Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
rattanbai jinnah

ছিলেন ডাকসাইটে সুন্দরী, বাবার বন্ধু ২৪ বছরের বড় জিন্নাকে বিয়ে করে পরিবার ও সমাজচ্যুত হন রত্তনবাঈ

আশৈশব রত্তনবাঈ বড় হয়েছেন সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য আবহে। আচার-আচরণ, পোশাক, খাওয়াদাওয়া, ভাষা এবং সামাজিক রীতিনীতি— সব কিছুতেই পেতিত পরিবার অনুসরণ করত ব্রিটিশদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ১০:১৯
Share: Save:
০১ ৩২
বহু প্রাচীন কাঠের সিন্দুক। গভীর রাতে খোলা হত মনিবের হুকুমে। ভিতরে সযত্নে রক্ষিত মহিলাদের মূ্ল্যবান পোশাক। কোনও এক সময় সেগুলি ছিল তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের। দু’জনেই ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের স্মৃতিতে আর্দ্র হয়ে উঠত প্রবীণ মহম্মদ আলি জিন্নার চোখ। ঝাঁপি থেকে এই স্মৃতি জিন্নার জীবনীকারের কাছে উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর গাড়ির চালক।

বহু প্রাচীন কাঠের সিন্দুক। গভীর রাতে খোলা হত মনিবের হুকুমে। ভিতরে সযত্নে রক্ষিত মহিলাদের মূ্ল্যবান পোশাক। কোনও এক সময় সেগুলি ছিল তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের। দু’জনেই ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের স্মৃতিতে আর্দ্র হয়ে উঠত প্রবীণ মহম্মদ আলি জিন্নার চোখ। ঝাঁপি থেকে এই স্মৃতি জিন্নার জীবনীকারের কাছে উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর গাড়ির চালক।

০২ ৩২
জিন্নার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রত্তনবাঈয়ের মতো বর্ণময় ব্যক্তিত্ব ইতিহাসে বিরল। কিন্তু কালের স্রোতে তিনি রয়ে গিয়েছেন ইতিহাসে উপেক্ষিতা হয়েই। মাত্র ২৭ বছর জীবিত ছিলেন রত্তনবাঈ। কিন্তু তাঁর জীবনকে সংখ্যার বিচারে মাপা যাবে না। বরং, তাঁর বেঁচে থাকার মাপকাঠি লুকিয়ে ছিল জীবনকে আকণ্ঠ পান করার মধ্যে। অভিজাত এবং ধনকুবের পেতিত পরিবারে রত্তনবাঈয়ের জন্ম ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি। ব্রিটিশ ভারতের বম্বে প্রেসিডেন্সিতে।

জিন্নার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রত্তনবাঈয়ের মতো বর্ণময় ব্যক্তিত্ব ইতিহাসে বিরল। কিন্তু কালের স্রোতে তিনি রয়ে গিয়েছেন ইতিহাসে উপেক্ষিতা হয়েই। মাত্র ২৭ বছর জীবিত ছিলেন রত্তনবাঈ। কিন্তু তাঁর জীবনকে সংখ্যার বিচারে মাপা যাবে না। বরং, তাঁর বেঁচে থাকার মাপকাঠি লুকিয়ে ছিল জীবনকে আকণ্ঠ পান করার মধ্যে। অভিজাত এবং ধনকুবের পেতিত পরিবারে রত্তনবাঈয়ের জন্ম ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি। ব্রিটিশ ভারতের বম্বে প্রেসিডেন্সিতে।

০৩ ৩২
পার্সি সম্প্রদায়ের অন্যতম মুখ দীনশ’ মানেকজি পেতিত ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ধনকুবেরদের মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন পারিবারিক ‘ব্যারনেট’ উপাধি। সাবেক বম্বে ও গুজরাতে যে বস্ত্র বিপ্লব হয়েছিল, তার অন্যতম কারিগর ছিলেন মানেকজি পেতিত। একাধিক কাপড়ের কল ছিল তাঁর মালিকানাধীন।

পার্সি সম্প্রদায়ের অন্যতম মুখ দীনশ’ মানেকজি পেতিত ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ধনকুবেরদের মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন পারিবারিক ‘ব্যারনেট’ উপাধি। সাবেক বম্বে ও গুজরাতে যে বস্ত্র বিপ্লব হয়েছিল, তার অন্যতম কারিগর ছিলেন মানেকজি পেতিত। একাধিক কাপড়ের কল ছিল তাঁর মালিকানাধীন।

০৪ ৩২
ফার্স্ট ব্যারনেট মানেকজির পরে তাঁর ছেলে দীনশ’ পেতিত পেয়েছিলেন ‘সেকেন্ড ব্যারনেট’ উপাধি। দীনশ’ এবং তাঁর স্ত্রী দিনাবাঈয়ের একমাত্র মেয়ে ছিলেন রত্তনবাঈ। পেতিত পরিবারের আদরের রাজকন্যা ‘রুত্তি’। তাঁর ভাই ফলির-ও পরে পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় স্যর দীনশ’ মানেকজি পেতিত। তিনি বিয়ে করেছিলেন জেআরডি টাটা-র বোন সাইলা টাটা-কে।

ফার্স্ট ব্যারনেট মানেকজির পরে তাঁর ছেলে দীনশ’ পেতিত পেয়েছিলেন ‘সেকেন্ড ব্যারনেট’ উপাধি। দীনশ’ এবং তাঁর স্ত্রী দিনাবাঈয়ের একমাত্র মেয়ে ছিলেন রত্তনবাঈ। পেতিত পরিবারের আদরের রাজকন্যা ‘রুত্তি’। তাঁর ভাই ফলির-ও পরে পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় স্যর দীনশ’ মানেকজি পেতিত। তিনি বিয়ে করেছিলেন জেআরডি টাটা-র বোন সাইলা টাটা-কে।

০৫ ৩২
অসামান্য সুন্দরী রত্তনবাঈ ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই রাজকন্যা। তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন রত্তনবাঈ ছিলেন বাবা মায়ের সবথেকে আদরের সন্তান। উচ্চবিত্ত সম্ভ্রান্ত মহলে তাঁর পরিচয় ছিল ‘বম্বের কলি’ বা ‘ফ্লাওয়ার অব বম্বে’ হিসেবে। আশৈশব রত্তনবাঈ বড় হয়েছেন সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য আবহে। আচার-আচরণ, পোশাক, খাওয়াদাওয়া, ভাষা এবং সামাজিক রীতিনীতি— সব কিছুতেই পেতিত পরিবার অনুসরণ করত ব্রিটিশদের।

অসামান্য সুন্দরী রত্তনবাঈ ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই রাজকন্যা। তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন রত্তনবাঈ ছিলেন বাবা মায়ের সবথেকে আদরের সন্তান। উচ্চবিত্ত সম্ভ্রান্ত মহলে তাঁর পরিচয় ছিল ‘বম্বের কলি’ বা ‘ফ্লাওয়ার অব বম্বে’ হিসেবে। আশৈশব রত্তনবাঈ বড় হয়েছেন সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য আবহে। আচার-আচরণ, পোশাক, খাওয়াদাওয়া, ভাষা এবং সামাজিক রীতিনীতি— সব কিছুতেই পেতিত পরিবার অনুসরণ করত ব্রিটিশদের।

০৬ ৩২
রত্তনবাঈ এবং তাঁর ভাইদের জীবনযাপনের প্রতি ধাপে জড়িয়ে ছিল ঐশ্বর্য। ব্যয়ের যে কোনও লক্ষ্মণরেখা থাকতে পারে, জানতেন না রত্তনবাঈ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক বাড়ি অথবা ইউরোপের কোনও দেশ ছিল তাঁর ছুটি কাটানোর জায়গা।

রত্তনবাঈ এবং তাঁর ভাইদের জীবনযাপনের প্রতি ধাপে জড়িয়ে ছিল ঐশ্বর্য। ব্যয়ের যে কোনও লক্ষ্মণরেখা থাকতে পারে, জানতেন না রত্তনবাঈ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক বাড়ি অথবা ইউরোপের কোনও দেশ ছিল তাঁর ছুটি কাটানোর জায়গা।

০৭ ৩২
ব্যারনেট পেতিতদের মধ্যে বিলাসিতা বহমান ছিল কয়েক প্রজন্ম ধরেই। কিন্তু একটি বিষয়ে পরিবারের রীতি নীতি থেকে অন্যপথে হেঁটেছিলেন দীনশ’ পেতিত। তাঁর বাবা-মা ছিলেন গোঁড়া জরথ্রুস্টিয়ান। কিন্তু দীনশ’-র ধর্মীয় রীতিনীতিতে কোনও আস্থা ছিল না। বিশ্বাস ছিল না ঈশ্বরের অস্তিত্বে।

ব্যারনেট পেতিতদের মধ্যে বিলাসিতা বহমান ছিল কয়েক প্রজন্ম ধরেই। কিন্তু একটি বিষয়ে পরিবারের রীতি নীতি থেকে অন্যপথে হেঁটেছিলেন দীনশ’ পেতিত। তাঁর বাবা-মা ছিলেন গোঁড়া জরথ্রুস্টিয়ান। কিন্তু দীনশ’-র ধর্মীয় রীতিনীতিতে কোনও আস্থা ছিল না। বিশ্বাস ছিল না ঈশ্বরের অস্তিত্বে।

০৮ ৩২
বাবার থেকে এই ধারা পেয়েছিলেন রত্তনবাঈ এবং ফলি। তাঁরাও পার্সি সমাজের কোনও রীতিনীতি মানতেন না। বাবার সূত্রে আরও এক জনকে পেয়েছিলেন তাঁর আদরের মেয়ে, রুত্তি। পেয়েছিলেন বাবার বন্ধু মহম্মদ আলি জিন্নাকে। পরবর্তীতে তাঁকেই বিয়ে করে সমাজচ্যুত হন রত্তনবাঈ। চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যান পরিবার থেকেও।

বাবার থেকে এই ধারা পেয়েছিলেন রত্তনবাঈ এবং ফলি। তাঁরাও পার্সি সমাজের কোনও রীতিনীতি মানতেন না। বাবার সূত্রে আরও এক জনকে পেয়েছিলেন তাঁর আদরের মেয়ে, রুত্তি। পেয়েছিলেন বাবার বন্ধু মহম্মদ আলি জিন্নাকে। পরবর্তীতে তাঁকেই বিয়ে করে সমাজচ্যুত হন রত্তনবাঈ। চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যান পরিবার থেকেও।

০৯ ৩২
দীনশ’ পেতিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তাঁর থেকে বয়সে ৩ বছরের ছোট মহম্মদ আলি জিন্না। সাবেক বম্বের মালাবার হিলসের পাদদেশে পেতিত পরিবারের প্রাসাদ পেতিত হল-এ যাতায়াত ছিল জিন্নার। সেখানেই ৪০ বছর বয়সি জিন্নার সঙ্গে প্রথম আলাপ ষোড়শী রত্তনবাঈয়ের।

দীনশ’ পেতিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তাঁর থেকে বয়সে ৩ বছরের ছোট মহম্মদ আলি জিন্না। সাবেক বম্বের মালাবার হিলসের পাদদেশে পেতিত পরিবারের প্রাসাদ পেতিত হল-এ যাতায়াত ছিল জিন্নার। সেখানেই ৪০ বছর বয়সি জিন্নার সঙ্গে প্রথম আলাপ ষোড়শী রত্তনবাঈয়ের।

১০ ৩২
রাজনীতি এবং কূটনীতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে গভীর আগ্রহ খুব অল্প দিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ করে তোলে জিন্না ও রত্তনবাঈকে। পেতিত পরিবার ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তাদের রুত্তি কাকে মন দিয়ে বসেছে! তাঁদের ধারণা ছিল, পিতৃসম জিন্নার ব্যক্তিত্বের গুণমুগ্ধ রত্তনবাঈ। তাই দার্জিলিঙে দু’জনের একসঙ্গে দীর্ঘ সময়যাপনের মধ্যেও আপত্তিকর কিছু দেখেননি মুক্তমনা দীনশ’ এবং দিনাবাঈ পেতিত।

রাজনীতি এবং কূটনীতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে গভীর আগ্রহ খুব অল্প দিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ করে তোলে জিন্না ও রত্তনবাঈকে। পেতিত পরিবার ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তাদের রুত্তি কাকে মন দিয়ে বসেছে! তাঁদের ধারণা ছিল, পিতৃসম জিন্নার ব্যক্তিত্বের গুণমুগ্ধ রত্তনবাঈ। তাই দার্জিলিঙে দু’জনের একসঙ্গে দীর্ঘ সময়যাপনের মধ্যেও আপত্তিকর কিছু দেখেননি মুক্তমনা দীনশ’ এবং দিনাবাঈ পেতিত।

১১ ৩২
পেতিত পরিবারের আমন্ত্রণেই তাঁদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে দার্জিলিং পৌঁছেছিলেন জিন্না। শৈলশহরের নিসর্গে জিন্নার কাছে আত্মসমর্পণ করে রত্তনবাঈয়ের মন। পরে সুকৌশলে বন্ধু দীনশ’র কাছে তাঁর মেয়ের পাণিগ্রহণের প্রস্তাব দেন জিন্না। এক আলোচনায় প্রথমে তিনি দীনশ’-কে জিজ্ঞাসা করেন, ভিন ধর্মে বিয়ে নিয়ে তাঁর কী মত? পাশ্চাত্যশিক্ষায় বিশ্বাসী উদারমনস্ক ব্যারনেট দীনশ’ নির্দ্বিধায় জানান, তিনি ভিন ধর্মে বিয়ের মধ্যে আপত্তিজনক কিছু খুঁজে পান না।

পেতিত পরিবারের আমন্ত্রণেই তাঁদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে দার্জিলিং পৌঁছেছিলেন জিন্না। শৈলশহরের নিসর্গে জিন্নার কাছে আত্মসমর্পণ করে রত্তনবাঈয়ের মন। পরে সুকৌশলে বন্ধু দীনশ’র কাছে তাঁর মেয়ের পাণিগ্রহণের প্রস্তাব দেন জিন্না। এক আলোচনায় প্রথমে তিনি দীনশ’-কে জিজ্ঞাসা করেন, ভিন ধর্মে বিয়ে নিয়ে তাঁর কী মত? পাশ্চাত্যশিক্ষায় বিশ্বাসী উদারমনস্ক ব্যারনেট দীনশ’ নির্দ্বিধায় জানান, তিনি ভিন ধর্মে বিয়ের মধ্যে আপত্তিজনক কিছু খুঁজে পান না।

১২ ৩২
এর পর তিনি যা শোনেন, তাতে আকাশ থেকে পড়েন দীনশ’। ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিন্না এ বার দীনশ’কে বলেন, ভিন ধর্মে বিয়েতে তাঁর যখন কোনও আপত্তি নেই, তিনি তা হলে রত্তনবাঈকে বিয়ে করতে চান। জিন্নার প্রস্তাবে সম্মত হওয়া তো দূর অস্ত্, তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন দীনশ’।

এর পর তিনি যা শোনেন, তাতে আকাশ থেকে পড়েন দীনশ’। ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিন্না এ বার দীনশ’কে বলেন, ভিন ধর্মে বিয়েতে তাঁর যখন কোনও আপত্তি নেই, তিনি তা হলে রত্তনবাঈকে বিয়ে করতে চান। জিন্নার প্রস্তাবে সম্মত হওয়া তো দূর অস্ত্, তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন দীনশ’।

১৩ ৩২
ধর্মের প্রভেদ থেকেও তাঁকে বেশি পীড়িত করেছিল জিন্না এবং রত্তনবাঈয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য। ব্যারনেট কোনও দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তাঁর মেয়ে ২৪ বছরের বড় এক জনকে বিয়ে করতে চাইবে! তা ছাড়া সময়ের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকা পেতিত পরিবারে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া ছিল সে সময়েও লজ্জাজনক।

ধর্মের প্রভেদ থেকেও তাঁকে বেশি পীড়িত করেছিল জিন্না এবং রত্তনবাঈয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য। ব্যারনেট কোনও দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তাঁর মেয়ে ২৪ বছরের বড় এক জনকে বিয়ে করতে চাইবে! তা ছাড়া সময়ের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকা পেতিত পরিবারে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া ছিল সে সময়েও লজ্জাজনক।

১৪ ৩২
দীনশ’ পেতিতের নিজের বোন হুমাবাঈ সে সময় দেশে ফিরেছেন ফ্রান্স থেকে উচ্চশিক্ষা সেরে। তিনি তখন ২৯ বছর বয়সি এবং অবিবাহিতা। কিন্তু পেতিত পরিবার বা সম্ভ্রান্ত পার্সি সমাজে কোনও ভ্রূকুঞ্চনই হয়নি অনূঢ়া হুমাবাঈকে নিয়ে। সেখানে কি না ষোড়শী রত্তনবাঈ বিয়ে করতে চান ৪০ বছরের জিন্নাকে! পেতিত দম্পতি মরিয়া চেষ্টা করলেন মেয়েকে বোঝানোর। ঝড় ওঠার আগে থমথমে হয়ে গেল তৎকালীন পেতিত পরিবার।

দীনশ’ পেতিতের নিজের বোন হুমাবাঈ সে সময় দেশে ফিরেছেন ফ্রান্স থেকে উচ্চশিক্ষা সেরে। তিনি তখন ২৯ বছর বয়সি এবং অবিবাহিতা। কিন্তু পেতিত পরিবার বা সম্ভ্রান্ত পার্সি সমাজে কোনও ভ্রূকুঞ্চনই হয়নি অনূঢ়া হুমাবাঈকে নিয়ে। সেখানে কি না ষোড়শী রত্তনবাঈ বিয়ে করতে চান ৪০ বছরের জিন্নাকে! পেতিত দম্পতি মরিয়া চেষ্টা করলেন মেয়েকে বোঝানোর। ঝড় ওঠার আগে থমথমে হয়ে গেল তৎকালীন পেতিত পরিবার।

১৫ ৩২
গুমোট সেই পরিস্থিতি বজায় থাকল আরও দু’বছর। ঝড়টা উঠল সে কালের বম্বের তাজ মহল হোটেলে, রত্তনবাঈয়ের জন্মদিনের পার্টিতে। অতিথি অভ্যাগতদের সামনে পেতিত-রাজকন্যা জানালেন মহম্মদ আলি জিন্নার বিয়ের প্রস্তাবে তিনি রাজি হয়েছেন। সকলে যেন তাঁদের জুটিকে শুভেচ্ছা জানায়। বিলাসবহুল হোটেলের হলে তখন হিমশীতল নৈঃশব্দ্য।

গুমোট সেই পরিস্থিতি বজায় থাকল আরও দু’বছর। ঝড়টা উঠল সে কালের বম্বের তাজ মহল হোটেলে, রত্তনবাঈয়ের জন্মদিনের পার্টিতে। অতিথি অভ্যাগতদের সামনে পেতিত-রাজকন্যা জানালেন মহম্মদ আলি জিন্নার বিয়ের প্রস্তাবে তিনি রাজি হয়েছেন। সকলে যেন তাঁদের জুটিকে শুভেচ্ছা জানায়। বিলাসবহুল হোটেলের হলে তখন হিমশীতল নৈঃশব্দ্য।

১৬ ৩২
সেই নিস্তব্ধতা বজায় ছিল রত্তনবাঈয়ের জীবনের বাকি দিনগুলিতেও। ব্যারনেট পরিবার এবং পার্সি সমাজ তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। রক্ষণশীল পার্সি সমাজ এই বিয়ে মেনে নেয়নি। সমাজের চাপে পেতিত দম্পতিও সর্বসমক্ষে একমাত্র মেয়ের সঙ্গে সব সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিল। পরে পার্সি সমাজে ভিন ধর্মে বিয়ের ঘটনা আরও ঘটেছে। কিন্তু রত্তনবাঈয়ের সময়ে ভিন ধর্মে বিয়ে তাঁদের মধ্যে কার্যত ছিল নজিরবিহীন।

সেই নিস্তব্ধতা বজায় ছিল রত্তনবাঈয়ের জীবনের বাকি দিনগুলিতেও। ব্যারনেট পরিবার এবং পার্সি সমাজ তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। রক্ষণশীল পার্সি সমাজ এই বিয়ে মেনে নেয়নি। সমাজের চাপে পেতিত দম্পতিও সর্বসমক্ষে একমাত্র মেয়ের সঙ্গে সব সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিল। পরে পার্সি সমাজে ভিন ধর্মে বিয়ের ঘটনা আরও ঘটেছে। কিন্তু রত্তনবাঈয়ের সময়ে ভিন ধর্মে বিয়ে তাঁদের মধ্যে কার্যত ছিল নজিরবিহীন।

১৭ ৩২
সমাজ ও পরিবারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রত্তনবাঈ ইসলামে ধর্মান্তরিত হন তাঁর ১৮ বছর বয়স হওয়ার কিছু দিন পরেই। নতুন নাম হয় ‘মরিয়ম’। এর পর ৪২ বছর বয়সি মহম্মদ আলি জিন্নার সঙ্গে মুসলিম রীতি মেনে বিয়ে হয়ে যায় অষ্টাদশী রত্তনবাঈয়ের।

সমাজ ও পরিবারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রত্তনবাঈ ইসলামে ধর্মান্তরিত হন তাঁর ১৮ বছর বয়স হওয়ার কিছু দিন পরেই। নতুন নাম হয় ‘মরিয়ম’। এর পর ৪২ বছর বয়সি মহম্মদ আলি জিন্নার সঙ্গে মুসলিম রীতি মেনে বিয়ে হয়ে যায় অষ্টাদশী রত্তনবাঈয়ের।

১৮ ৩২
জিন্নার এটা দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল দূর সম্পর্কের আত্মীয়া এমিবাঈ-এর। পারিবারিক চাপে এই বিয়ে করতে বাধ্য হন জিন্না। বিয়ের কিছু দিন পরেই উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তার অল্প কয়েক দিন পরেই মৃত্যু হয় ১৪ বছরের কিশোরী এমিবাঈয়ের। প্রথম বিয়ের ২৭ বছর পরে জিন্না দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন।

জিন্নার এটা দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল দূর সম্পর্কের আত্মীয়া এমিবাঈ-এর। পারিবারিক চাপে এই বিয়ে করতে বাধ্য হন জিন্না। বিয়ের কিছু দিন পরেই উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তার অল্প কয়েক দিন পরেই মৃত্যু হয় ১৪ বছরের কিশোরী এমিবাঈয়ের। প্রথম বিয়ের ২৭ বছর পরে জিন্না দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন।

১৯ ৩২
নবদম্পতি জিন্না এবং রত্তনবাইয়ের সংসার শুরু হয়েছিল মালাবার হিলসের সাউথ কোর্ট ম্যানসনে। এই প্রাসাদের আর এক নাম জিন্না হাউস। পেতিত পরিবারের প্রাসাদ থেকে এর দূরত্ব ছিল ঢিলছোড়া। কিন্তু দু’টি প্রাসাদের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা দূর হয়নি।

নবদম্পতি জিন্না এবং রত্তনবাইয়ের সংসার শুরু হয়েছিল মালাবার হিলসের সাউথ কোর্ট ম্যানসনে। এই প্রাসাদের আর এক নাম জিন্না হাউস। পেতিত পরিবারের প্রাসাদ থেকে এর দূরত্ব ছিল ঢিলছোড়া। কিন্তু দু’টি প্রাসাদের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা দূর হয়নি।

২০ ৩২
বিয়ের প্রথম কয়েক মাস রত্তনবাঈয়ের কাছে ছিল রূপকথার মতো। পদবির আদ্যক্ষর অনুযায়ী স্বামী ছিলেন তাঁর কাছে ‘জে’। জিন্নার হেয়ারস্টাইল থেকে পোশাক— সব দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল তাঁর অষ্টাদশী স্ত্রীর। ফ্যাশনসচেতন স্ত্রীর প্রভাব পড়েছিল জিন্নার পোশাক এবং আচার আচরণেও। বছরের লম্বা ছুটিগুলো দু’জনের কাটত ইউরোপেই।

বিয়ের প্রথম কয়েক মাস রত্তনবাঈয়ের কাছে ছিল রূপকথার মতো। পদবির আদ্যক্ষর অনুযায়ী স্বামী ছিলেন তাঁর কাছে ‘জে’। জিন্নার হেয়ারস্টাইল থেকে পোশাক— সব দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল তাঁর অষ্টাদশী স্ত্রীর। ফ্যাশনসচেতন স্ত্রীর প্রভাব পড়েছিল জিন্নার পোশাক এবং আচার আচরণেও। বছরের লম্বা ছুটিগুলো দু’জনের কাটত ইউরোপেই।

২১ ৩২
স্ত্রীর অভিলাষ পূর্ণ করতে কার্পণ্য ছিল না জিন্নারও। বিয়ের পরেও রত্তনবাঈয়ের বিলাসবহুল জীবন পাল্টায়নি একবিন্দুও। পরিবর্তন হয়নি জীবনদর্শনেরও। জরথ্রুস্টবাদে অবিশ্বাসী রত্তনবাঈ অনুসরণ করতেন না ইসলামিক কোনও রীতিনীতিও। ব্যবহার করতেন না নতুন নাম ‘মরিয়ম’। রেশম বা শিফনের উজ্জ্বল শাড়ি, একঢাল চুলে তাজা ফুল, কপাল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা টিয়ারায় হিরে-চুনি-পান্না— তাঁর সাজপোশাকও ছিল ইসলামিক অনুশাসনের বিপরীত মেরুতে।

স্ত্রীর অভিলাষ পূর্ণ করতে কার্পণ্য ছিল না জিন্নারও। বিয়ের পরেও রত্তনবাঈয়ের বিলাসবহুল জীবন পাল্টায়নি একবিন্দুও। পরিবর্তন হয়নি জীবনদর্শনেরও। জরথ্রুস্টবাদে অবিশ্বাসী রত্তনবাঈ অনুসরণ করতেন না ইসলামিক কোনও রীতিনীতিও। ব্যবহার করতেন না নতুন নাম ‘মরিয়ম’। রেশম বা শিফনের উজ্জ্বল শাড়ি, একঢাল চুলে তাজা ফুল, কপাল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা টিয়ারায় হিরে-চুনি-পান্না— তাঁর সাজপোশাকও ছিল ইসলামিক অনুশাসনের বিপরীত মেরুতে।

২২ ৩২
জিন্নার চোখের মণি হয়ে থাকা পরতে পরতে উপভোগ করছিলেন রত্তনবাঈ। তবে জিন্না চেয়েছিলেন স্ত্রীর উচ্ছলতায় এ বার একটু লাগাম পরুক। এ বার একটু সংযত হোক রত্তনবাঈ। কিন্তু সে সবের কোনও লক্ষণই ছিল না তাঁর মধ্যে। মাঝবয়সি জিন্নার কিশোরী প্রেমিকা হয়ে থাকাতেই যেন তাঁর আনন্দ। এতটাই সেই উচ্ছ্বাসের মাত্রা, যে একমাত্র মেয়ের দিকেও তাকাতেন না তিনি। বিয়ের ১ বছরের মধ্যেই মা হয়েছিলেন রত্তনবাঈ। ১৯১৯-এর ১৫ অগস্ট লন্ডনে জন্ম দিয়েছিলেন একমাত্র কন্যাসন্তানের। কিন্তু মাতৃত্বও তাঁর মধ্যে কোনও পরিবর্তন আনতে পারেনি।

জিন্নার চোখের মণি হয়ে থাকা পরতে পরতে উপভোগ করছিলেন রত্তনবাঈ। তবে জিন্না চেয়েছিলেন স্ত্রীর উচ্ছলতায় এ বার একটু লাগাম পরুক। এ বার একটু সংযত হোক রত্তনবাঈ। কিন্তু সে সবের কোনও লক্ষণই ছিল না তাঁর মধ্যে। মাঝবয়সি জিন্নার কিশোরী প্রেমিকা হয়ে থাকাতেই যেন তাঁর আনন্দ। এতটাই সেই উচ্ছ্বাসের মাত্রা, যে একমাত্র মেয়ের দিকেও তাকাতেন না তিনি। বিয়ের ১ বছরের মধ্যেই মা হয়েছিলেন রত্তনবাঈ। ১৯১৯-এর ১৫ অগস্ট লন্ডনে জন্ম দিয়েছিলেন একমাত্র কন্যাসন্তানের। কিন্তু মাতৃত্বও তাঁর মধ্যে কোনও পরিবর্তন আনতে পারেনি।

২৩ ৩২
অভিযোগ, মেয়ের প্রতি উদাসীন ছিলেন জিন্নাও। ১৯২২ থেকে ক্রমশ আরও সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন জিন্না। দেশ জুড়ে উত্তাল পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হতে থাকে তাঁর নেতৃত্ব সত্ত্বা। স্বামীর মনোযোগ তাঁর উপর থেকে অন্য বিন্দুতে সরে যাচ্ছে, এ কথা মানতে পারতেন না রত্তনবাঈও। ফলে তিনিও ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিলেন। মাঝখান থেকে অবহেলিত হতে থাকে তাঁদের একমাত্র কন্যা। জন্মের পর দীর্ঘদিন তাঁর কোনও নামকরণও হয়নি।

অভিযোগ, মেয়ের প্রতি উদাসীন ছিলেন জিন্নাও। ১৯২২ থেকে ক্রমশ আরও সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন জিন্না। দেশ জুড়ে উত্তাল পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হতে থাকে তাঁর নেতৃত্ব সত্ত্বা। স্বামীর মনোযোগ তাঁর উপর থেকে অন্য বিন্দুতে সরে যাচ্ছে, এ কথা মানতে পারতেন না রত্তনবাঈও। ফলে তিনিও ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিলেন। মাঝখান থেকে অবহেলিত হতে থাকে তাঁদের একমাত্র কন্যা। জন্মের পর দীর্ঘদিন তাঁর কোনও নামকরণও হয়নি।

২৪ ৩২
মেয়ের জন্মের পরে জিন্না-রত্তনবাঈ সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়। ৮ বছরের মেয়েকে জিন্না হাউসে রেখে ১৯২৮ সালে রত্তনবাঈ চলে যান সেই তাজ মহল হোটেলে, যেখানে সে দিন থেকে ১০ বছর আগে তিনি বিয়ের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাজ হোটেলের একটি স্যুইট ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন জিন্নার অসুস্থ স্ত্রী। সে সময় কিছুটা হলেও সম্পর্ক সহজ হয়েছিল তাঁর মায়ের সঙ্গে। শরীর এবং মন ভাল করতে মায়ের সঙ্গে প্যারিসে ঘুরতে যান রত্তনবাঈ। কিন্তু সেখানে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

মেয়ের জন্মের পরে জিন্না-রত্তনবাঈ সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়। ৮ বছরের মেয়েকে জিন্না হাউসে রেখে ১৯২৮ সালে রত্তনবাঈ চলে যান সেই তাজ মহল হোটেলে, যেখানে সে দিন থেকে ১০ বছর আগে তিনি বিয়ের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাজ হোটেলের একটি স্যুইট ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন জিন্নার অসুস্থ স্ত্রী। সে সময় কিছুটা হলেও সম্পর্ক সহজ হয়েছিল তাঁর মায়ের সঙ্গে। শরীর এবং মন ভাল করতে মায়ের সঙ্গে প্যারিসে ঘুরতে যান রত্তনবাঈ। কিন্তু সেখানে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

২৫ ৩২
দেশে ফেরার ২ মাস পরে, ১৯২৯-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি, নিজের ২৯তম জন্মদিনের ঠিক পরের দিন তাজের স্যুইটে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান রত্তনবাঈ। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন তিনি। রত্তনবাঈয়ের মৃত্যুর সময়ে জিন্না ছিলেন দিল্লিতে। শ্বশুরমশাই তথা কোনও এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীনশ’ পেতিতের ফোনে জানতে পারেন রুত্তির চলে যাওয়ার খবর।

দেশে ফেরার ২ মাস পরে, ১৯২৯-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি, নিজের ২৯তম জন্মদিনের ঠিক পরের দিন তাজের স্যুইটে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান রত্তনবাঈ। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন তিনি। রত্তনবাঈয়ের মৃত্যুর সময়ে জিন্না ছিলেন দিল্লিতে। শ্বশুরমশাই তথা কোনও এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীনশ’ পেতিতের ফোনে জানতে পারেন রুত্তির চলে যাওয়ার খবর।

২৬ ৩২
রত্তনবাঈয়ের মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে স্পষ্ট করে কিছুই জানা যায় না। ক্যানসার থেকে কোলাইটিস— মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল অনেক কিছুই। তবে তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পরে ছয়ের দশকে রত্তনবাঈয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কাঞ্জি দ্বারকাদাস দাবি করেন, নিয়মিত ঘুমের ওষুধ বেশি মাত্রায় খেয়ে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে ফেলেছিলেন রত্তনবাঈ।

রত্তনবাঈয়ের মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে স্পষ্ট করে কিছুই জানা যায় না। ক্যানসার থেকে কোলাইটিস— মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল অনেক কিছুই। তবে তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পরে ছয়ের দশকে রত্তনবাঈয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কাঞ্জি দ্বারকাদাস দাবি করেন, নিয়মিত ঘুমের ওষুধ বেশি মাত্রায় খেয়ে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে ফেলেছিলেন রত্তনবাঈ।

২৭ ৩২
জিন্না-রত্তনবাঈয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরার পর দিনা পেতিত কিছুটা হলেও কাছে এসেছিলেন নাতনির। পরে দিদার নামকেই নিজের পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করেন মহম্মদ আলি জিন্নার একমাত্র কন্যা, দিনা জিন্না। পিসি ফতিমার কাছে তিনি বড় হয়েছিলেন। অবশ্য ফতিমা নিজে আদৌ খুশি ছিলেন না জিন্না-রত্তনবাঈ বিয়েতে। অন্য দিকে ফতিমাকেও বিশেষ পছন্দ করতেন না রত্তনবাঈ।

জিন্না-রত্তনবাঈয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরার পর দিনা পেতিত কিছুটা হলেও কাছে এসেছিলেন নাতনির। পরে দিদার নামকেই নিজের পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করেন মহম্মদ আলি জিন্নার একমাত্র কন্যা, দিনা জিন্না। পিসি ফতিমার কাছে তিনি বড় হয়েছিলেন। অবশ্য ফতিমা নিজে আদৌ খুশি ছিলেন না জিন্না-রত্তনবাঈ বিয়েতে। অন্য দিকে ফতিমাকেও বিশেষ পছন্দ করতেন না রত্তনবাঈ।

২৮ ৩২
মায়ের মতোই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেছিলেন দিনাও। ১৯৩৮ সালে তিনি বিয়ে করেন পার্সি তরুণ নেভিল ওয়াদিয়াকে। ভারতের প্রাচীন পার্সি পরিবারগুলির মধ্যে ওয়াদিয়ারা অন্যতম। ট্রিনিটি কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষিত নেভিল ছিলেন পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী। নেভিল এক বার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার পর আবার ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন জরথ্রুস্টবাদেই।

মায়ের মতোই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেছিলেন দিনাও। ১৯৩৮ সালে তিনি বিয়ে করেন পার্সি তরুণ নেভিল ওয়াদিয়াকে। ভারতের প্রাচীন পার্সি পরিবারগুলির মধ্যে ওয়াদিয়ারা অন্যতম। ট্রিনিটি কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষিত নেভিল ছিলেন পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী। নেভিল এক বার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার পর আবার ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন জরথ্রুস্টবাদেই।

২৯ ৩২
নিজে ভিন ধর্মে বিয়ে করলেও মেয়ের ভিন ধর্মে বিয়ে করা নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল মহম্মদ আলি জিন্নার। রত্তনবাইয়ের সঙ্গে আরও একটি দিকে মিল রয়েছে তাঁর কন্যার। তাঁরও বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ছেলে নুসলি এবং মেয়ে ডায়ানার জন্মের পরে ১৯৪৩ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় নেভিল এবং দিনার।

নিজে ভিন ধর্মে বিয়ে করলেও মেয়ের ভিন ধর্মে বিয়ে করা নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল মহম্মদ আলি জিন্নার। রত্তনবাইয়ের সঙ্গে আরও একটি দিকে মিল রয়েছে তাঁর কন্যার। তাঁরও বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ছেলে নুসলি এবং মেয়ে ডায়ানার জন্মের পরে ১৯৪৩ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় নেভিল এবং দিনার।

৩০ ৩২
প্রসঙ্গত নেভিল এবং দিনার একমাত্র ছেলে নুসলির ছেলেই হলেন শিল্পপতি নেস ওয়াদিয়া। তাঁর সঙ্গে প্রীতি জিন্টার প্রেম এক সময় ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। অর্থাৎ নেস হলেন মহম্মদ আলি জিন্নার একমাত্র মেয়ে দিনার নাতি। সম্প্রতি বছর তিনেক আগে, ২০১৭ সালে ৯৮ বছর বয়সে দিনা মারা গিয়েছেন নিউইয়র্কে। তাঁর প্রাক্তন স্বামী নেভিল প্রয়াত হয়েছেন বেশ কিছু বছর আগে, ১৯৯৬ সালে, মুম্বইয়ে।

প্রসঙ্গত নেভিল এবং দিনার একমাত্র ছেলে নুসলির ছেলেই হলেন শিল্পপতি নেস ওয়াদিয়া। তাঁর সঙ্গে প্রীতি জিন্টার প্রেম এক সময় ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। অর্থাৎ নেস হলেন মহম্মদ আলি জিন্নার একমাত্র মেয়ে দিনার নাতি। সম্প্রতি বছর তিনেক আগে, ২০১৭ সালে ৯৮ বছর বয়সে দিনা মারা গিয়েছেন নিউইয়র্কে। তাঁর প্রাক্তন স্বামী নেভিল প্রয়াত হয়েছেন বেশ কিছু বছর আগে, ১৯৯৬ সালে, মুম্বইয়ে।

৩১ ৩২
দিনার মৃত্যুর পরে তাঁর ডায়রির পাতা থেকে জানা গিয়েছে, বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ দিকে সহজ হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। দু’জনের শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, আজকের মুম্বই, তখনকার বম্বে শহরে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগে পরে জিন্নাও বরাবরের জন্য বম্বে ছেড়ে চলে যান পাকিস্তানে।

দিনার মৃত্যুর পরে তাঁর ডায়রির পাতা থেকে জানা গিয়েছে, বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ দিকে সহজ হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। দু’জনের শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, আজকের মুম্বই, তখনকার বম্বে শহরে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগে পরে জিন্নাও বরাবরের জন্য বম্বে ছেড়ে চলে যান পাকিস্তানে।

৩২ ৩২
দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পরে জিন্না বলেছিলেন, শিশুসুলভ রত্তনবাঈকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। কিন্তু পোড়খাওয়া এই রাজনীতিকের ঘনিষ্ঠবৃত্ত বার বার বলেছে, স্ত্রীকে ভুলতে পারেননি তিনি। স্ত্রী এবং কন্যার বিচ্ছেদ তাঁকে পীড়িত করত। যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগে অবধি, প্রতিটা মুহূর্তে।
( ঋণস্বীকার: মিস্টার অ্যান্ড মিসেস জিন্না: শীলা রেড্ডি )
( ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পরে জিন্না বলেছিলেন, শিশুসুলভ রত্তনবাঈকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। কিন্তু পোড়খাওয়া এই রাজনীতিকের ঘনিষ্ঠবৃত্ত বার বার বলেছে, স্ত্রীকে ভুলতে পারেননি তিনি। স্ত্রী এবং কন্যার বিচ্ছেদ তাঁকে পীড়িত করত। যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগে অবধি, প্রতিটা মুহূর্তে। ( ঋণস্বীকার: মিস্টার অ্যান্ড মিসেস জিন্না: শীলা রেড্ডি ) ( ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE