Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রশ্নের মুখে গোমাংসে বিধিনিষেধও

সেই অধিকারই আজ সুপ্রিম কোর্টের স্বীকৃতি পাওয়ায় এ দেশে গো-মাংস নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়ে গেল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫৮
Share: Save:

ব্যবধান মাত্র দু’বছরের।

২০১৫ সালে বম্বে হাইকোর্ট মহারাষ্ট্র সরকারকে বলেছিল, কারও বাড়িতে গোমাংস রাখা আছে কিনা, তা খুঁজে বের করতে গিয়ে সরকার যেন নাগরিকদের ব্যক্তিপরিসরের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে। হাইকোর্টে রাজ্য সরকার যুক্তি দেয়, ব্যক্তিপরিসরের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতই নয়।

সেই অধিকারই আজ সুপ্রিম কোর্টের স্বীকৃতি পাওয়ায় এ দেশে গো-মাংস নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়ে গেল। শীর্ষ আদালত আজ বলেছে, ‘‘নতুন নতুন মামলা নতুন বিষয়কে সামনে নিয়ে আসছে। ব্যক্তিপরিসরের ক্ষেত্রও বিস্তৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পশু হত্যা ও খাবার নিয়ে নাগরিকদের পছন্দ-অপছন্দের প্রসঙ্গ।’’ রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি জে চেলামেশ্বর বলেছেন, ‘‘কে কী খাবে, কী পরবে, রাজনৈতিক সামাজিক ব্যক্তিগত জীবনে কে কার সঙ্গে মিশবে, মনে হয় না রাষ্ট্র তা নিয়ে কিছু বলতে পারে।’’

আর এখান থেকেই সামনে এসেছে নতুন সম্ভাবনা। প্রশ্ন উঠেছে, কে কী খাবে, তাতে রাষ্ট্র যদি হস্তক্ষেপ না করতে পারে, তা হলে সেই রাজ্যের বাসিন্দারা এ বার কী করবেন, যেখানে বিশেষ কিছু খাবারের উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে? অনেকেই মনে করছেন, ব্যক্তিপরিসরের অধিকার মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি পাওয়ায় খাদ্যাভ্যাসে এই অধিকার রক্ষার দাবি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের নিষেধকে কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার রাস্তা এ বার খুলে গেল। অর্থাৎ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে গো মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হলেও এখন এই বিষয়ে অধিকারের দাবি নিয়ে শীর্ষ আদালতে কেউ আসতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে ফয়সালা শোনাতে পারে আদালত।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ, অধিকাংশ রাজ্যে গোমাংস খাওয়াও বেআইনি। এ ব্যাপারে রাজ্যগুলির আইনসভার আইন প্রণয়নের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু আজকের রায়ের পরে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, গুজরাত, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলি ছাড়াও ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ, কোথাও আবার অকেজো গরুকে হত্যা করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, কোথাও গোহত্যা নিষিদ্ধ হলেও গোমাংস খাওয়ায় বিধিনিষেধ নেই। পশ্চিমবঙ্গ কেরলের মতো রাজ্যে যদিও গোহত্যা, গোমাংস বিক্রি ও খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়নি। রাজ্যে রাজ্যে আইনের এই বিভিন্নতার মধ্যেই কখনও আসছে জবাই করার জন্য গরু বিক্রির উপর কেন্দ্রের তরফে নিষেধাজ্ঞা। গোরক্ষার নামে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর তাণ্ডবও পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে।

তবে আজকের রায়ের পরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলের সম্ভাবনা। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার ও আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘কে কী খাবে, তা রাষ্ট্র ঠিক করে দিতে পারে না।’’ এই রায়কে ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি। আর কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির মন্তব্য, ‘‘আশা করি মোদী সরকার এ বার আর আমার রান্নাঘরে ঢুকে পড়তে চাইবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE