দেড়মাস ধরে বন্ধ বরাক উপত্যকার সঙ্গে বাইরের রেল যোগাযোগ। লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইন ধরে কবে আবার ট্রেন চলবে, উত্তর নেই রেলকর্তাদের কাছেও।
শিলচর-লামডিং রেললাইনে মাইগ্রেনডিসা ও মাহুরের মধ্যবর্তী অংশ নিয়েই বিপাকে পড়েছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। প্রথমে ধস, মাটি-পাথর সরালেও কিছুক্ষণ পর ফের একই অবস্থা। এ ভাবে চলতে থাকে বহুদিন। পাহাড় গলে বেরিয়ে আসা কাদামাটির স্রোত বন্ধ হলে নতুন করে রেললাইন পাতা হয়। এ বার দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। লাইনের নীচের মাটি ফুলে ফেঁপে উঠছে। এতই তার তীব্রতা যে, বেশ কিছু অংশ জুড়ে রেললাইন বাঁকা করে দিচ্ছে। এক থেকে দেড় ফুট উপরে উঠে যাচ্ছে লাইন।
কেন এ রকম হচ্ছে তারও উত্তর নেই রেলকর্তাদের কাছে। ওই সমস্যা দূর করতে গিয়ে এখন হিমশিম রেলের বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররাও। কয়েক দিন আগে পাতা ২০০ মিটার রেললাইন তুলে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এ বার? ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষক দল, জার্মান ইঞ্জিনিয়ার সবাই পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলেছেন। কোনও সমাধানসূত্র মিলছে না। আগামী কাল সেখানে যাবেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার এইচ কে জাগ্গি।
১৯৯৬ সালে লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইনের জন্য ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা হয়েছিল। করেছিল রাইটস জিও ফ্রন্ট নামে এক সংস্থা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল এদের দুই ইঞ্জিনিয়ারকেও নিয়ে এসেছে। নতুন করে সেখানকার মাটির গুণমান পরীক্ষা করেন তাঁরা। তাতেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। এ বার জার্মানি থেকে উড়িয়ে আনা হয় বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে। তিনি গত কাল থেকে মাইগ্রেনডিসার পাহাড়, মাটি, লাইন পর্যবেক্ষণ করছেন। মাটির গুনাগুণ পরীক্ষা করছেন।
গত কাল ওই জার্মান ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে মাইগ্রেনডিসার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার অজিত পন্ডিত ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার আর পি জিঞ্জার। দু’দিন ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষারও ইতিবাচক কোনও কথা শোনা যায়নি তাঁর কাছে। বারবার বলছেন, ‘‘মাটি বড় খারাপ।’’
লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ রেললাইনের এই অংশে যে এমন কিছু ঘটতে পারে, তৎকালীন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার (সিআরএস) সুদর্শন নায়েক তাঁর রিপোর্টে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বিপদের আঁচ পেয়েও সেই সময় রেলকর্তারা তাতে গুরুত্ব দেননি। এরই খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। দুর্ভোগে ভুগছেন বরাক উপত্যকা, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরের মানুষ। উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যে বন্ধ করে দিতে হয় রেল চলাচল। প্রথম কয়েক দিন অনিশ্চয়তার সঙ্গে কখনও চলছিল, কখনও ট্রেন বাতিল করা হচ্ছিল। মাঝপথ থেকে যাত্রীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক বার। ১৭ দিন ধরে তা পুরোপুরি বন্ধ।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার অজিত পণ্ডিত আজ বলেন, ‘‘ওই লাইনে যাত্রী পরিষেবা শুরু করার জন্য রেল দফতর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা তাতে কবে নাগাদ রেল চলাচল শুরু করা যাবে, এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।’’
পাহাড় লাইনের অনিশ্চয়তার জন্য আটকে রয়েছে ত্রিপুরার ব্রডগেজ লাইন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা। আগরতলা থেকে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কয়েকটি রেলকে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সবই ঝুলে রয়েছে। কারণ পাহাড় লাইন ছাড়া ত্রিপুরার ট্রেনেরও বেরনোর রাস্তা নেই। জেনারেল ম্যানেজার জাগ্গি অবশ্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে জানিয়ে এসেছেন, সব ঠিকঠাক করে জুনেই ট্রেন চালানো হবে আগরতলা থেকে।