দড়িতে একটা গিঁটের সঙ্গে আর একটা গিঁট এমন ভাবে বাঁধা ছিল যে কী ভাবে তা খোলা হবে, তা বোঝা কঠিন। বলা হত, যে এই ‘গর্ডিয়ান নট’-এর গিঁট খুলতে পারবেন, তিনিই গোটা এশিয়া শাসন করবেন। প্রাচীন ফ্রিজিয়ার গর্ডিয়ান অঞ্চলে (বর্তমানে তুরস্কে) এই জটিল গেরোর সমাধানে আলেকজ়ান্ডার তাঁর তরোয়াল দিয়ে স্রেফ দড়িটা কেটে দিয়েছিলেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে সরিয়ে রাহুল গাঁধী আলেকজ়ান্ডারের মতো দড়িটাই কেটে দিলেন বলে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছেন। কিন্তু গিঁট খোলার বদলে দড়িটাই কেটে দেওয়ায় ভূভারত জয় দূরের কথা, পঞ্জাবও কংগ্রেসের হাতছাড়া হবে কি না, সেই
প্রশ্নও উঠেছে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, অমরেন্দ্র স্পষ্ট ভাষায় সনিয়া গাঁধীকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা পঞ্জাবে কংগ্রেসকে ভোট জেতাতে পারবেন না, কিন্তু দু’জনেই তাঁকে অপমান করেছেন। কংগ্রেসের অনেক প্রবীণ নেতা মনে করছেন, অমরেন্দ্রর মতো অভিজ্ঞ নেতাকে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী ‘অপমান’ করায় দলের মধ্যে ভুল বার্তা গেল। দু’জনেই বরাবর অমরেন্দ্র বনাম নভজ্যোৎ সিংহ সিধু বিবাদে সিধুর পাশে ছিলেন। তাঁদের নির্দেশে অমরেন্দ্রকে দিল্লিতে ডেকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। নিছক সনিয়া গাঁধীর সম্মানে সিধুকে প্রদেশ সভাপতি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর দরকার হলেও তা সম্মানজনক ভাবে করা যেত।
উল্টো দিকে রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ শিবির বলছে, অমরেন্দ্রকে সরানোর সিদ্ধান্তে ঝুঁকি থাকলেও তা হিসেব কষে নেওয়া সাহসী সিদ্ধান্ত। কারণ দলীয় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, অমরেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যে প্রবল জনমত তৈরি হয়েছে। পঞ্জাবের কৃষকদের রাজ্যের বাইরে আন্দোলন করতে বলায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। জালিয়ানওয়ালা বাগের ভোলবদল নিয়ে বিক্ষোভের সময়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। সর্বোপরি বিজেপির বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভের মুখে ক্যাপ্টেনের পক্ষে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কঠিন।