ভারতে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ২০২৩ সালে প্রতি এক হাজার শিশুর জন্মের সাপেক্ষে ছিল ২৫। রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার তরফে প্রকাশিত ওই বছরের স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসআরএস) রিপোর্টে এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। তার ভিত্তিতেই বলা হচ্ছে, ভারতে শিশুমৃত্যুর হার কখনও এত নীচে নামেনি। ২০১৩ সালে এই হার ছিল ৪০। অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ’২৩, দশ বছরে দেশে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৩৭.৫%। আর ১৯৭১ সালের নিরিখে হিসাব করলে ২০২৩ সালে এসে তা ৮০% কমেছে। কারণ, ১৯৭১-এ ভারতে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ১২৯।
কোনও নির্দিষ্ট বছরে প্রতি এক হাজার জীবন্ত শিশুর জন্মের সাপেক্ষে শিশুমৃত্যুর সংখ্যার এই হার (আইএমআর) দেশের জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ২০২৩-এর রিপোর্ট বলছে, ওই বছরে ভারতের গ্রামাঞ্চলে শিশুমৃত্যুর হার ৪৪ থেকে কমে ২৮ হয়েছে। অর্থাৎ ৩৬% কম। শহরাঞ্চলেও এই হার কমে ২৭ থেকে ১৮ হয়েছে, যা আদতে ৩৩% হ্রাস। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান মোতাবেক, ওই বছরে দেশে শিশুমৃত্যুর হারের নিরিখে শীর্ষে (৩৭) ছিল তিন রাজ্য— মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং উত্তরপ্রদেশ। আর সবার নীচে মণিপুর (৩)। ২১টি বড় রাজ্যের মধ্যে কেরল একমাত্র (৫), যেখানে ২০২৩-এ শিশুমৃত্যুর হার ছিল এক অঙ্কে। তার স্থান মণিপুরের ঠিক উপরে।
শুধু শিশুমৃত্যু নয়, সারা দেশে সার্বিক ভাবে জন্ম ও মৃত্যু হারও কমেছে বলে তুলে ধরেছে ওই রিপোর্ট। কোনও বছরে কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার সাপেক্ষে কত জনের জন্ম হচ্ছে বা কত জন মারা যাচ্ছেন, তার ভিত্তিতে কষা হয় এই হিসাব। জনসংখ্যা কী গতিতে বাড়ছে, এতে তার একটা দিশা যেমন মেলে, তেমনই জনবিন্যাসের বদল এবং জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল মৃত্যুহার। দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে প্রজনন হার (টিএফআর) এই প্রথম ২ থেকে কমে ১.৯ হয়েছে। প্রতিটি নারীর সারা জীবনে ক’টি সন্তান হচ্ছে, ভারতের গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে সেই গড় নেমে ২.১ হয়েছে বলে এই রিপোর্ট জানিয়েছে। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে জন্ম-মৃত্যুর হারের যে ভারসাম্য প্রয়োজন, গ্রামাঞ্চলের এই হার কার্যত তার কিনারায় দাঁড়িয়ে।
রিপোর্ট বলছে, গত পাঁচ দশকে সারা ভারতেই জন্মহার কমেছে। ১৯৭১ সালে ওই হার ছিল ৩৬.৯, ২০১৩ সালে ২১.৪, ২০২৩ সালে তা-ই হয়েছে ১৮.৪। ২০১৩ থেকে ’২৩-এ সার্বিক ভাবে জন্মহার ১৪% কমেছে। গ্রামাঞ্চলে তা ২২.৯ থেকে ২০.৩ (প্রায় ১১% কম) এবং শহরাঞ্চলে ১৭.৩ থেকে প্রায় ১৪% কমে হয়েছে ১৪.৯। তবে দেখা যাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলের জন্মহার শহরাঞ্চলের চেয়ে বেশি। ২০২৩-এ রাজ্যগুলির মধ্যে জন্মহারে শীর্ষে ছিল বিহার (২৫.৮), সবার নীচে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১০.১)।
রিপোর্ট বলছে, দেশে মৃত্যুহারও গত পাঁচ দশকে ক্রমশ কমেছে। ১৯৭১ সালে সার্বিক মৃত্যুহার ছিল ১৪.৯। তা কমে ২০২৩ সালে ৬.৪-এ এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু ২০২২ আর ’২৩-এর মধ্যে তুলনায় দেখা যাচ্ছে, গ্রামে মৃত্যুহার ৭.২ থেকে কমে ৬.৮ হয়েছে, শহরে ৬ থেকে কমে ৫.৭। মৃত্যুহার সবচেয়ে কম চণ্ডীগড়ে (৪), শীর্ষে ছত্তীসগঢ় (৮.৩)। সংবাদ সংস্থা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)