’